Ads

কালকের জন্য অপেক্ষা করবেন না

তারিক হক

জার্মানি থেকে আমার ছোট বোনকে ঢাকায় ফোন করলাম। বোন বলল, তার কোমরে ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা, ব্লাড প্রেশার। আমি সাথে সাথে বললাম ভালো ডাক্তার দেখাতে। একটু চিন্তিতও হলাম। আমার বোন বয়সে আমার অনেক ছোট, এই বয়সে কেন এ রকম অবস্থা।

পরের দিন ফোন করে জানলাম ডাক্তার কী বলেছেন।

বোন বলল: – ডাক্তার বলেছেন, আগে আপনার ওজন কমান, পরে আমার কাছে আসবেন। প্রতিদিন আধঘণ্টা হাঁটবেন।

আমি বোনকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার প্ল্যান কী?

ঢাকা তো আপনাদের মতো জার্মানি নয়। এখানে ১৬ মিলিয়ন মানুষ থাকে। পৃথিবীর বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর দামাস্কাস, ঢাকা তার সাথে পাল্লা দিচ্ছে। অক্সিজেন আমাদের ভাগ করে নিতে হয়। কোথায় হাঁটব?

আমি বললাম: -ছাদে গিয়ে হাঁটো, তোমার তো বেশ বড় ছাদ।

ঠিক আছে, দাদাভাই, আমি সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু করব।

এই যে সামনের সপ্তাহ থেকে শুরু করব, এর নাম ইংরেজিতে “Procrastination” অর্থাৎ দীর্ঘসূত্রতা। আজকে না কালকে, কালকে না পরশু, পরশু না তরশু।

আমি বোনকে বললাম : সামনের সপ্তাহে নয়, এখনই। ফোনটি তুমি রাখো, এখনই শুরু করো। এক জার্মান লেখক ক্রিশ্চিয়ান অগাস্ত ভালপিয়াস (১৭৬২-১৮২৭) বলেছেন, ‘আস্তে চলছ এতে ভয়ের কিছু নেই। ভয় করবে তখনই, যখন তুমি দাঁড়িয়ে যাবে।’

জার্মান ভাষায়, “Fuerchte Dich nicht, langsam zu gehen, fuerchte Dich nur stehen zu bleiben “. যে কাজটি এখনই আপনার করা উচিত, সেটা কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না।

আমি একজন জার্মান মিলিয়নেয়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সাফল্যের রহস্যটি কী?

উনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি যে সবার চেয়ে মেধাবী বা আমার বড় বড় ডিপ্লোমা আছে তা নয়, কিন্তু আমার মনে সব সময়ই প্রতিজ্ঞা ছিল, আমি অন্যের চেয়ে বেশি কাজ করব, এখনকার কাজ এখনই করব’ । পাঠক, এবার আমি আপনাদের কয়েকটি পদ্ধতি বলব। সেগুলো যদি অনুসরণ করেন, দেখবেন এখনকার কাজ এখনই করছেন।

১. আপনার কঠিন কাজটি ভাগ করে ফেলুন অনেকগুলো ছোট ছোট কাজে। যেমন কয়েক দিন ধরেই চিন্তা করছেন আপনার বাসাটি গোছাবেন। প্রতিদিন বলেন, আজকে করব, আজকে আর করা হয় না, কালকের দিকে ঠেলে দেন। পুরো বাসাটি এক দিনে না গুছিয়ে ঠিক করুন আজকে শুধু ড্রইংরুমটি, কালকে বেডরুম, পরশু বাথরুম, পরের দিন রান্নাঘর। দেখবেন এত খারাপ লাগছে না। মনে করুন, দশ মিনিট করবেন। দেখবেন আপনার মন রাজি হয়েছে।

২. সকালে যখন ঘুম থেকে উঠবেন, ছোট্ট একটি তালিকা করবেন, কোন কাজগুলো আজকে করতে হবে। আরও ভালো হয় যদি আগের রাতে তালিকাটি বানান। এবার যে কাজটি করতে সবচেয়ে বেশি ভয় পান, সেটা দিয়ে শুরু করুন।

৩. যে জিনিসটি আপনি মন থেকে করতে চাইছেন না, অন্যকে তা কখনও অঙ্গীকার করবেন না। এতে শুধু অস্বস্তি বাড়বে।

৪. আপনি যদি প্রতিদিন ব্যায়াম করতে চান, কোনো একটি সময় নির্দিষ্ট করুন। যেমন প্রতিদিন বিকেল ৫টার সময়। যখন সময় পাব, তখন ব্যায়াম করব এই মনোভাব ত্যাগ করুন। তাহলে কোনো দিনই কিছু করতে পারবেন না। অন্তত একুশ দিন আপনি ৫টার সময় ব্যায়াম করুন। এরপর আপনি অবাক হয়ে যাবেন। যে মুহূর্তে ৫টা বাজবে, আপনার অবচেতন মন আপনাকে বলবে, ব্যায়াম করো, ব্যায়াম করো। আমি নিজে এটা প্রয়োগ করেছি আমার জীবনে, অদ্ভুত ফল পেয়েছি। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে, একই সময়ে ঘুম থেকে উঠতে আর একই সময়ে খেতে। দেখবেন আপনার শরীর ও মন একসাথে কাজ করছে।

৫. একেবারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করবেন না। যে কোনো কাজে আপনাকে যে শতভাগই নিখুঁত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি যদি লেখক হতে চান, প্রতিদিন কিছু একটা লিখুন। সেটা যে সাথে সাথেই রবি ঠাকুর বা হুমায়ূন আহমেদের মতো হবে এ ধরনের চিন্তাও করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি কিছু করছেন।

৬. নিজেকে পুরস্কৃত করুন। পাঁচ দিনের কাজ আপনি চার দিনে করেছেন। রেস্টুরেন্টে গিয়ে পিজা খেয়ে আসুন। সবচেয়ে বড় কথা, কাজের সময়ে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট আর ফেসবুক বন্ধ করে রাখবেন। পঁচিশ মিনিট একটানা কাজ করুন, পাঁচ মিনিট বিরতি দিন, এবার আবারও পঁচিশ মিনিট কাজ করুন। দেখবেন অনেক কাজ আপনি করে ফেলেছেন। কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠবেন, বলবেন, আজকে সেই কাজগুলো করব, যেগুলো সারা জীবন করতে চেয়েছিলাম। বিধাতা একটু হাসলেন, আপনার আর সময় রইল না। তখন কী করবেন? সুতরাং do it now, do it now. এই গল্প শেষ করছি একটি জোক দিয়ে।I কাজটি এখন না করে পরে করবেন —–এই মনোভাবকে ইংরেজিতে বলে “PROCRASTINATION” . ছেলে বাবাকে প্রশ্ন করলো “বাবা , এর মানে কী ? বাবা : – আমি তোমাকে পরে বলব ।

আরও পড়ুন