Ads

পরকীয়া যখন সামাজিক ব্যাধি !

সালমা তালুকদার

আমার এক পরিচিত আপা একদিন দুঃখ করছিলেন।ফেইসবুকের মাধ্যমে একজন পুরুষের সাথে তার পরিচয়।ভাবের আদান প্রদান অবশেষে প্রণয়।বিভিন্ন সময় লোকটা তাকে উপহার দিত।বেশ দামী দামী উপহার।আর কত ভালোবাসার কথা!ঐ পুরুষটির স্ত্রীর সাথেও আপার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো।কোনো একদিন অসতর্ক মুহূর্তে দু’জনের সম্পর্কের কথা ঐ পুরুষটির স্ত্রীর এর কাছে জানাজানি হয়ে গেলো।এবং যথারীতি ঐ পুরুষটি তার স্ত্রীর দিকে মনোযোগ দিলেন।আর আমার পরিচিত ঐ আপাকে একদমই ইগনোর করলেন।ঐ আপা তার দাম্পত্য জীবনে সুখি ছিলেন না।তাই ভালোবাসার হাতছানির কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।পরিনতি শুধুই অপমান।

আর একটা ঘটনা বলি।তিনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী।একটি মেয়ে আছে।মেয়েটির বয়স যখন ১৬ বছর তখন ঐ নারীটির তার স্বামীর সাথে তালাক হয়।স্বামী তাকে অনেক মারধর করতো।পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো।তাই এই সিদ্ধান্ত।মেয়ে বড় হয়ে প্রবাসী হয়ে গেলে ঐ নারী নিজেও ব্যস্ত হয়ে গেলেন।নিজের ভাই এর সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে।ভালোই ছিলেন।বাঁধ সাধলো তার শারীরিক চাহিদা।কথায় আছে নিয়ত গুনে বরকত।মনে মনে হয়তো কাউকে চাইছিলেন।পেয়েও গেলেন একজনকে।বয়সে তার অর্ধেক।ভাবছেন কি করে জানি?তিনি আমার ফেইস বুকিও বন্ধু ছিলেন।যাকে আজকে আমি বন্ধু লিস্ট থেকে চির বিদায় দিয়েছি।ভাবছেন কেন এমন করলাম!বলছি…

ঐ নারীও পরকিয়া করেন। অর্ধেক বয়সী ছেলের সাথে সেক্স করেন সেটাও ওনার ব্যাপার।কিন্তু সেই ব্যাপার গুলো যখন প্রথম পরিচয়ে রসিয়ে রসিয়ে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন,এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনি।আমি যতই অন্য প্রসঙ্গে যেতে চাই,উনি ততোই ওনাদের সেক্সের পোস্টমর্টেম করেন।যা প্রতিবারই আমার কাছে অশালিন মনে হয়েছে।কি বলবো তাকে আমি?মানসিক বিকার গ্রস্থ নারী?

এরকম আরো ঘটনা আমি জানি।দেখে শুনে আমার উপলব্দী হচ্ছে মেয়ে গুলো পদে পদে নিজেকে অপমান করছে।আর অসুস্থ করছে নিজেকে।প্রথম ঘটনার ঐ আপা কিন্তু জানেনও না ভেতরে ভেতরে তিনি কতটা মানসিকভাবে অসুস্থ।ব্যক্তিগত ভাবে আমি তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি।তিনি কোনো মানুষের ভালো দেখতে পারতেন না।অযতাই মেয়েদের নামে বদনাম করতেন।আমার কাছে মনে হয়েছে দুটো কারণ এর জন্য দায়ী।একটি স্বামীর ঘরে থেকেও স্বামীহীন জীবন যাপন।অন্যটি পরকিয়া।আর পরেরটিতে মনে হয়েছে মুসলিম নারী হিসেবে অপরাধবোধ।আর এই অপরাধবোধ থেকেই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ। আমার মতো ফেইস বুকিও বন্ধুর কাছে অযতাই এসব বর্ণনা করা।

এসব নারীরা কি করবে?আসলে তাদের কি করা উচিৎ?চোখে এক সমুদ্র স্বপ্ন নিয়ে বিয়ে করে কোনো এক রাজপুত্রকে।বাবা মা এর আহলাদে বড় হওয়া মেয়ে গুলো স্বামী নামে কাউকে চেনে না।বন্ধু হিসেবে পেতে চায়।খুব বেশি কি অপরাধ করে ফেলে?শ্রদ্ধার চাইতে ভালোবাসাটাকে প্রাধান্য দেয় বেশি।ছোট্ট জীবনে বেঁচে থাকতে চায় একটি পুরুষকে সঙ্গী করে।বোকা মেয়ে গুলো বোঝে না স্বামী আসলে বন্ধু না।স্বামীকে শ্রদ্ধা করতে হয়!ভক্তি করতে হয়!স্বামীর সংসারে মাথা নিচু করে থাকতে হয়!এসব যখন পারে না বা করতে চায় না তখনই জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে।সকাল বিকাল ঘাড়ের মধ্যে উত্তম মধ্যম পরে।

কিছু নারী/পুরুষ এমনও দেখেছি এদের জীবনে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু এরা নিজেরাই একটা সমস্যা।কারণ যে কোনো পুরুষ/নারী দেখলে এদের ভালো লাগে।বিবাহিত,অবিবাহিত হোক এটা কোনো ব্যাপার না।কিছুদিন সয্যাসঙ্গী হিসেবে থেকে আবার নিজের ঘরের দিকে মন দেন।এরা কিন্তু একসময় মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন।কারণ এরা নিজেদের ঘরকে অযথাই বঞ্চিত করছেন।এদের একটু দূরে রাখি।

লিখতে বসেছি কিছু সুখী নারী/পুরুষদের নিয়ে।এবার তাদের কথা বলি।বিশেষ করে তাদের কথা যারা পরকিয়া শব্দটা নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করেন।এরা নিজেদের স্ত্রী, সন্তান নিয়ে খুব ভালো আছেন।অন্যের সংসারের সমস্যা নিয়ে এরা বেশি মাথা খাটান।কিন্তু আমি যতটুকু জানি ঐ সব নারী বা পুরুষ পরকিয়া করেন যারা সংসারে জীবন সঙ্গীর কাছ থেকে বছরের পর বছর অসুখী জীবন যাপন করছেন।মানসিক চাহিদার কথা যদিও বা বাদ দেই,শরীরকে কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।আর আমরা জানি শরীরের চাহিদা সবার সমান না।কারো বেশি কারো কম।যাদের বেশি তারা তখন কি করবে?পতিতালয়ে যাবে?নাকি বাড়ীর দারোয়ান,ড্রাইভারকে ব্যবহার করবে?সেখানেও তো বিপদ।লোক জানাজানি।কেলেঙ্কারি।তখন হয়তো মন মতো কাউকে পেয়ে গেলে ভালোবাসা আবার জাগ্রত হয়।যা পরবর্তীতে জানাজানি হলে পরকিয়া উপাধীতে ভূষিত হয়।এবং পরিনতি দুই কূলের ভরাডুবি।স্ত্রী বিয়োগ।সন্তানের ভবিষ্যত অন্ধকার।

আর যারা মানসিক শারীরিক চাহিদাকে পাত্তা না দিয়ে সময়ের উপর সব ছেড়ে দিয়ে পথ চলতে থাকেন,তারা হয়তো ভালো থাকেন।কিন্তু একটা সময় কিন্তু ঠিকই এরা অসুস্থ হয়ে যান।কারণ সব কিছুরই একটা সীমা আছে।জীবন সঙ্গী এবং তার সঙ্গ লাগবে বলেই সৃষ্টিকর্তা নারী পুরুষ তৈরী করেছেন।দুজনের দ্বারা যেমন পরিবার বড় হবে।তেমনি দুজন একসাথে মিলেমিশে থাকলে মন শরীর দুটোই ভালো থাকবে।পরকিয়া নামক মৃত্যু ফাঁদের কাছে কখনোই ধরা দিতে হবে না।

নারী বাদীরা যখন বলেন ছেলেরা পরকিয়া করতে পারলে মেয়েরা কেন পারবে না?তখন এক শ্রেনীর সুখি মানুষ চিৎকার করে ছিঃ ছিঃ রব করে উঠেন।চিৎকার করার আগে কি একবার ভাবেন এরা কেন একথা বলছেন?ভাবেন না।কারণ পরকিয়ার সৃষ্টিটা আসলে কিছু মানুসিক বিকার গ্রস্থ পুরুষের জন্যই হয়েছে।এবং এটা বেশ কয়েক বছর ধরেই প্রমানিত হয়ে আসছে।কলিগের সাথে,ফেইসবুক বান্ধবীর সাথে,কাজের মেয়ের সাথে,বউ এর বান্ধবীর সাথে।পরিনতি স্ত্রীর আত্মহনন,তালাক নয়তো স্ত্রীর নিজেরও বিপথে যাওয়ার প্রবনতা।আবার মুদ্রার ওপিঠ যে নেই তা বলা যাবে না।তবে সংখ্যায় কম।

তাই বলছি “পরকিয়া”একটা মৃত্যু ফাঁদ।এর সৃষ্টি হয় স্বামী অথবা স্ত্রী যে কোনো একজনের অবহেলা,অবমূল্যায়ন,খারাপ ব্যবহার থেকে।তাই এর শুরুটা ধ্বংস করার একটাই উপায় স্বামী স্ত্রী দু’জন দু’জনকে সমান গুরুত্ব দেয়া।একটা পরিবার যদি গঠন করা হয় তাহলে সেটা রক্ষাও তো করতে হবে।অনেকেই হয়তো খেয়াল করে দেখবেন পরকিয়ার জন্য মানুষ ফেইসবুককে দায়ী করেন।কারণ আগে পরকিয়া নামক ব্যাধিটা ছিলো কিন্তু এত ব্যাপক আকারে ছিলো না।আমি কিন্তু কোনো ভাবেই ফেইসবুককে দোষ দেই না।মানুষের মন মানসিকতা আর বিবেককে দায়ী করি।কারণ আমার যদি নূন্যতম শিক্ষা থাকে তাহলে ম্যাসেন্জারে প্রেমের প্রস্তাব পেলেই আমি কেন হামলে পরবো?ঘরে স্বামী/স্ত্রী রেখে আমার কেন আরেক জনকে জীবনের সাথে জড়াতে হবে!উন্নত বিশ্বের মতো যদি যে যার যার মতো জীবন কাটাতে পারতো তাহলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু বাঙ্গালী সংস্কৃতির সাথে যায় না এমন কাজ করলে শুধু ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না।

একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি।এক লোক বিয়ের পর তার পুরোনো প্রেমিকাকে ফেবুর মাধ্যমে খুঁজে পেয়ে পুরোনো প্রেম জেগে উঠলো।শুরু হলো ভার্চুয়াল যোগাযোগ।পরিনতি বউ এর সাথে ঝগড়াঝাটি।স্ত্রী বললো যাই হোক আমি থাকবো।কারণ একটা মেয়ে আছে।কিন্তু স্বামী নাছোর বান্দা।তার ভাষ্য স্ত্রী না গেলে প্রেমিকা আসবে না।(প্রেমিকা আবার বিবাহিত পুরুষটির থেকে দুই বছরের বড়।)ওদিকে প্রেমিকা বলে সে তার স্বামী সন্তান রেখে আসবে না।চলুক প্রেম নিরবে নিভৃতে।শেষ পর্যন্ত আবেগী প্রেমিক হৃদয়ের জয়।স্ত্রী মাত্রাতিরিক্ত অত্যাচারে চলে গেলো।প্রেমিকাও এলো না।মাঝখান থেকে পবিত্র বিবাহ বন্ধন গেলো টুটে।দুজনের দুটি পথ গেলো বেঁকে।প্রেমও গেলো ছুটে।এই হচ্ছে পরকিয়া।এবং এটা সত্য ঘটনা।এরকম অনেক ঘটনা চোখের সামনে দেখেছি বলেই এর কুফলটা আমার কাছে খুব স্পষ্ট।

তাই বলছি,ছোট জীবনটাকে এত জটিল করার দরকার কি?বরং নিজেরা শপথ করে ফেবুটাকে গোপনে ব্যবহার না করে স্বামী/স্ত্রীকে সাথে নিয়েই ব্যবহার করি।বিয়ের পর দুজনের আবার ব্যক্তিগত বলে কিছু থাকে নাকি!ঘটনার শুরু কিন্তু ঐ ব্যক্তিগত শব্দটা থেকেই।”বিয়ে করেছি বলে কি আমার ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছু নেই?”তাই কে কার সাথে পরকিয়া করছে সেই গল্প না খুঁজে এই সামাজিক ব্যধিটা থেকে উত্তরণের পথটা বরং খোঁজা উচিৎ।

আরও পড়ুন