Ads

(ভ্রমণ কাহিনী) 

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
পর্ব-১৩
– নুরে আলম মুকতা
প্রিয় মক্কা আবার তোমার কোলে ফিরতে চাই। তোমার সাথে নাড়ীর টান অনুভব করছি। শান্তিময় মক্কা, আবার যেন ফিরতে পারি। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক শিহরন।
মিনার তাঁবু!
আমাদের বাড়ি  থেকে সাত কিলোমিটার পথ। কয়েকটি টানেলের ভেতর দিয়ে আফ্রিকান বাস চালক আমাদের রাস্তার পাশে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
কিছুই চিনিনা। চারিদিক শুধু তাঁবু আর তাঁবু। তাঁবুর শহর মিনা।
দেশী মোয়াল্লেম না আসা পর্যন্ত  অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমাদের তো তাঁবুর নম্বর সহ কার্ড আছে।
মক্কা,মিনা আর মদিনায় অবস্থান করার জন্য আলাদা আলাদা কার্ড।
খুঁজে দেখি,
আমার উদ্দেশ্য,খুঁজে পেলে আপা আর আমাদের অবস্থান পাশাপাশি হতে পারে। পরে গেলে নির্দিষ্ট তাঁবুতেই যাব। কিন্তু অবস্থান ইচ্ছে মতো হবে না।
আমাদের কার্ডে লেখা আছে Khema – 74 । আমি আর হেলাল ভাই চলে যাবার আগে সাথীদের একটি পানীয়র দোকানে সামনে রেখে গেলাম। অনেকক্ষণ খোঁজার পর আমাদের মোয়াল্লেম দেখি দাঁড়িয়ে। আনন্দিত হলাম। ধীরে ধীরে সকল সাথী ভাইবোন কে একত্রিত করলাম।
বড় বড় স্পেস। মাদুর বিছানো। বিছানা বেশ পরিপাটি। এসি সিস্টেম বিশাল হোস পাইপ দিয়ে চিলিং করা। চারিদিকের পরিবেশ মজাদার মনে হলো। ওয়াস রুম গন হলেও স্বাস্থ্য সম্মত। নারীদের জন্য আলাদা। যাযাবর জীবনের জন্য  উত্তম আয়োজন। পর্দার পাশে আপাদের রাখতে পেরে আনন্দিত হলাম। কিন্তু ওদের স্পেসটিতে এসির বাতাস যাচ্ছে না। ওখানে পাকিস্তানি এক ইলেকট্রিশিয়ানকে ঘুরতে দেখে বিষয়টি জানালাম। ওরা দ্রুততার সাথে আমাদের  অনুরোধ রক্ষা করলো।
বড় বড় স্পেস। মাদুর বিছানো। বিছানা বেশ পরিপাটি। এসি সিস্টেম বিশাল হোস পাইপ দিয়ে চিলিং করা। চারিদিকের পরিবেশ মজাদার মনে হলো। ওয়াস রুম গন হলেও স্বাস্থ্য সম্মত। নারীদের জন্য আলাদা। যাযাবর জীবনের জন্য  উত্তম আয়োজন। পর্দার পাশে আপাদের রাখতে পেরে আনন্দিত হলাম। কিন্তু ওদের স্পেসটিতে এসির বাতাস যাচ্ছে না। ওখানে পাকিস্তানি এক ইলেকট্রিশিয়ানকে ঘুরতে দেখে বিষয়টি জানালাম। ওরা দ্রুততার সাথে আমাদের  অনুরোধ রক্ষা করলো।
তাঁবুতে বয়ান চলছে,নামাজের ব্যাবস্থাও ওখানে। সময়মতো খানা সরবরাহ হচ্ছে। সব মিলিয়ে  উপভোগ্য। মসজিদ বেশ দূরে।
এখানে তো তিন চারদিন থাকার প্রস্তুতি আছে তাই বন্ধুকে সাথে নিয়ে একটু বাইরে যাই বলে বেরিয়ে গেলাম।
যেদিকে তাকাই সেদিকেই তাঁবু। সারাবিশ্বের সবচেয়ে বড় তাঁবুর শহর মিনা। আমাদের  তাবুঁ সংলগ্ন মোয়াসসারা অফিস। সৌদী রাজের পক্ষ থেকে ওরা হাজীদের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত ।
এখানে পিতা ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে স্বীয় সন্তান ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানীর জন্য নিয়ে এসেছিলেন।
আরাফার ময়দান থেকে মুজদালিফার আসার ছয় কিলোমিটারের মধ্যে ওয়াদিয়ে মুহাহসর নামক স্থানে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহার বিশাল হস্তিবহর ধ্বংস হয়েছিলো। এটি মিনা এলাকার মাঝ বরাবর। এ স্থান বাদ দিয়ে পুরো এলাকায় তাঁবু।
আবরাহার ধ্বংস স্থল দ্রুত অতিক্রম করতে হয় আর এখানে নামাজ পড়া যাবেনা,অবস্থান করাও যাবেনা।
মিনায় সৌদী রাজের একটি রাজপ্রাসাদ আছে। প্রাসাদের কছাকাছি কাউকে যেতে দেয় না।
হজ্বের মৌসুম ব্যাতীত সারা বছর  তাঁবুর শহর মিনা ফাঁকা। দেখে মনে হবে ব্যাপক কোলাহল পূর্ন শহর। কিন্তু পাঁচ বা ছয়দিনের জন্য। হজ্বের শেষে নগরের দরজা এক বছরের জন্য বন্দ হয়ে যায়। আবার খোলা হয় পরবর্তী  জিলহজ্ব মাসের সাত তারিখ বিকালে ।
তিনটি জামারা বা শয়তানকে পাথর মারার জন্য অনেকগুলো রাস্তা। পাহাড় কেটে কেটে টানেল বানানো হয়েছে। এত বড় বড় টানেল পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পাহাড় কেটে টানেল না বানালে পথ দূর্গম আর বাঁকা  থেকে যেত।
বহু দূর থেকে নেয়া আমাদের ৭৪ নম্বর তাঁবুর ছবি
আফ্রিকান যুবকেরা পাঠাও এর মতো করে মোটর বাইকে রিয়ালের বিনিময়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো লিফট দেয়। সব দেশের কারেন্সী ওরা নিয়ে নেয়। বিনিময় সহজ। সবার কাছে টু স্ট্রোকের  সুজুকি মোটর বাইক। এত স্পীডে টানে যে বসে থাকা মুশকিল। সবার জেনে রাখা ভালো ওরা পারমিটেড রুটের বাইরে যেতে পারবে না। পারমিশন টি কতদূর পর্যন্ত আর আমাদের গন্তব্য কোনপথে আমরা তো জানিনা। আমাদের আরো সমস্যা হলো ওরা  আঞ্চলিক আরবী ,উর্দু আর হিন্দি বোঝে। বাংলা বোঝে শুধু পাঁচ বা দশ রিয়াল এদুটো  শব্দ। আর কিছুই  না। আপনি যখন কোথাও যেতে চাইবেন বাইক বা গাড়ী যাই হোক ওরা তুলে নেবে। কিছুদূর যাবার পর নামিয়ে  দিয়ে আর যাবে না। কিছু চেনাও যাবেনা। গাড়ির ড্রাইভারের এমন আচরনের সাথে আমরা পরিচিত নই। একদম উগ্র। আমরাতো সবাই হজ্বে গিয়েছি। কলহের জন্য নয়। এ সুযোগটি ওরা শতভাগ কাজে লাগায়। জোর করে বেশী ভাড়া চাইবে আর খুব তাড়াহুড়ো করবে। কারন হলো আপনার প্রতি ও অন্যায় করছে। আপনার গন্তব্য পর্যন্ত ওর পারমিট নেই। পুলিশ যদি চলে আসে তবে ওর নিশ্চিত কারাবাস। আমি একটি বিষয়  খেয়াল করেছি বাংলাদেশী আর ভারতীয় ছাড়া ওদের গাড়িতে কেউ ওঠে না। বাঁকী বিশ্বের লোকজন শারিরীক ভাবে সক্ষম।  ওরা হাঁটতে পারে।
হাঁটতে না পারলে হজ্ব করা কষ্টকর। কেউ কেউ হিসেব করেছেন , এখানে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রায় একশো কিলোমিটার হাঁটা লাগে। কেউ যদি হেঁটে হেঁটে হজ্বের সমস্ত কাজ সারতে চান তবে একশত তিরিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। যারা আংশিক গাড়ী ব্যবহার করে তাদেরও হাঁটতে হবে। এখানে পায়ে চলার বিকল্প নেই। আমরা হিসেব করিনি, করাও যায়না।
পাহাড় কেটে অসংখ্য টানেল বানানো হয়েছে। লম্বা আর প্রশ্বস্ত। আপ-ডাউন ওয়ে।  টানেলগুলোতে প্রচুর বৈদ্যুতিক আলো, ফ্যান আর এসি লাগানো। টানেলের ফুটপাথেও আমি অনেক মানুষ কে বিশ্রাম  নিতে দেখেছি। মাঝে মাঝে আমরাও শুযে বসে বিশ্রাম নিয়েছি।
মিনায় হজ্ব পর্যন্ত ইহরাম ছাড়া সবাই সৌদী রাজের কর্মচারী।
আরাফার ময়দানে সূর্য অস্তমিত হলো। বিমান আর হেলিকপ্টারের শব্দ থেমে গেল। ধীরে ধীরে সবাই মুজদালিফার রাস্তায় হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। আমাদের তাঁবু রাস্তার ধারে হওয়ার জন্য হাজীদের চলে যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে পারছি।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বিশাল ময়দান শূন্য হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
আমরা যারা গাড়ির অপেক্ষায় আছি তারা রয়ে গেলাম। অন্ধকারে আলো নেই। কাফেলার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বল্প আলোর ব্যবস্থা। মক্কা-মদিনা -মিনায় তো অন্ধকার দেখিনি। বহুদিন পর আঁধার দেখছি। অনেকেই বিরক্ত হয়ে উঠছে। কিন্তু উপায় তো নেই। হাঁটতে পারলে মানুষের সাথে চলা শুরু  করলেই হয়। কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছানো যাবে। দশ কিলোমিটার পথ।
সারাদিন বয়ান করে মাওলানা ক্লান্ত।গল্প জুড়ে দিয়েছি মাওলানার সাথে। আমাদের বাংলাদেশের এক প্রখ্যাত মাওলানা। হাশরের মাঠে বসে উনার সাথে বাহাস করছি
আপা শুনে মুচকি হাসছেন।
(চলমান)
লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন