Ads

ছোট গল্প:ফ্যামিলি ক্রাইসিস

শহীদ সিরাজী

শুক্রবার। অফিসে বের হয়নি মমিন সাহেব । সাপ্তাহিক ছুটি তাই বাসাতেই রয়েছে। সময় কাটাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের সাথে। সকালের নাস্তার টেবিলটা তাই বেশ জমে উঠেছে। একসাথে নাস্তা করা এখন অনেকটাই বিরল ঘটনা। সময় হয়ে উঠেনা। ছেলে-মেয়েদের রয়েছে স্কুল কলেজ। ভিন্ন ভিন্ন সিডিউল। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বের হয় তারা। নাস্তার টেবিলে এক হবে কিভাবে? তাই সপ্তাহে শুক্রবারটাই ব্যতিক্রম। ভিন্ন আমেজের।
কিছুক্ষণ হলো নাস্তা পর্ব শেষ হয়েছে। এখন চা পান করবে কিন্তু আসছেনা। ভাবছে সে। মাঝে একবার কলিং বেলের শব্দ পেলো। ছুটির দিনে কি কোন মেহমানের আগমন ঘটলো? এজন্য কি দেরি হচ্ছে ? অপেক্ষার শেষে স্ত্রী রায়া এলো চা নিয়ে ডুপ্লেক্সের উপর ফ্লোরে। স্বামীর চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে পাশে বসলো। চা পেয়ে একটুকরো হাসি উপহার দিতে ভুল কারলো না মমিন সাহেব। বেশ আয়েস করেই কাপে ঠোঁট ছোঁয়াতেই রায়ার মুুখ থেকে বেরিয়ে আসলো কথা ,
“জানো! একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটেছে আজ?”
মমিনের মনে কৌতুহল,
“সাংঘাতিক ঘটনা! তাই নাকি! কি সেটা?”
“পাশের বাসার জরিনা আপাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
অবাক হয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,
“খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে?”
“হ্যাঁ, পাওয়া যাচ্ছে না!”
‘”কেন কি ঘটেছে?”
রায়া বললো, “সে অনেক কথা?”
আবার জিজ্ঞেস করলো সে ,
“কোন জরিনা আপা?”
“পাশের বাসার জহির সাহেবের মিসেস?”
বিস্মিত মমিন সাহেব চিনতে পারলো এবার। পার্ক রোডের এক বাড়িওয়ালা। ধনী ব্যবসায়ী। উত্তরা অভিজাত এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বেশ চেনাজানা। ভাল সম্পর্কও তার সাথে। তার স্ত্রী একজন বয়স্কা মহিলা। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিস্ময়কর! মেয়েদের বিয়ে পর্যন্ত দিয়েছেন, নাতি-পুতিও আছে। এ বয়সে হারিয়ে যাওয়াটা তো অবিশ্বাস্য!
এমন নয় যে কোন উঠতি বয়সের মেয়ে। গোপন প্রেমের কারণে ঘর ছেড়েছে। কিংবা এমন কোন বাজে মহিলা পরকিয়ার করে ঘর ছেড়েছে। এ ধরনের ঘটনা তো প্রায় শোনা যাচ্ছে এখন। সংসার ভাঙছে অনেকের। খবর বেরুচ্ছে পত্র পত্রিকায়। অবক্ষয়ের এমন বিভৎস চিত্র সমাজকে গ্রাস করছে। বুড়ো বয়সে এমন ভিমরতি হবার তো কথা নয়। তাহলে?
তাছাড়া জহির সাহেবের পারিবারিক অবস্থাও তেমন নয়! এমন ঘটনা ঘটলো কিভাবে। এমন প্রশ্ন নিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো,
“কী ব্যাপার বলতো? তোমার বান্ধবি না সে?”‘
রায়ার জবাব,
‘”হ্যাঁ, তবে এক কথায় সব বলা যাবেনা।”
‘?”তার মানে?”
“মানে খুব সহজ। ফ্যামিলি ক্রাইসিস।”
অবাক হয়েছে মমিন সাহেব। বললো,
“ফ্যামিলি ক্রাইসিস মানে?”
‘মানে স্ত্রীকে স্বামীর অবহেলা।’
“সেটা আবার কেমন।”
“তোমারা বুঝবেনা।”
“তোমরা মানে আমি?”
“হ্যাঁ পুরুষেরা।”
সে আরও অবাক! হালকা রসিকতা করে বললো,
“কি বলছো তুমি। বাইরে থেকে একেবারে যে ঘরে আক্রমন।”
স্ত্রী রায়া বললো,
“নিউটনের ৩য় সুত্রের কথা মনে আছে তো! to every action there is equal and opposit reaction. হৃদয়ে পুশে রাখা দীর্ঘ দিনের অবহেলার বিপরিত পতিক্রিয়া এটি, বুঝলে? অভিমান করে গৃহ ছেড়েছে আপা! আর ফিরবে না।”
শুনে মমিন সাহেব বিস্মিত না হয়ে পারলো না। তবে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে। নইলে এতকিছু জানলো কি করে রায়া। বললো,
“বলো কি? এমন অভিমান! তাও আবার এই বয়সে! এতদিনের সংসার! মান-অভিমান থাকবে তাই বলে ঘর ছাড়বে!”
রায়া তার পক্ষ নিয়ে বললো,
“বলেছিলাম না তোমরা পুরুষেরা বুঝবেনা। একজন মেয়ে কতটুকু কষ্ট পেলে অভিমান করে স্বামীর সংসার ছেড়ে যায় তা কি তোমরা ভেবেছো! না ভাবোনি! পুরুষরা এ সব ভাবে না। তারা মাস শেষে স্ত্রীর হাতে খরচের টাকা দিয়ে খালাস। সাত সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে যায় অফিসে। সারাদিন রাখে না কোন খোঁজ। রাতে ফিরে কাজ একটায়; খেয়ে নাক ডাকিয়ে ঘুম। সারাদিন মেয়েটির কিভাবে কাটলো। রান্না-বান্না, বাজার-ঘাট, সংসার সমালানো, ছেলে মেয়েদের বায়না মেটানো এ সব করতে করতে দিনটা তার কেমন যায়; স্বামীর একবার সময় বা ইচ্ছে কোনটায় হয় না তা জানতে। রাতে ফিরে উল্টো জিজ্ঞেস করে সারাদিন কি করেছো?”
মনিন সাহেব এসব শুনে ভড়কে গেল! এই সেরেছে! রায়া তো দেখছি সব পুরুষকে নারীর মুখোমুখি করে ছাড়বে। তাকেও ছাড়বেনা। কথার মোড় ঘোরানোর জন্য তাই বললো,
“কিন্তু ওদের কি হয়েছে তা তো বলছো না।”
রায়া রাগ করে বললো,
“শুনবে ওদের কথা ? জহির সাহেবের লেবাসটা ভাল হলেও দায়িত্বহীন। সারাদিন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। রোজগারের ধান্ধা ছাড়া তার মাথায় কিছু নাকি নাই। মেয়েদের বিয়ের পর ওরা শশুর বাড়ি। এতবড় ফ্লাটবাড়ি পুরো খাঁখাঁ । জরিনা আপার ডায়াবেটিস আছে, রয়েছে প্রেসারও। সে সব খেয়াল করার ফুরসুৎ নেই সাহেবের। বেচারা বউ আপন গৃহেই জেল কয়েদি। দেখার কেউ নেই। স্বামীর সহনুভুতি পাওয়ার কি তার অধিকার নেই! একটু খেয়াল করলে, একটু কাছে বসলে, সময় দিলে কি তার অভিমান হতো। মেয়েরা সব কিছু সইতে পারে কিন্তু স্বামীর অবহেলা সইতে পারেনা।”
মমিন সাহেব একজন পুরুষ। তার মত আর একজন পুরুষের এহেন কাণ্ড তাকে দায়িত্ব জ্ঞানহীনই মনে হলো। বেশ বিব্রত মনে করলো নিজেকে। স্বামীর কাছে মেয়েদের চাওয়া পাওয়ার অনেক কথাই বল ফেলেছে রায়া। কি জানি তার উপর না কোন বিপদ এসে পড়ে। নিজের ঘর সামলানোর দিকে মনোযোগী হলো সে। মৃদু হেসে বললো,
“আমি কিন্তু জহির সাহেবের মত নই।”
তার কথা শুনে রায়া ফিক করে হেসে ফেললো। চোখে তার কৌতুক। বললো,
“চোরের মন পুলিশ পুলিশ! নিজের ঢোল আর নিজে বাজিও না, ফেসে যাবে কিন্তু।”
স্ত্রীর হাসি দেখে মমিন বুঝলো ফাঁড়া কেটে গেছে। প্রসংগে ফিরে বললো,
“সত্যি রায়া! যা বললে তুমি মেনে নেয়া যায় না। দোষটা জহির সাহেবেরই। মানুষ এত দায়িত্বহীন হয় কি করে। বাইরে থেকে তো তাকে এমন মনে হয় না।’
শুনে রায়া বললো,
“মানুষকে চেনা দায়। শুনো! এ ব্যাপারে আমাদের কিছুটা দায়িত্ব আছে। তোমাকে লাগবে।”
মমিন খুশি হলো। হেসে বললো,
“কারো বিপদে তো এগিয়া যাওয়া উচিৎ। আমাকে লাগবে? বলো কী করতে হবে?”
রায়া নীচু গলায় বললো,
“জরিনা আপা কিন্তু আমাদের বাসায়। অভিমান করে চুপি চুপি এখানে এসেছে।”
বিস্মিত মমিন বললো, ‘”তাই নাকি?”
রায়া আবার নীচু গলায় বললো,
“সমস্যা হলো এখন আপা শুধু কাঁদছে?”
মমিন আরও অবাক! জিজ্ঞেস করলো,
“কাঁদছে কেন?”
রায়া তার কছে যা শুনেছে তা বললো,
“অভিমান করে এসেছে বটে তবে এখন মন খারাপ। আসার সময় জহির সাহেব বাসাতে ছিল না। দুপুরে খেতে আসবে। দেখবে রান্না-বাড়া নাই, বউও নাই। খুঁজবে কিন্তু পাবেনা। সারাদিন না খেয়ে থাকবে। কাউকে বলতেও পারবেনা। এ সব ভেবেই আপা কেঁদে সারা।”
এবার মমিন সাহেবের অবাক হবার পালা।
বললো,
“তুমি না বললে অবহেলা পেতে পেতে রাগে ক্ষোভে
ক্ষুব্ধ আপা চলে এসেছে। যার উপরে রাগ-অভিমান তার জন্যে আবার কান্না, বিস্ময়কর।”
রায়া বললো, ‘বিস্মিত হচ্ছো!’
‘হ্যাঁ, সত্যি হচ্ছি।’
সে বললো,
‘মেয়েদের জন্য এটায় স্বাভাবিক। তোমরা এ সব বুঝবেনা! দেখো! মেয়েরা কিন্তু বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে আসে কেবল স্বামীর উপর আস্থা রেখে। নিজের চেয়ে তাই স্বামীকে বেশি গুরুত্ব দেয়, ভালবাসে। কিন্ত স্বামী যখন অবহেলা করে তখন মেয়েরা সইতে পারেনা, ভেঙ্গে পড়ে। আপার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। রাগ করে চলে আসলেও এখন কষ্ট পাচ্ছে।’
যত শুনছে ততই অবাক হচ্ছে মমিন সাহেব। বিষয়গুলো এভাবে ভাবেনি আগে। রায়ার কথায় বুঝতে পারছে মেয়েদের কষ্টগুলো। সে যে মোটেও বুঝেনা তা নয়; তবে এ সব কথা তাকে আরও সচেতন করছে। বুঝতে পারছে স্বামীরা একটু সচেতন হলে কিন্তু সমস্যা থাকেনা।
হঠাৎ মমিনকে চুপ দেখে রায়া বলে উঠলো,
‘কি ব্যাপার, কি ভাবছো?’
‘তোমার জরিনা আপার কথা ভাবছি।’
‘আচ্ছা কি করা যায় বলতো ?’
‘তুমি তো বললে আমাকে না-কি লাগবে।
‘হ্যাঁ, তবে কিভাবে লাগবে সেটা ভাবছি।’
মমিন সাহেব বললো,
‘যেহেতু কান্নাকাটি করছে তো পাঠিয়ে দাও। ভুল বুঝাবুঝি দুর হয়ে যাবে।’
রায়া মমিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘খুব সহজ সমাধান দিচ্ছো কিন্তু তার আগে জহির সাহেবকে একটা শিক্ষা দিতে চাই।’
রায়ার কথায সে কিছুটা অবাক! বললো,
‘শিক্ষা দেবে! কি শিক্ষা?’
রায়া জোর দিয়ে বললো,
‘জহির সাহেব যেন তার ভুল বুঝতে পারে। এসে ক্ষমা চেয়ে বউকে সাথে করে নিয়ে যায়। আর এ কাজটা করবে তুমি।’
এবার মমিন সাহেব চমকে উঠলো। বুঝতে পারছে না তাকে কি করতে হবে। বললো,
‘আমি করবো! কি করতে হবে আমাকে?’
‘দেখো! আমি তাকে সরাসরি কিছু বলতে পারবো না। সে সব তুমি বলবে। আপাকে বলেছি ঘর থেকে যখন বেরিয়ে এসেছেন তো এখন ফেরার দরকার নাই। দাঁত থাকতে যেমন কেউ দাঁতের মর্যাদা বুঝে না তেমন রাত পর্যন্ত চুপ থেকে ভাইকে তার বউয়ের মর্যাদা বুঝান। তারপর বাসাতে ফিরবেন।’
সে বুঝতে পারলো পরিকল্পনা। চমৎকার বুদ্ধি বের করেছে রায়া। সব জিনিস তো বুঝানো যায় না। কিছু কিছু হাতে কলমে শেখানো দরকার।
বললো,
‘চমৎকার তোমার পরিকল্পনা।’
পরিকল্পনা নিয়ে অপেক্ষা করছে মমিন সাহেব। খোঁজ নিয়ে জেনেছে জহির সাহেবের অবস্থা ‘ন যযৌ ন তস্হৌ’।
এমন কোন জায়গা নেই যে খোঁজ করেনি। সারাদিন তার খাওয়া-দাওয়া হয়নি। রায়ার কথায় ঠিক। বাসাতে বউ না থাকার কষ্ট সে তিলে তিলে উপলব্ধি করছে। তার কাছেও টেলফোন এসেছিল তবে কৌশলে এড়িয়ে গেছে।
ভাবছিল সন্ধ্যের পর টেলিফোন করে খোঁজ নিবে জহির সাহেবের। ঠিক সে সময় জহির সাহেবই পেল টেলফোন। সংকোচের সাথে সে বললো,
‘মমিন ভাই! আপনার ভাবি কি ওখানে আছে?’
মমিন সাহেব হেসে হালকা রসিকতা করলো।
বললো ‘ বউ হারিয়ে ফেলেছেন না-কি?’
কেন উত্তর আসছেনা; দেখে সে ভাবলো, না বেচারাকে আর কষ্ট দেয়া নয়। বললো,
‘আপনি একবার আসুন না ; দেখি কি করতে পারি।’
কিছুক্ষণের মধ্যে হাজির হলো জহির সাহেব। হয়তো বুঝতে পেরেছে তার গিন্নী এখানেই আছে। মমিন সাহেব এগিয়ে তাকে ড্রইংরুমে বসালো।
হেসে বললো,
‘বুঝতে পারছি দিনটা ভাল যাচ্ছে না আপনার। মিসেসের কাছে জেনেছি ভাবিকে খুঁজছেন। হ্যাঁ ভাই! ভাবি এখানেই আছে। কিন্তু ব্যাপার কি বলুন তো?’
জহির সাহেব কি বলবে! মুখে কথা নেই।
শেষ বললো,
‘বুঝতে পারছি আসলে আমারই ভুল। এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আপনার ভাবিকে সময় দিতে পারিনি। সে বেচারা বাসায় একা থাকতে থাকতে ভুল বুঝেছে।’
মমিন সাহেব বললো,
‘দেখুন জহির ভাই, দাম্পত্য জীবন কিন্তু পারস্পরিক ভালবাসা ও বিশ্বাসের নাম। এটি টিকে থাকে উভয়কে উভয়ের সম্মান ও ছাড় দেয়ার উপরে। একটু ভেবে দেখুন, মেয়েরা স্বামীর কাছে আছে অন্য একটা পরিবেশ থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে। কেবল স্বামীর উপর আস্থাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই স্বামী যখন তাকে অবহেলা করে তখন তারা অসহায় বোধ করে। ভেঙ্গে পড়ে।’
এতটুকু বলতেই জহির সাহেব বলে উঠলেন,
‘স্যরি মমিন ভাই! আপনি ঠিকই বলছেন।’
মমিন সাহেব হাসতে হাসতে আরও বললো,
‘আপনাদের একটু ভুল বুঝাবুঝি আরকি। বাসাতে একা একা থাকতে থাকতে তো যে কেউ হাপিয়ে উঠে। ভাবিরও এটিই হয়েছে। যদি একটু খেয়াল করতেন তাহলে এমন হতো না। পুরুষদের সময় কাটনোর অনেক সুযোগ আছে। চলতে ফিরতে অফিস আদালতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কথা বলার কত মানুষ, কত সুযোগ। কিন্তু মেয়েরা! বাড়ির ভেতরে একধরনের বন্দি জীবন তাদের। সে ক্ষেত্রে কিন্তু স্বামীদের অনেক ভুমিকা আছে। তারা সময় না দিলে কার সাথে কার সাথে কথা বলবে? কার সাথে সময় কাটাবে? এসব স্বামীদের ভাবতে হবে।
জোর দিয়ে আরও বললো,
ভাই ! শত ব্যস্ততার মাঝে সময়ের একটু বাজেট রাখুন না ভাবির জন্য। ছুটির দিন গুলোতে কোথাও ঘুরতে যান। সকালে মর্নিং ওয়াকের সময় পার্কে সাথে রাখুন। আল্লাহ অনেক কিছুই দিয়েছেন মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যেতে অসুবিধা কোথায়। পরস্পরকে পরস্পর বুঝতে চেষ্টা করুন কোন সমস্যা থাককেনা।’
আলোচনা কম হলো না। জহির সাহেব ভালভাবেই বুঝতে পারছে তার ভুলগুলো। আসলে সে কিন্তু খারাপ নয়। সচেতনতার অভাবের এ ভুলগুলো করে বসেছে। দাম্পত্য জীবনের সফলতার জন্যেও রয়েছে কিছু কৌশল। যা তার জানা না থাকায় এ সমস্যাগুলো হয়েছে। এখন বুঝতে পেরেছে।
মাঝে চা পর্বও শেষ হয়েছে। এবার বিদায় নেবে জহির সাহেব। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দোয়া চেয়ে বললেন,
‘মমিন ভাই! দোয়া করবেন। এসব থেকে যেন সতর্ক থাকতে পরি। এমন ভুল যেন না করি।’
রায়াও এগিয়ে দিলো তার মিসেসকে। হাসতে হাসতে টিপ্পনি কেটে তাকে বললো,
‘নিশ্চয় ভাইয়ের একটা শিক্ষা হলো। বউকে অবহেলা করবেন না। দেখবেন নতুন জীবন পেয়েছেন আপনি।’
ওরা বিদায় নিলে রায়া এসে মমিন সাহেবের পাশে বসলো। বললো,
‘তুমি চমৎকার বলেছো। আমরা সব শুনেছি ভেতর থেকে।’
মমিন সাহেব বললো,
‘তোমার পরিকল্পনাটা বেশ সুন্দর ছিল।’
রায়া এবার টিপ্পনি কেটে স্বামীকে বললো,
‘তুমি যা যা বলেছো সবটা কিন্তু করো না। এবার দেখবো মমিন বান্দা যা বলে মমিন সাহেব কিন্তু তাই করে।’
প্রথমে বুঝতে পারেনি মমিন সাহেব বুঝতে পেরেই হো হো করে হেসে বললো,
‘একেই বলে মাছের তেলে মাছ ভাজা।’
স্বামীর কথা শুনে রায়াও না হেসে পারলো না।
ওদের সমস্যার চমৎকার একটা সমাধান করতে পেরে এ দম্পতির মন খুশিতে ভরে উঠলো।
লেখকঃ কবি, সাহিত্যিক ও ব্যাংকার
লেখকের প্রকাশিত লেখা-
আরও পড়ুন