Ads

ভ্রমণ কাহিনীঃ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (পর্ব-০৬)

নুরে আলম মুকতা

ইহরাম পরে থাকার সময় নীচের পোরশান শক্ত বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকে এজন্য সমস্যা হয়না। কোথাও বের হলেই কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে পানির বোতল,প্রয়োজনীয় ওষুধ আর ব্যক্তিগত জরুরী বস্তু সর্বদাই সাথে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমি মরুভুমিতে আছি। যে কোন সময় বিপন্ন হতে পারি। শক্ত কাপড় আর চ্যাপ্টা ফিতাযুক্ত ব্যাগ তৈরী করে নেয়া ভালো। মানুষের ভীড়ে নষ্ট হয় বা ছিড়ে যায় এরকম ব্যাগ ফিরে পাবার সম্ভাবনা নেই।আমাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই। অভিজ্ঞতা তো নেইই। আর যারা প্রশিক্ষণ দেয় তারা বিষয়গুলো জানে না। সহযোগিতা করে না। যথেষ্ট পারদর্শীতা ওদের কাছ থেকে আশা করা ঠিক নয়। বয়সী মানুষকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রচন্ড ভোগান্তি।মক্কা নগরী তে এ ভোগান্তিতে জীবন বিপন্ন হতে পারে।
সায়ী শেষ করে বসে পড়লাম। সায়ী অর্থ সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি। মা হাজেরা শিশু ইসমাঈলকে তপ্ত মরুভুমিতে শুইয়ে দিয়ে পানির জন্য যে দুই পাহাড়ের মাঝে ছুটোছুটি করেছিলেন। এখন অবশ্য একদম ভিন্ন পরিবেশ। পাহাড় দুটোর ওপরে মসজিদুল হারামের ছাদ সম্প্রসারিত করে দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের চারিদিক সুরক্ষিত অত্যাধুনিক স্থাপনায়। জলের ব্যবস্থা। বিশ্রাম নেয়ার জায়গা পর্যাপ্ত। মনে সাহস রেখে নিজেকে আল্লাহর এবাদতে বিলিয়ে দিলে কোন চিন্তা নেই। পাশে চমৎকার জায়গা আছে নামাজ আর বিশ্রামের জন্য। আছে পর্যাপ্ত এসি, জম জম পানি পানের ব্যাবস্থা।
দলের লোকজন খোঁজা শুরু করলাম। সাফা-মারওয়ার কাছে খোঁজা সহজ। যদি ওদের দৌড়াদৌড়ি শেষ না হয়ে থাকে তবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। খুঁজে পাওয়া যাবে। স্থান ত্যাগ করলে পাওয়া যাবে না। সঙ্গী ছাড়া স্থান ত্যাগ না করাই ভালো।
আবারো ফিরে এলাম বায়তুল্লাহ র কাছে।ভাইটিকে বিদায় করে দে ভাই,আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো বোধ করছি। আপা বললেন। আপার কথামতো যুবকটিকে বিদায় করে দিলাম। ও একবার পেছন ফিরে তাকালো আমাদের দিকে। আমি সালাম দিলাম। ওর চাহনিতে বুঝলাম অনেক কিছু। কিন্তু প্রকাশ কি সব করা যায়?
লোকজন সকল জমায়েত করে ফিরে যেতে হবে। আমাদের মাথা মুন্ডনের ব্যাবস্থা করে ইহরাম ত্যাগ করে ফ্রেশ হতে হবে। দল বেঁধে হাঁটা শুরু করলাম। এবার সূর্যি মামা মরুর তেজ দেখানো শুরু করেছে। এত পরিমান জমজম পান করেছি তার পরেও মনে হচ্ছে তৃষ্ণা মেটেনা। আমাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উঁচু ভবনে ঠাসা তাই চলার পথে তাপ বোঝা যায়নি। বলুক কেউ নরসুন্দর আপত্তি নেই। কিন্তু শুধু মুন্ডনের জন্য দশ রিয়াল মানা গেলনা। আমারটা তো নাই,তাই বন্ধুকে বললাম তোর লাগেজ খুলে রেজর ব্লেড বের কর।
বাথ রুমে মহা বিপত্তি। প্রচন্ড গরম পানি। কেউ গায়ে নিতে পারছে না। আবহাওয়ার সাথে টিকে থাকার জন্য এ ব্যাবস্থা। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য হট ওয়াটার সাপ্লাই। চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার দাওয়াই। গরম পানি দিয়ে গোসল না করলে আমাদের মতো দেশের মানুষের অবস্থা ওখানে বিপন্ন হতে পারে। নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা লাগার রোগ গুলো জেঁকে বসতে পারে।

বাথ রুমে মহা বিপত্তি। প্রচন্ড গরম পানি। কেউ গায়ে নিতে পারছে না। আবহাওয়ার সাথে টিকে থাকার জন্য এ ব্যাবস্থা। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য হট ওয়াটার সাপ্লাই। চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়ার দাওয়াই। গরম পানি দিয়ে গোসল না করলে আমাদের মতো দেশের মানুষের অবস্থা ওখানে বিপন্ন হতে পারে। নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা লাগার রোগ গুলো জেঁকে বসতে পারে।

আপা আমার মাথা দেখে মন খারাপ করলেন। ওরা ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। কত শত ছাত্র-ছাত্রী আর আমাদের ভাইবোনদের এ কাজ আপা করেছেন। নাকের সর্দি পরিস্কার করেছে, আপারত খারাপ লাগতেই পারে। আমি যাদের করেছি ওদেরটা একটুও কাটেনি,আপা হাসে।
ইহরাম মুক্ত আমরা। এবার ছুটলাম মোবাইল সীমের খোঁজে। আমি রোহিঙ্গা দোকানীর পাল্লায় পড়ে গচ্চা দিলাম সত্তর রিয়াল। পাশের দেশী ভাই দেখে মুচকি হাসল। অবাক হলাম এ তথ্য গুলোও আমাদের কাছে নেই। বাঙ্গালী সেজে আরবে রোহিঙ্গারা ব্যবসা দখল করে ফেলেছে। ওদের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। সৌদি রাজের প্রশ্রয়ে ওরা হয়ে উঠছে বাংলাদেশীদের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। আরব মুলুকে ও তুঘলকি!
হাজীদের জন্য বায়োমেট্রিক হজ্ব প্যাকেজ আছে। এটি আমাদের দেশী ভায়েরা জানে। আমি যখন সীম কিনি তখন পাশের দেশী ভাই দেখেও কিছু বলতে পারেনি,রোহিঙ্গাদের ভয়ে। ওরা হিংস্র। ওরা আমাদের পাসপোর্ট ব্যবহার করে আরবে বাড়ি -গাড়ির মালিক। হজ্বে ক্রোধ সংবরন করতে হবে। সামলে নিলাম।কোনমতে শুধু বাড়িতে সংবাদ টুকু দিতে পেরেছি। তারপর সীম লকড। লস করলাম প্রাশ দেড় হাজার টাকা।পরে ঐ দেশী ভায়ের দোকান থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সীম কিনি।পঞ্চাশ রিয়াল টকটাইম আর বিশ রিয়াল ইন্টারনেট। জেদ্দায় হলোগ্রাম যুক্ত ছয়টি স্টিকার দিয়েছিল এজন্যই। তখন ত কেউ এ বিষয়ে বলেনি। রোহিঙ্গার দোকানে আমরা আর যাইনি। ওর দোকান আমাদের বাড়ি সংলগ্ন হলেও কিছুই কিনিনি কোনদিন।
রাস্তায় দেশী সুইপার দেখে মর্মাহত হয়েছি বার বার। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে , কাবা থেকে বের হয়ে কবুতর চত্বরের কাছে প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে সুকৌশলে নীল পলিথিন যা দিয়ে ওরা রাস্তার আবর্জনা ফেলে ওটা সামনে ধরে কিছু চাওয়া দেখে। পুলিশের মারাত্মক হয়রানি জেনেও ক্ষুধার জন্য শুধু ওরা এ কাজ করে। আমি লজ্জিত হয়েছি। অনেক সময় বলেছি,কেন এসেছ ? দেশে তো দুমুঠো ভাত ছিল। ফিরে যাবার টাকা নাই,ওদের জবাব। আমরা জাতিগত ভাবে ব্যবসা বুঝিনা। কিন্তু আফ্রিকান মহিলারা ঝুকি নিয়ে হলেও ব্যবসা করে মক্কা নগরী তে।
আফ্রিকান মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সৌদী পুলিশ যথেষ্ট শক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু পারেনা। ওরা রাস্তায় বিভিন্ন বস্তুর পসরা সাজিয়ে সোমত্থ যুবতী নারী খামশা রিয়াল আর আশারিয়া রিয়াল বলে চিৎকার করতেই আছে চব্বিশ ঘন্টা। পুলিশ এলে মালামাল যতটুকু পারে গুটিয়ে নিয়ে ভো দৌড়।পুলিশ ওদের মালামাল ডাস্ট করে দেয়।
মক্কা নগরী পাহাড় বেষ্টিত। চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ে বৃক্ষ লতা-পাতা নেই। রুক্ষ,ধূ ধূ প্রান্তর। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পর্বত। পাহাড় কেটে কেটে বানানো হচ্ছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। আবার বেশির ভাগই অনেক উঁচু পাহাড়ের ওপরই নির্মিত হয়েছে বিশাল ইমারত। পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য, রকি। শক্ত পাথর, কালো, লক্ষ কোটি বছরেও ক্ষয়ে যায়নি। আপনার মনে হতে পারে আমিই প্রথম এখানে পদার্পণ করলাম।

মক্কা নগরী পাহাড় বেষ্টিত। চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ে বৃক্ষ লতা-পাতা নেই। রুক্ষ,ধূ ধূ প্রান্তর। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পর্বত। পাহাড় কেটে কেটে বানানো হচ্ছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। আবার বেশির ভাগই অনেক উঁচু পাহাড়ের ওপরই নির্মিত হয়েছে বিশাল ইমারত। পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য, রকি। শক্ত পাথর, কালো, লক্ষ কোটি বছরেও ক্ষয়ে যায়নি। আপনার মনে হতে পারে আমিই প্রথম এখানে পদার্পণ করলাম।

আমি বিস্ময় ভরা দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখেছি মক্কা নগরী ‘র দূর ধূ ধূ প্রান্তরের উঁচু পর্বতে রোহিঙ্গারা পবিত্র মক্কা নগরীতে বাড়ী বানিয়ে ফেলেছে! পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তম নগরীতে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ! আমাদের শ্রমিকদের দূর্দশা দেখে আমরা কান্না সংবরন করতে পারিনি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্যের বিষয় ওরা বিবেচনায় নিচ্ছে কিনা জানিনা। সৃষ্টি কর্তার অপার বিস্ময় ওরা নির্দয় ভাবে ধ্বংশ করেই যাচ্ছে বিশাল বিশাল বুল ডোজার, ক্রেইন আর রক ক্রাশার দিয়ে। বড় বড় পাহাড় গুড়িয়ে নির্মিত হচ্ছে ফাইভ স্টার হোটেল।
ইকরা বিসমে রাব্বিকাল্লাযী খালাক্। সুবহানাল্লাহ।
আজ আমাদের জাবালে নুর বা আল হেরা যাবার প্রস্তুতি চলছে। মক্কা শহরের মধ্যে ই। আমাদের বাড়ী আর কাবা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ। গাড়ি তো লাগবে। কাছে দর্শনীয় স্থান হাতে রেখে দুর থেকে শুরু করলাম। কাফেলা থেকে বাস দেয়া হলো।
(চলবে)
লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন