Ads

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত ইসলামিক স্থাপত্য জাদুঘরে রয়েছে চৌদ্দশ বছরের পুরোনো সব নিদর্শন।
পারস্য উপসাগের বুকে গড়ে উঠা এই জাদুঘরটির নাম ‘দি মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট। প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর সাথে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণের অন্যন্য নিদর্শন এটি।
আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন এবং নজরকাড়া ডিজাইনের এই জাদুঘর দেখতে সবসময় ভীড় লেগেই থাকে। এরই মধ্যে কাতারের সবচেয়ে বেশি দর্শনীয় স্থানের তালিকায় নাম লিখিয়েছে এটি।প্রতি বছর পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এই জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন।
বিখ্যাত চীনা বংশোদ্ভূত মার্কিন স্থপতি আই.এম পাই এটির নকশা করেছেন।তিনি ৯১ বছর বয়সে ৪৫ হাজার বর্গমিটারের বিশাল এই ভবনের নকশা করেন।
এর জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে প্রায় ৬ মাস ভ্রমণ করেছেন। ধারনা নিয়েছেন বিশ্বের নানা মুসলিম জাদুঘর ও মুসলিম স্থাপত্য সম্পর্কে। এছাড়া মুসলিম ইতিহাস নিয়েও তিনি পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জন করেন।
কাতার সরকার জাদুঘরের জন্য অনেক জায়গা প্রস্তাব করেছিলেন।কিন্তু মাস্টার পাই দোহা উপসাগরের এই স্থানটিকে বেছে নেন। ভবিষ্যতে অন্য কোন উঁচু ভবন যেন জাদুঘরটিকে ঢেকে না দেয় তাই তিনি এমন জায়গা নির্বাচন করেন।
পাঁচতলা এই জাদুঘরের ভেতরের অংশগুলো কাচ দিয়ে সাজানো।এক পাশ থেকে আরেক পাশে যেতে হলে কাচের তৈরি সিঁড়ি ব্যবহার করতে হয়। অভ্যন্তরীণ নকশাতেও ইসলামি ভাবধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ভবনের মাঝখানে ১৬৪ ফুট উঁচু এক গম্বুজও রয়েছে।আলো প্রবেশ করার জন্য গম্ভুজের উপরের দিকে খোলা জায়গা রাখা হয়েছে।
এই জাদুঘর তৈরিতে বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা জেট মিস্ট গ্রানাইড, ফ্রান্স থেকে আনা পাথর আর জার্মানি থেকে আনা স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহৃত হয়েছে এখানে। এগুলো ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা মূল্যবান জিনিস দিয়ে তৈরি হয়েছে জাদুঘরটি।
এটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০০ সালে এবং শেষ হয় ২০০৬ সালে।২০০৮ সালে জন-সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। জাদুঘরের সীমানায় ২ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটারের একটি বিশাল পার্ক রয়েছে।পার্কটি ২৪ ঘণ্টাউ খোলা থাকে। তবে জাদুঘরটি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত খোলা থাকে।
প্রাচীন আরব, মধ্য এশিয়া, মিশর এবং ইরানের নানা নিদর্শন নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জাদুঘর। গুরুত্বপূর্ণ সব দলিল, শিলালিপি, ইতিহাস- ঐতিহ্যের খাজানা এটি।
এখানে রয়েছে বিভিন্ন মুদ্রা, ধাতব বস্তু, কার্পেট, কুরআনের পান্ডুলিপি, পাথর, সিরামিক সহ ইসলামি শিল্পের নানা নিদর্শন।
দেড়লাখেরও বেশি বই নিয়ে গড়ে উঠেছে এখানকার লাইব্রেরি। এতে রয়েছে আরবি ও ইংরেজির ভাষার ২০০ বিরল বই যা অন্য কোথাও পাওয়া যায়না।
এছাড়া জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, জাদুবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যার উপর মুসলিদের লিখিত সব বইয়ের দেখাও মিলবে এখানে।
জাদুঘরটিতে নামাজের জায়গা, অর্গানিক খাবারের রেস্টুরেন্ট, গিফট শপ, এটিএম বুথ, ওয়াইফাই কানেকশন সহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। প্রতি মাসে একদিন এখানকার হলরুমে ইসালামি সঙ্গীতেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।
জাদুঘরটি এখন কাতারের জনগরের বিনোদনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। জাদুঘর সংলগ্ন পার্কটিতে রয়েছে শিশুদের খেলাধুলার নানা উপকরন।
প্রায় প্রতিদিনই দোহা শহরের অনেক মানুষ ভীড় জমায় এই জাদুঘরের আঙিনায়। আধুনিক ও ইতিহাসের এই অনন্য মিলন দেখতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ‘দ্য মিউজিয়াম অব ইসালামিক আর্টে।
মাহজাবিন মম
লেখক ও সহ-সম্পাদক,মহীয়সী।
আরও পড়ুন