Ads

ডিভোর্স

খান আনোয়ার হোসেনঃ

সজিব ও শায়লার সংসার ভালই চলছিল। সাত বছরের সংসারে আছে একটি পরীর মত পাঁচ বছরের মেয়ে। বাড়িতে কেউ আসলে মেয়ের কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। সুন্দর ও গোছালভাবে কথা বলে সে। স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে মেয়েকে। মেয়ের নাম সজিব নিজের সাথে মিল রেখে রেখেছিল স্নিগ্ধা। সজিব একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে মোটা অংকের বেতন পায়। ঢাকা শহরে গাড়ি বাড়ি সবই আছে তার। মাঝে মাঝেই বিদেশে ভ্রমন করতে হয় তাকে।

পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়েছিল। ইদানীং সজিবের ব্যবহারে উগ্রভাব দেখা যাচ্ছে। স্বামী স্ত্রীর যে সম্পর্ক সেটিও সে বজায় রাখছেনা। শায়লা চুপচাপ সংসার করে চলেছে যেন রাতে তার কোন চাহিদা নেই। রাতে সজিবের পিঠে হাত রাখলে বিদ্যুৎ বেগে হাত সরিয়ে দেয়। সজিব কেন এমন করছে সে ভেবে পায়না। শায়লা আজ পর্যন্ত এমন কোন কাজ করেনি যে কারনে সজিবের খারাপ লাগবে। তবুও সে ভেবে পায়না কি তার অপরাধ!

প্রায় এক সপ্তাহ সিঙ্গাপুর থেকে এসে গভীর রাতে শায়লাকে ডেকে ছাদে নিয়ে গেলো।
আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই যা অনেকদিন থেকেই বলতে চাই।
ঠিক আছে তুমি বলো কি বলতে চাও।
তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা। আমি তোমাকে ডিভোর্স দিতে চাই।
শায়লার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল কিন্ত সে কিছুই করলনা। সে অনুমান করতে পেরেছিল তার স্বামী পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়েছে।

তুমি আমার স্বামী,আমাকে বিয়ে করেছ আবার ডিভোর্স দিতে চাইছ। ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো তাই হবে। তবে আমার কিছু অনুরোধ ছিল।
তুমি আমাকে বাঁচালে আমি ভেবেছিলাম তুমি চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলবে। সত্যি বলতে মিলি নামে একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছি আমি। আমাদের মধ্যে দুমাসের সম্পর্ক চলছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি মিলিকেই বিয়ে করব। তোমার মত আন স্মার্ট সে নয়। তুমিতো ঘরের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকো আর ও পার্টিতে যায় নাচে গান গায় ও ড্রিংস করে। তুমি আসলে মিলির মত কিছুই করতে পারোনা। এবার বলো তোমার অনুরোধ কি।
তুমি আমাকে দুইমাস পর ডিভোর্স দিতে পারবে। আমাদের মেয়ে স্নিগ্ধার সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষা চলবে দশদিন ধরে।
এটি কোন ব্যাপার হলো? আমি রাজী আছি।
আমার কথা শেষ হয়নি। তুমি এই দুইমাস আমাদের সাথে সময় দিবে ঠিক যেমন বিয়ের পর ছিলাম তেমন। আর শেষের পনেরদিন ছুটি নিবে। দেখ তুমি এগুলো পালন করতে পারবে কি-না।
অবশ্যই পারব আমাকে পারতেই হবে। মিলির জন্য আমি সব পারব।
আরো আছে নিয়মিত নামাজ পড়তে হবে। দুপুরে বাসায় খাবে। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ও নিয়ে আসতে হবে ও পড়াতে হবে। রাতে যতদূর সম্ভব আমাকে রান্নায় সাহায্য করতে হবে। ছুটির দিনগুলিতে মিলির সাথে কোন যোগাযোগ করা যাবেনা।
তুমি এই দুইমাস যা বলো আমি সব কিছুতেই রাজী। তাহলে আগামিকাল থেকেই শুরু হোক তোমার দুই মাসের অনুরোধ।
সজিব ঘুমাতে চলে গেল। শায়লা প্রায় সারারাত ছাদে দাড়িয়ে কেঁদেছিল। মাত্র অাধাঘন্টা বিছানায় থাকলেও ঘুম হয়নি।
সকালে ওঠে শায়লা নাস্তা তৈরি করে ফেললো। সে সজিব এবং স্নিগ্ধাকে প্রায় টেনে তুললো। ঘুম থেকে উঠে সজিব মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে গেল। শায়লা দুপুরের জন্য গরুর মাংস,আলু ভাজি ও পোলাও রান্না করল। দুপুর হতেই শায়লা মিস্টি গলায় সজিবকে বাসায় খাওয়ার জন্য আসতে বললো যেন রাতে কিছুই হয়নি। অফিস ও স্কুল বাসার কাছেই। সজিব মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় আসল। অনেকদিন বাসার খাবার একসাথে বসে সবার খাওয়া হয়না। সজিবের খুব ভালো লাগছে।
দিনের পর দিন সময় গড়াতে লাগল। মাঝে মাাঝে বিকেলে তারা লুডু খেলতে বসে যায়। মেয়ে বায়না ধরায় শুক্রবারে বাইরেও খেতে যাওয়া হয়। মিলির সাথে সজিবের যোগাযোগ করার সময় খুবই কম। সে যেন আদর্শ স্বামী ও পিতা হতে চলেছে। মেয়ের পরীক্ষা ভালোভাবেই শেষ হলো।

সজিব অফিস থেকে পনেরদিনের ছুটি নিয়েছে। একদমই ঘরের মধ্যে থাকা হয়। বাড়ির কাপড় পর্যন্তও স্বামীকে দিয়ে মাঝে মাঝে ধুয়ে নিচ্ছে। সজিব তাতে না করছেনা তারও যে আস্তে আস্তে ভালো লাগছে। মিলির সাথে যোগাযোগ একদমই বন্ধ। তারা প্রতিদিন একসাথে সূর্য ডোবা উপভোগ করে। তার মনে হচ্ছে সে অন্যজগতে এখন বসবাস করছে। শায়লা কাছে এসে বললো,
তুমি কি এই কয়দিন আমাকে শোবার আগে দরজা থেকে কোলে তুলে বিছানায় নিতে পারবে?
অবশ্যই পারব তুমিত আর মিলির মত ভারী নও।
দরজা থেকে নিয়মিত কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে যায় সজিব। তার মধ্যে ক্রমেই অন্যরকম অনুভূতি শুরু হয়েছে। দেখতে দেখতে দশদিন কেটেগেল। শায়লা তার ব্যাগ গুছিয়ে বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হলো।
কোথায় যাচ্ছ? আমার এখনও পাঁচদিন ছুটি বাকী রয়েছে।
তাতে কি হয়েছে? পাঁচদিন পরেও তো আমাকে যেতেই হবে। তার চেয়ে আগে যাওয়াই ভালো। আমি মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।বারো বছর পার হলে আইনগতভাবে তুমি ওকে তখন নিতে পারবে। ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দিব। কাবিননামার টাকাটা আমার মেয়ের নামে একটি ফিক্স ডিপোজিট করে রেখে দিও। এটাও একটা অনুরোধ। শায়লা মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে গেল।

শায়লা বাড়ি থেকে যাওয়ার পর বাড়িটি একদম ফাকা হয়ে গেছে। পুরোনো স্মৃতিগুলো বার বার চোখের সামনে ভাসছে। এ বাড়ির প্রত্যেকটি স্থানে শায়লার প্রতিচ্ছবি সে দেখতে পাচ্ছে। মাত্র একদিন শায়লা বাড়িতে নেই মনে হচ্ছে কতদিন শায়লাকে দেখেনা। সারারাত প্রায় নির্ঘুম কাটলো সজিবের।

তুমি এ বাড়িতে কেন?
আমি কি আমার শ্বশুর বাড়িতে আসতে পারিনা?
না পারোনা। তুমি এ বাড়ির জামাই নও।
কে বলেছে আমি এ বাড়ির জামাই নই। আমি এই বাড়ির জামাই আছি এবং ভবিষ্যৎ ও থাকবো। আমার এখনো চারদিন ছুটি আছে। শ্বশুর বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে তারপর বউ বাচ্চা নিয়ে বাড়ি ফিরব।
তোমার মিলির কি হবে?
আমাকে আর লজ্জা দিওনা। ফেসবুকে এইমাত্র দেখলাম অন্য একজনের সাথে ঘুরতে যাওয়ার অন্তরঙ্গ ছবি অাপলোড করেছে।
তারমানে মিলিকে না পেয়ে তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছ।
তা হবে কেন। তোমার বাড়িতে আসার পথে ফেসবুক চালাতে গিয়ে দেখলাম। আমি সত্যি সত্যি আমার বউয়ের প্রেমে পরে গেছি। আমার ভুল হয়েগেছে লক্ষি বউ আমাকে ক্ষমা করা যায়না?
থাক হয়েছে আর আমাকে পাপী বানাতে হবেনা। তুমি ভুল বুঝতে পেরেছ এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।
বাড়ির অন্য সবাই কোথায়?
তুমি তো ভুলোমনের মানুষ। আজ তোমার জন্মদিন। আমরা যে ঘরে থাকি সে ঘর সবাই সাজাতে ব্যাস্ত আছে। বাবা তোমার জন্য বড় কেকে নিয়ে এসেছেন।
তারমানে তুমি জানতে আমি আসব?
আমি তোমার নাড়ি নক্ষত্র চিনি। কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট না করে বাসার মধ্যে এসে সবার সাথে দেখা করো।

আরও পড়ুন