Ads

মুসাফির বেশে মুসা নবীর দেশে ।। ৩য় পর্ব

।। জিয়াউল হক ।।

গিয়েছিলাম কায়রো উপকন্ঠে, আল আজহারের সন্নিকটেই অবস্থিত ইমাম শাফি রহ: (মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস আল-শাফিঈ) এর মাজার ও মসজিদে। আসরের নামাজ শেষ হলো মাত্র। সালাম ফেরানোর পরেই ইমাম সাহেব সুউচ্চ কন্ঠে আয়াতুল কুরসী পুরোটাই তেলোওয়াত করলেন। এর পরে মুসল্লীরা এক এক করে উঠলেন।

জামাতে বেশ কিছু ছোটো ছোটো বাচ্চা ছেলে মেয়ে ছিল। তারাও নামাজে শরিক হয়েছে। লক্ষ্য করে দেখলাম নামাজ শেষ হতেই এই সব বাচ্চারা একে অপরের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটে বিরাট মসজিদের পেছনের দিকে এক কোণে গিয়ে বসলো। চেয়ার টেনে গোল হয়ে বৃত্তাকারে বসে পড়লো। প্রত্যেকের হাতে একটি করে কুরআনের কপি। অপরদিকে মিম্বরের কাছেই কয়েকজন প্রৌড় বসে পড়লেন একইভাবে গোল হয়ে। কেউবা মিম্বরের সাথেই হেলান দিয়ে বসলেন। কারো হাতে কুরআন কারো বা রানের উপরে আবার কারো সামনে উঁচু রেহেলের উপরে কুরআন।

আরও পড়ুন-

মুসাফির বেশে মুসা নবীর দেশে ।। ১ম পর্ব

আমি তাদের তৎপরতা ও ব্যগ্রতা লক্ষ করছি নীরবে। এর পরে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল কুরআনের অনুশীলন, তেলোওয়াত, ও মর্ম উদ্ধারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কুরআনের আসর!।

আজহারি ইমাম প্রৌড়দের গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। অনুমতি নিয়ে ছবি তুললাম। ছবি তোলা হলে পেছন ফিরতেই দেখি মসজিদের পেছনে একেবারে কোণার দিকে কয়েকজন নারী একইভাবে গোল হয়ে বৃত্তাকারে বসেছেন। প্রত্যেকের হাতে বা সামনে কুরআনের কপি। বেশিরভাগই মাঝবয়সী, তবে কয়েকজন প্রৌড়াও রয়েছেন।

তাদের দিকে না গিয়ে বিপরিত দিকে জানালার ধারে একইভাবে গোল হয়ে বসা বাচ্চাদের মাহফিলে গিয়ে দাঁড়ালে সেখানে মধ্যবয়স্ক যে ব্যক্তি তাদের কুরআন পড়া শুনছিলেন ও সংশোধন করে দিচ্ছিলেন, তিনি বসতে বললেন। কিশোর এক ছেলে দৌড়ে গিয়ে একটা চেয়ার এনে দিলে ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়লাম।

ছোটো ছোটো বাচ্চারা কি নিখূঁত দক্ষতায়, সুরেলা কন্ঠে কুরআন তেলোওয়াত করে শোনাচ্ছেন। ওস্তাদ চোখ বন্ধ করে তা শুনছেন। সামান্যতম ভুল হলেই তা শুধরে দিচ্ছেন। বারবার রপ্ত করাচ্ছেন, যতোক্ষণ না তা শুদ্ধতার চরমতম স্তরে না পৌছাচ্ছে!

আরও পড়ুন-

মুসাফির বেশে মুসা নবীর দেশে ।। ২য় পর্ব

কী আন্তরিক নিষ্ঠা, কী পরম মমতা ওদের কন্ঠে। এইসব বাচ্চাদের তো এখন সামনে খোলা মাঠে কোরাতুল কদম বা ফুটবলা খেলার কথা, হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠার কথা। তা না করে তারা কী না কুরআন রপ্ত করতে বসে পড়েছে। পুরো মসজিদ ভরেই যেন কুরআনের সুর মূর্ছনা আর ঝংকারে গমগম করছে।

আমার চোখের সামনে বাংলাদেশের আনাকে কানাচে আসর পরবর্তি সময়কালের চিত্র ভেসে উঠছে যেন। আমি দেখতে পাচ্ছি বুড়োরা নামাজ শেষ হতে না হতেই ছুটছেন চায়ের দোকানে, বাচ্চাদের কেউ যদি মসজিদে এসেও থাকে, তবে নামাজ শেষ হতে না হতেই তারা ছুটছে ফুটবল মাঠে বন্ধুদের সাথে খেলায় যোগ দিতে।

আর নারীর দল? না, বাংলাদেশের মসজিদে তাদের কোনো ঠাঁই নেই, অধিকার নেই আল্লাহর ঘরে বসে নামাজ আদায়ের! আর আমাদের এ নিয়ে অবশ্য কোনো মাথা ব্যাথাও নেই। সময়ও নেই।

পরের পর্ব-

মুসাফির বেশে মুসা নবীর দেশে ।। ৪র্থ পর্ব

চলবে…

লেখকঃ ইংল‍্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল‍্যান্ড

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে  লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ  লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জিয়াউল হক 

 

আরও পড়ুন