হাসিনা সাঈদ মুক্তা
তিনমাস পূর্বের কথা।
রাত্রির বিয়ে হয়েছে সেসময় সবে তিনমাস।দুমাসের ভেতরেই অন্তঃস্বত্ত্বা হয় রাত্রি।রাশেদ ঢাকায় একটি কলেজে অধ্যাপনা করে।রাশেদ যেখানে টিউশনী করতো ঢাকার ধানমন্ডিতে।ধানমন্ডি রাত্রির মামার বাসা।মামাতো ভাই সীমান্তকে পড়াতে আসতো রাশেদ।আর রাত্রি আইয়ে পাশ করে মামার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল।উদ্দেশ্য ছিল বিয়েতে ভর্তি হবে।রাত্রির নিজের বাসা জামালপুরে আর রাশেদের নেত্রকোনা।
ওদের পরিচয়টাও অদ্ভুত।
সীমান্তের বাসায় মাঝে মাঝে ভালো ভালো নাস্তা খেতে দেয়া হতো তার স্যার রাশেদুল ইসলাম রাশেদকে।
একদিন ঘরের ভেতরে এসে আয়া নাস্তা এনে দিলো যেখানে রাশেদ পড়াচ্ছিল সীমান্তকে।
সেমাই পিঠা দেয়া হয়েছিল তাকে।দেখেই ভীষন খুশি রাশেদ।
সেমাইপিঠা তার দারুণ প্রিয়,আর সেদিন ক্ষুধাও ছিল বেশ রাশেদের।
পিঠার বাটিটা নিয়েই গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলো সে।
এত সুস্বাদু মনে হলো তার কাছে।রাশেদ চামুচে করে পিঠা খেতে খেতে বল্ল,
-খালাম্মা আজ পিঠাটা জব্বর বানিয়েছে সীমান্ত।
খেয়ে নাও তারপর লিখো।
সীমান্ত দুষ্টু হাসিতে তাকায় ফের বলে,
-আম্মা তো নানা বাড়িতে স্যার।
-আচ্ছা, কে বানালো এই পিঠা?
-আমার বুবু।
-বুবু?তোমার বুবু হলো কবে থেকে?রাশেদেরও কৌতুকপূর্ন জিজ্ঞাসা।
-আরে স্যার আমার কি বুবু থাকতে নেই?আমার ফুপাতো বোন আমি তাকে বুবু ডাকি।
-আচ্ছা বেশ, তবে আমার হয়ে ধন্যবাদটা তাকে দিয়ে দিও।সত্যি অসাধারণ হয়েছে পিঠাটা আমাদের অঞ্চলেও কিন্তু বিখ্যাত এই সেমাইপিঠা।
-জ্বি আচ্ছা তবে বুবুও বলেছে এই কথা।
-কি কথা?
-তাদের এলাকাতেও এই পিঠা বিখ্যাত।
-আচ্ছা?তা কোথায় তোমার বুবুর এলাকা?
-জামালপুরে।
-ও তাই…?
-বুবুর বানানো সব কিছুই অনেক সুন্দর….!
-আর দেখতেও বুঝি তাই?
মনে মনে আওরায় রাশেদ।রাশেদ সেদিনের পর থেকে এদিক সেদিক খোঁজে সেইজনকে,যার হাতে আসলেই এত জাদু আছে!একবার সীমান্তকে পড়ানোর সময় অন্দরমহল থেকে খিলখিল সশব্দে হাসি আর কাঁচের চুরির আওয়াজ শোনে রাশেদ।ঐ হাসি তার কাছে মনে হচ্ছিল রিনিঝিনি ঐ কাঁকন গুলোর মতোই তার হৃদয়টাকে তোলপাড় করে দিয়েছে।
সীমান্তের মুখ থেকে প্রথম যখন শুনলো সেইজনার নাম রাত্রি,তখন থেকে কি যে হয়ে গেল রাশেদের?শুধু একটিবার তাকে দেখার ইচ্ছেটা তার, দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হলো।
তারপর একদিন সত্যি দেখা হলো রাত্রির সাথে রাশেদের….।
চলবে
১ম পর্বের লিংকঃ
লেখকঃ সাহিত্যিক।