Ads

প্যারেন্টিং

(পর্ব -১৬)
আপনার সন্তানকে বন্ধু বানান
– নুরে আলম মুকতা
অনেকদিন আগে একটি ইংরেজি কবিতার অনুবাদ পড়েছিলাম। সহজ ভাষা কিন্তু আবেদন সার্বজনীন। কবিতাটির দুটো লাইন আমার মাথার কোন সার্ভারে আছে আল্লাহ মালুম! কার লেখা তাও মনে নেই । কোথায় পড়েছিলাম মনে করতে পারি না। ওটা প্রায় আমার মনে হয়, কবিতাটির শুরুটি এরকমঃ
উচ্চে ওড়ে বিমানটি যে
আকাশ কাঁপে
তার দাপটে ,
কিন্তু তোমার বিমান নিয়ে
একবার তো
নামতে হবে !
সিরিয়াস উপলব্ধি। বয়ঃসন্ধি কালের বিমান এতটাই ক্ষিপ্র গতিতে ওড়ে যে, বেমালুম ভুলে যায় মৃত্তিকার ছোঁয়া ছাড়া কোন গতি নেই। নিচে নেমে আসতেই হবে। নেমে আসাটি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব মনে হয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের। রাডার দেখে ঠিক রাখতে হয়  ট্র্যাক, রানওয়ে সহ আরো অনেক কিছু। ছেলেমেয়েদের এ ওড়ার বয়সটি নিয়ন্ত্রণে আমরা মা বাবা ব্যর্থ হলে বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।
সিরিয়াস উপলব্ধি। বয়ঃসন্ধি কালের বিমান এতটাই ক্ষিপ্র গতিতে ওড়ে যে, বেমালুম ভুলে যায় মৃত্তিকার ছোঁয়া ছাড়া কোন গতি নেই। নিচে নেমে আসতেই হবে। নেমে আসাটি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব মনে হয় ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমের। রাডার দেখে ঠিক রাখতে হয়  ট্র্যাক, রানওয়ে সহ আরো অনেক কিছু। ছেলেমেয়েদের এ ওড়ার বয়সটি নিয়ন্ত্রণে আমরা মা বাবা ব্যর্থ হলে বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।
আমরা STD যতটুকু সম্ভব ধারাবাহিক আলোচনা করে যাচ্ছি। সম্মানিত চিকিৎসক বন্ধু আমাদের এ আলোচনায় কোথাও ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে জানাবেন। ত্রুটি শুধরে নেয়ার বিষয়ে সচেষ্ট থাকবো। আমরা আলোচনা করে চলেছি রোগ গুলো সম্পর্কে সামান্য হলেও জানার আর সচেতন থাকার। আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে চলার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছি। চিকিৎসা সম্পর্কিত বিষয় আমাদের পরম সম্মানিত চিকিৎসক বন্ধু গনের এখতিয়ারভুক্ত।
আজ যে রোগটি সম্পর্কে আলোচনা হবে এটিও ২৫ বছর বয়সী বা তার নিচে থাকা ছেলে মেয়েরা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। যৌন রোগগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারনা খুবই অপ্রতুল। এখানে সবসময়ই আমাদের রক্ষণশীলতা কাজ করেছে। আসলে কেউ এ বিষয়ে আলোচনা চায় না। কিন্তু লেখা পড়ার বিষয়ে যদি আমরা একটি অদৃশ্য দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিই তাহলে এটি ক্ষমাযোগ্য কিনা এ বিষয়ে আমি প্রিয় বন্ধুদের মত চেয়ে নিলাম। HIV বা এইডসের বিষয়ে যত আলোচনা হয়েছে তত মনে হয় অন্য কোন যৌনরোগ সম্পর্কে আলোচনা হয় নি। আজ আমরা আলোচনায় না আসা একটি মারাত্মক যৌনরোগ সম্পর্কে আলোচনার চেষ্টা চালাই। বিশ্বায়নের এ সময়ে কোন রোগ আর একটি জায়গা বা অঞ্চলে সীমিত রাখা যাচ্ছে না। কেমন করে ছড়িয়ে পড়ছে তা আমরা ইতিমধ্যে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এরকম একটি যৌন রোগ হলো ক্ল্যামিডিয়া। এটিকে আগে পশ্চিমা দেশগুলোর রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হত। কিন্তু এখন আর এটি শুধু একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই। ছড়িয়ে গিয়েছে বিশ্বের সর্বত্র। একটি হিসেবে দেখা গিয়েছে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ লোকজন এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাবনার বিষয় হলো ২৫ বছর নীচের ছেলে মেয়েরা এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। গবেষক আর বিজ্ঞানীরা বলছেন পরিমিত শালীন জীবন ব্যবস্থা এ রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখতে পারে। যথেচ্ছাচার যৌনমিলন এ রোগের প্রধান কারন। ৭০-৯০ শতাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে এ রোগের কোন উপসর্গ দেখা যায় না। অনিরাপদ জীবন ও যৌনাচারের কারনে এর জীবানু বিস্তৃতি লাভ করে। তথাকথিত আধুনিক যৌন কীটস বা সরঞ্জামের মাধ্যমেও এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। ৫ থেকে ১০ দিন কোন উপসর্গ বোঝাই যায় না। পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই রকম আচরন করে ক্ল্যামিডিয়ার জীবাণু। সচেতন হলে এ রোগ থেকে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। গবেষকগণ বলছেন, মায়েরা এ রোগে আক্রান্ত হলে ectopic গর্রভাবস্থা বা বন্ধ্যাত্ব নেমে আসতে পারে। চোখের সংক্রমণ হতে পারে দুঃখজনক। আমরা ভ্রমণের সময় বিশেষ করে গণ শৌচাগার ব্যবহার করি। এ সময় আমাদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করতে হবে। বাজে স্যানিটেশন এ রোগ জীবানু সংক্রমণের অন্যতম কারন। ৪.২℅ নারী আর ২.৭% পুরুষ এ রোগ ঝুঁকির মধ্যে আছেন। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারী এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। ২০১৪ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ১.৪মিলিয়ন রোগী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন আর ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬১ মিলিয়ন।
আমরা এর আগে আলোচনা করেছি একদম খোলামেলা আলোচনা ও জীবন ব্যবস্থায় শালীনতা না থাকলে জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে। আমাদের সন্তান সন্ততিদের তো আমরা আর শক্ত বেষ্টনীর মধ্যে আটকে রাখতে পারি না। তবে আমাদের করণীয় কি? ওদের মুত্র ত্যাগে জ্বালা যন্ত্রণা, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া, ঘণ ঘণ টয়লেটে যাওয়া, টয়লেটে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা, আমার মামনির ঋতুচক্রে সমস্যা হওয়া, তলপেট ব্যথা এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখা কি গোপন কোন বিষয়? কেউ যদি গোপন মনে করে এড়িয়ে যান তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই। দয়া করে এ বিষয়গুলো খেয়াল করুন। আমাদের মোটিভেশন করা ছাড়া পথ অবরুদ্ধ। আগে নিজের গ্রহনযোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তারপর সন্তানদের নিজের দিকে টানতে হবে। এ রোগগুলো তখনই ধরে ফেলবে যখন আমরা হাল ছেড়ে দিই। আমি যদি না তথ্য দিই তাহলে দায় কার ? নিশ্চয়ই অন্য কাউকে আমি দায়িত্ব দিতে পারি না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর নজরদারি এ রোগগুলো থেকে আমাদের সন্তান সন্ততিদের বাঁচাতে পারে। কোন কোন বন্ধু আঙ্গুল তুলেছেন এ বলে যে কতক্ষণ আপনি সন্তান সন্ততিদের নিয়ন্ত্রণ করবেন ? এ বিষয়ে গবেষকগণ কি বলেছেন শুনুন, ” কিশোর বয়সের দৃষ্টিভঙ্গি একজন মানুষকে মানুষ হতে যতটুকু সহায়তা করে অন্য বয়স বা সময় মানুষের মনোজগতে এত বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।”
তাহলে তো বিষয়টি মনে হয় আমাদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে আছে।
(চলমান)
লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন