Ads

ভ্রমণ কাহিনীঃলাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক পর্ব–০৫

নুরে আলম মুকতা
আমরা সবাই প্রথম সপ্তাহে সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হলাম। অনেক ওষুধ নিয়ে গিয়েছিলাম। সকল কে দিতে শুরু করলাম। আমার মজুদ শেষ হলে তো বিপদ। তাই খুঁজে বের করলাম, বাংলাদেশ হজ্ব স্বাস্থ্য মিশন। বিশাল আয়োজন। আমাদের বাড়ী থেকে দশ মিনিটের পথ। সাথে রাখতে হবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দেয়া আইডি কার্ডটি। কার্ডটি বিশেষ একটি প্রিন্টারে এন্ডোর্স করলে বেরিয়ে আসবে প্রেশক্রিপশন ফরম। তারপর ভীড় থাকলে লাইনে দাঁড়ালে চিকিৎসক চিকিৎসা দিবেন। ভীড় খুব বেশি লম্বা হয় না। প্রায় সবরকমের ওষুধ সাপ্লাই আছে। আপার কাঁশি থামানো যাচ্ছিলো না তাই ডাক্তার ডেক্সট্রোমেথারপ্যান দিল। সাপ্লাই শেষ। বাধ্য হলাম ফার্মাসী যেতে। বিধি বাম। দাম দশ রিয়াল! আবার ঐ হিসাব শুরু করলাম, দশ রিয়াল মানে দুইশত বিশ টাকা। আমাদের দেশে দাম নব্বই টাকা। মানের বিষয়ে হেরফের যাইহোক বাঙালী তো আর ঐ হিসাব করছে না। গাঁটের পয়সার হিসেব করছে।
ওষুধের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। ফার্মাসী গিয়ে অবাক অভিজ্ঞতা হলো….
একজন নাইজেরিয়ান অনেক ওষুধ নিচ্ছেন । আমাদের দেশি সেলসম্যান ওষুধ বের করে তালিকা করছে। আমি দেখছি আর মনে মনে ভাবছি মাইন্ড করে নাকি! জীবনের প্রথম দেখলাম ভায়াগ্রা ট্যাবলেটের প্যাকেট। অনেকগুলো। এর আগে শুধু পড়েছি এ ট্যাবলেটটি সম্পর্কে । সেলসম্যান কে জিজ্ঞাসা করলাম,উনি এত ওষুধ কি করবেন? উনি সৌদি রাজের অনুমোদিত চিকিৎসক। আমরা ওষুধ দিতে বাধ্য । আমার প্রশ্ন হলো রাজবাড়ির লোকজন মক্কায় কেন? দেশি ভাই বুঝিয়ে দিলেন, রাজ পরিবার আর ওদের বংশের প্রতিনিধি মক্কা আর মিনায় বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন । আমাদের বাড়ি সংলগ্ন একটি বিশাল ভবনে নাইজেরীয় হাজীদের আবাস। ওদের প্রত্যেক প্রদেশের জন্য আলাদা আলাদা ব্যাবস্থা। ফ্যাসিলিটিজ অনেক বেশি।
ওষুধের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। ফার্মাসী গিয়ে অবাক অভিজ্ঞতা হলো । একজন নাইজেরিয়ান অনেক ওষুধ নিচ্ছেন । আমাদের দেশি সেলসম্যান ওষুধ বের করে তালিকা করছে। আমি দেখছি আর মনে মনে ভাবছি মাইন্ড করে নাকি! জীবনের প্রথম দেখলাম ভায়াগ্রা ট্যাবলেটের প্যাকেট। অনেকগুলো। এর আগে শুধু পড়েছি এ ট্যাবলেটটি সম্পর্কে । সেলসম্যান কে জিজ্ঞাসা করলাম,উনি এত ওষুধ কি করবেন? উনি সৌদি রাজের অনুমোদিত চিকিৎসক। আমরা ওষুধ দিতে বাধ্য । আমার প্রশ্ন হলো রাজবাড়ির লোকজন মক্কায় কেন? দেশি ভাই বুঝিয়ে দিলেন, রাজ পরিবার আর ওদের বংশের প্রতিনিধি মক্কা আর মিনায় বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন । আমাদের বাড়ি সংলগ্ন একটি বিশাল ভবনে নাইজেরীয় হাজীদের আবাস। ওদের প্রত্যেক প্রদেশের জন্য আলাদা আলাদা ব্যাবস্থা। ফ্যাসিলিটিজ অনেক বেশি।
আমরা বাড়ি থেকে বের হলেই ওদের গায়ের সাথে ঠক্কর লাগে। ওরা রাস্তা ছাড়েনা। বায়তুল্লাহ থেকে আসার পথে একদিন এক নাইজেরীয় হজ্ব কর্মকর্তার সাথে আলাপ হলো। ভদ্রলোক মার্জিত। চমৎকার ইংরেজি বলেন।
অামাদের বাসা থেকে দু কদম সামনে ফাইভস্টার আল মানসী হোটেল চীনা মুসলমানদের জন্য বরাদ্দ ছিল । দল বেঁধে যাতায়াত করে। পোশাক চমৎকার! বিশেষ করে নারীদের। হাতওয়ালা সার্ট, মাথায় ছোট্ট হিজাব। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর পায়ে জুতা। গট গট করে হাঁটে। আমাদের দেশের নারীদের কাপড় সামলে হাঁটা লাগে। ওরা এটির ব্যতিক্রম। কারো সাথে কথা বলতে নারাজ ওরা। গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগলেও। জাপানীজ রা সহজে হোটেল বা কোন আবাসিক স্থানে থাকতে রাজী না। এমনিতে ওদের সংখ্যা নগন্য। যেখানে সেখানে হজ্বের সময় রাত কাটিয়ে দেয় ওরা। ইউরোপীয় অনেক দেশের নারী পুরুষ দেখেছি বিভিন্ন স্হাপনার নীচে,ফ্লাইওভারে, বিশাল টানেলের একপাশে পুরো পরিবার নিয়ে হজ্ব কার্যক্রম সেরে ফেলতে। করবেই না কেন। চিনলেই হলো। সব ব্যবস্থা সব খানে। যত সমস্যা আমাদের নিয়ে। প্রথমত বয়স, দ্বিতীয়ত ভ্রমণ আর শিক্ষার অভাব। ওদের পাসপোর্ট তো সৌদী পুলিশ জমা নেয় না। আমাদের কেন নেয় আমরা জানি। কি আর বলার আছে। দুঃখে, লজ্জায় বলি দশ দোষী তো আমিও দোষী।
একটি বিষয় লক্ষনীয় যে আফ্রিকার প্রায় দেশের মানুষের নিজস্ব প্রতীক বিশিষ্ট পোশাক। ওদের পোশাক বড় বিচিত্র আর রঙীন।
আমরা শুধু শুধু পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। হাল্কা আর শালীন পোশাক হলেই হয়। পুরুষদের জন্য আমাদের ঐতিহ্যবাহী পাজামা-পাঞ্জাবি আর নারীদের জন্য সালোয়ার – কামিজ যথেষ্ট। হিজাব বা ওড়না তো থাকছেই। তবে হজ্বের সময় আমি উভয়কে অনুরোধ করব দেশে ওর্ডার দিয়ে অপেক্ষাকৃত বড় পকেট বিশিষ্ট সুতি কাপড়ের সর্ট ট্রাউজার বানিয়ে নেয়ার জন্য। আমাদের বাজারে যেগুলো পাওয়া যায় এগুলোর পকেট ছোট। বড় পকেটে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। পায়ের বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকবেন। আমরা জানি শীতকালে মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ফেটে যায়। কিন্তু মরু আবহাওয়ায় বেশি হাঁটার কারনে নারী-পুরুষ সবার পা ফেটে ভয়াবহ অবস্থা হয়। এজন্য যে কোন পেট্রোলিয়াম জেল সাথে রাখতে হবে। নিষিদ্ধ এলাকার বাইরে নরম জুতা ব্যাবহার উত্তম। জুতা আর পানির বোতলের জন্য ব্যাগ অপরিহার্য । ডায়াবেটিসের রোগীরা চকলেট বা লজেন্স সাথে রাখা লাগবে। মরু আবহাওয়ার উপযোগী জুতা পাওয়া যাবে আরবে।এগুলো চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্যেই তৈরী। টার্কিশ গুলো ভালো মানের আর দামেও সস্তা । একটি বিষয় সর্বদা মাথায় রাখতে হবে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানুষের জমায়েতের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আপাদমস্তক ও ভাবেই আবৃত করা জরুরী। এমন পোশাক কেউ পরবেন না যাতে পোশাক আটকে আপনাকে টানতে হয়। বরং এমন পোশাক পরিধান উত্তম যা হাল্কা,শালিন, সহজ আর বাড়তি বা ঝোলা অংশ কম। প্রত্যেকটি দেশের জাতীয় পতাকা বিশিষ্ট পোশাক নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশের নেই। এ যেন ব্যবসার জায়গা। উৎসর্গ করার মানসিকতা নেই। একবারে আম আঁটি সব খাবে। কটাকা খরচ হবে, লোগোটি ছাপ সহ যেকোন গার্মেন্ট এটি বানিয়ে দিতে পারে এক সপ্তাহের নোটিশে। সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক। দেশের মানুষ লোকেট করা যাবে সহজে। বিশেষ বিশেষ ভিড়ের সময়। পোশাকটি মানসম্মত হবে। দেখতেও ভালো লাগবে। আমাদের ধর্ম মন্ত্রনালয়ের এ বিষয়ে গবেষণা আর কাজ আছে কিনা আমার জানা নেই। হজ্ব যাত্রীদের ওয়েলফেয়ারের জন্য এগুলো ভাবা যেতে পারে।
(চলমান)
নুরে আলম মুকতা
লেখক,সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন