।। জিয়াউল হক ।।
উহিব্বুক ইয়া মাছর ! :
দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যের শেখ শাসিত একটি দেশে চাকুরির সুবাদে ছিলাম। মোটামুটি ভালোই ছিল সে চাকুরি। সরকারি চাকুরির সুবাদে সমকালীন বাজার হিসেবে আকর্ষণীয় বেতন, ফ্রি যাতায়াত, বিনামূল্যে আবাসন, গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পেয়েছি যথারীতি।
কাজেই তাদের ব্যবস্থাপনা কিংবা আমার সাথে চুক্তিকৃত চাকুরির শর্ত পূরণে তাদের কোনোরকম গাফিলতি ছিল কিংবা আমাকে আমার প্রাপ্য অধিকার দেয়া হয়নি বা দেয়নি, সে রকম কোনো অভিযোগ করার ন্যুনতম কোনো সুযোগ আমার নেই। অভিযোগও নেই।
তবে আধুনিক আরব বিশ্বে, বিশেষ করে পেট্রোডলারের আরব বিশ্বের সামাজিক মনস্তত্ব, তথা, গণমনস্তত্ত নিয়ে আমার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। খুব কদাচিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ আরবই বর্ণবাদী। কেউ কেউ তো আবার চরম বর্ণবাদী; রেসিস্ট। তাদের এই রেসিজম গায়ের রং-এ হলেও সম্ভবত সবচেয়ে বেশি হলো জাতীয়তাভিত্তিক।
আরও পড়ুন ( আগের পর্ব )
এশিয়ান দেশ সমূহ, বিশেষ করে, পাকভারতীয় উপমহাদেশীয় মানুষের সাথে সাধারণ আরবদের আচরণ একপ্রকার। আবার ঐ সাধারণ জনগণেরই আচরণ ভিন্নধরনের যখন তারা ইউরোপীয় সাদা চামড়ার কাউকে তাদের সামনে পায়। আম্রিকি (আমেরিকান) কিংবা ব্রিতানি (ব্রিটেন) বা ইরোপ্পা/ইউরোপ্পা (ইউরোপীয়) সাদা চামড়ার লোকজন পেলে তাদের কথা-বার্তা আচরণ ও মুখাবয়ব পাল্টে যায়।
নারী হলে তো কোনো কথাই নেই, প্রয়োজন না থাকলেও কিংবা না চাইলেও উক্ত নারীকে সাহায্য করার জন্য আরব পুরুষদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যায় যেন!
কেবলই কী ইউরোপীয়ান সাদা চামড়া? তা নয়। আমাদের বাড়ির পাশের তামাটে গায়ের রং নিয়ে আগত ফিলিপিনো কিংবা চীনা নারীরা মিডলইস্টের আবহওয়া ও পুষ্ঠিতে কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় ইউরোপীয় কিংবা ককেশীয় স্টাইলের লালচে সাদা চামড়ার রং ধারন করে।
তখন তাদের সাথে সখ্যতা গড়তে অধিকাংশ আরব পুরুষ, বিশেষ করে, তরুণ যুবকদের ব্যগ্রতা উৎকটভাবেই দৃশ্যমান। সেটা কেবল বেলেল্লাপনাই নয়, উগ্র রেসিজম বা কট্টর বর্ণবাদও বটে।
আর এর পাশাপাশি উপমহাদেশীয় পুরুষ, তা তিনি যতোই ভালো, সম্মানজনক চাকুরে হন না কেন, আরবদের চোখে মিসকিন! বর্ণবাদের আর এক ধরনের লজ্জাজনক বহি:প্রকাশই বটে।
সে তুলনায় মিশরীয়দের আচরণ অত্যন্ত সম্মানজনক। মিশরীয়দের মধ্যে বর্ণবাদীতার এই রসম আমার চোখে পড়েনি। অতিতে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়কাল ধরে মিশরীয়দের সাথে নিত্য উঠাবসা করেছি।
আরও পড়ুন-
আমার সাথে একই ফ্লাটে পাশের রুমে এক মিশরীয় বন্ধু থাকতেন, আশরাফ মাগরেবি। চমৎকার মানুষ। খালেদ ইব্রাহিম খালেদ ছিলেন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আচরণের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব কিংবা কৃত্রিমতা চোখে পড়েনি। কোনোদিনই তেমন কিছু বুঝতে পারিনি।
মিশরীয় খ্রিষ্টান জামাল আবু রিজক ছিলেন প্রতিদিনকারই চলার সাথী। তার আচরণও ছিল নিখাঁদ ভদ্রোচিত। আজও তাদের কথা মনে পড়ে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথেই তাদের স্মরণ করি।
আজ সরেজমিনে আমি মিশরের মাটিতে। কায়রোর গিজ্জা, সুরুকিয়া, কাহিরা আল ক্বাদিম, পেছনেই অনতিদূরে নাজিলাতুস সিম্মান কিংবা উল্টো দিকে শ্বারে’ মুহাম্মদ আস সগির, আল আজহার ইউনিভার্সিটির আশে পাশের এলাকা, কায়রো শহরের জিরো পয়েন্টে আত্তাবা কিংবা কায়রোর উপকন্ঠের ছোট মরু শহর ওয়াদি আন নাতরুন, অথবা কায়রো হতে আড়াইশত কিলোমিটার দুরত্বের আলেকজান্দ্রিয়া, প্রায় দেড়শত কিলোমিটারের দুরত্বে তানত্বা শহর চষে বেড়াচ্ছি।
শহুরে কিংবা গ্রাম্য, নারী পুরুষ কিংবা শিশু, তরুণ বা যুবক সর্বস্তরের মানুষের সাথে মিশছি, কারও ভেতরে কোনোরকম বৈরিতা, আন্তরিকতার অভাব বা বর্ণবাদের ছিটে ফোটাও চোখে পড়েনি। বরং আশাতীত আন্তরিকতাই দেখেছি।
সম্ভবত বর্ণবাদের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব এদের মধ্যে নেই। অথবা থাকলেও তা সংখ্যায় এতোটাই নগণ্য যে, সচরাচর তা চোখে পড়ে না। মিশরের প্রতি, এর রাজনীতি আর রাজনীতিবীদদের প্রতি চাপা ক্ষোভ রয়েছে তা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই, কিন্তু এই দেশ, এই মাটির প্রতি টান, আন্তরিকতা আর ভালোবাসা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
উহিব্বুক ইয়া মাছর ! উহিব্বুক জিদ্দান। তোমাকে ভালবোসি হে মিশর, অনেক, অনেক ভালোবাসি!
আরও পড়ুন-
লেখকঃ ইংল্যান্ডের বেসরকারী মানসিক হাসপাতালের সাবেক সহকারী পরিচালক ও লেখক, ইংল্যান্ড
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।
ফেসবুকে লেখক জিয়াউল হক