শামীম রায়হান
গতকাল বন্ধু সৌমেন ফোন করে বলল, বাসা ভাড়ার জন্য ঘুরছে কয়েক দিন। ছোটপুল এলাকায় বাসা দেখেছে, ছোট পরিবার তাই দশ বা বার হাজার এর মধ্যে হয়ে যাবে।অনেক দিন বন্দর এলাকায় থাকা তাই অভ্যাসবশত বাইরের পরিবেশ যুতসই হচ্ছে না।
আজকে হঠাৎ সৌমেন ফোন করে বলল, যে, ঐ বাসার মালিক জানিয়েছে সনাতনী পরিবার ভাড়া দেবে না! আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, কি বলিস! না কি ভাড়া হয়ে গেছে তাই বলছে? সৌমেন হেসে বলল ফান না, আমার জন্য বাসা দেখ। আমি বললাম, আচ্ছা দেখছি।
চট্টগ্রাম শহরে আজ আব্দি এমন ঘটনা দেখিনি বা শুনিনি!
ছোট বেলায়, আমাদের বাসার সামনের টিউবওয়েল এর জল নিতে আসত আমার ক্লাসমেট, প্রাইমারী থেকে আমরা একি ক্লাসে ছিলাম। মেয়েটি মাঝে মাঝে ঘটিতে পানি নিত। ঘটিতে জল নিলে আমি ঘটি ছুয়ে দিতাম, সে রাগ করে কিছু না বলে জল ফেলে আবার জল নিত। কয়েক বার এমন করলে, হেসে বলত, দেখ আর ফান করিস না! এটা পূজোর জল!
আমার বন্ধুতালিকা অনেক বড়, ছোট বেলায় একবার এক আত্মিয় বলল, সনাতনী দের সাথে কম মিশবে! আমি অবাক হয়ে বললাম, কেন? উনি বললেন, উচিৎ নয়! একটু রেগে বলেছিলাম বানানো কথা আর বলবেন না।
আমার গত দুই বছর ইন্ডিয়া যেতে হয় বাবা, মায়ের চিকিৎসার জন্য। লম্বা সময় থাকার প্রয়োজনে কখনো হোটেল কখনো বাসা ভাড়া নিতে হয়। মুকুন্দুপুর হাসপাতাল কেন্দ্রীক উপশহর। একবার আমিও এমন জাত সমস্যায় পড়ে ছিলাম! বাসা দেখে কথাবার্তা শেষ করে ফেরার সময় বাড়িওয়ালা বলল, দাদা কিছু মনে নেবেন না, আপনারা কি মোসোলমান! আমি একটু হেসে বললাম, জ্বি! তখন দাদা বাবু একটু কাচুমাচু হয়ে বললেন, দাদা, দুঃখিত, আমরা মোসোলমান ভাড়া দেব না!
আচ্ছা বলেনতো ভগবান বা আল্লাহর নাম নিয়ে যারা জাতপাত বাটোয়ারা করে বা করছে তার কি সত্য ধর্মের উপর বিশ্বাস বা আস্থা রাখে? আমি ভেবে কূল পাই না এই চৈত্যবৃক্ষ বিভাজনীয়তার!
(জীবন থেকে নেয়া)
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক