Ads

মহীয়সীর কথোপকথন 

কথন’২০২০

– নুরে আলম মুকতা

(হিমশীতল রাত। শিরশিরে হাওয়া বইছে। ঘরের বাইরে বেরোনো যাচ্ছে না। হিমালয়ের সমস্ত হিমেল বাতাস যেনো উত্তরের জনপদ কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সামান্য শব্দও জোরে আরো বিকট শোনা যাচ্ছে)

গিন্নিঃ দেখো খানা ঠান্ডা হয়ে গেলে আর আমি গরম করতে পারবো না। রোজ রোজ খানার সময় হলেই তোমাদের অজুহাত শুরু হয়। সারাজীবন গেলো ডাকতে ডাকতে। খেয়ে বাবা যা ইচ্ছে করো। আমি ঘুমাই। তোমরা বাপ বেটি সারা রাত জেগে যা ইচ্ছে করো।

আমিঃ আর একটু ভাই। এই আর দুমিনিট প্লিজ।

গিন্নিঃ তোমার দুমিনিট কতক্ষণে হয় (অগ্নিমূর্তি)

মেয়েঃ আম্মু, আব্বা তো তোমাদের গ্রুপেরই লোক। ক্ষান্ত হও বাছারা আমার।

ছেলেঃ চলো আম্মু, আমরা শুরু করি আব্বু চলে আসছে।

(ইতিমধ্যে একজন সম্মানিত লেখক মেসেঞ্জারে প্রশ্ন করেছেন। আমি ভারতীয় দর্শনের বইটি পাশে সরিয়ে রেখে ফোনটি হাতে নিলাম। ঘরে কেউ নেই। কিচেনের টুংটাং শব্দ আমাকে বার বার পীড়া দিচ্ছে)

লেখকঃ আপনি আমার লেখাটি রিপোস্ট করতে বলেছেন। ছবিটি কেন তুলতে বলেছেন, কেন কেন কেন?

লেখকঃ আপনি কিন্তু মেসেজ দিয়ে উত্তর দিতে কালক্ষেপণ করছেন।

আমিঃ (ফোনটি হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবছি। বিবেকের দায়বদ্ধতার কাছে পরাজিত হলাম। বললাম),  দেখুন আপা আমরা লেখার বিষয়ে গুরুত্ব বেশি দিই। আপনার লেখাই তো কথা বলছে। ছবি দেয়ার ইচ্ছে হলে আপনি শুধু ছবি পোস্ট করুন। আমরা প্রানভরে উপভোগ করি।

লেখকঃ প্রাণভরে মানে
কি বলছেন? যা তা।

আমিঃ যা তা আমরা ইচ্ছে করলেও বলতে পারি না। সীমাবদ্ধতা আছে ভদ্রতার।

লেখকঃ ছবিটি আমার খুবই প্রিয়।

আমিঃ তবে লিখলেন কেন আপা? আপনার লেখাটি একজনকেও যদি সচেতন করে ওটা মাথায় রেখে সম্মান করে আমি মেসেজ দিয়েছি।

লেখকঃ তাহলে অন্য গ্রুপ ছবি সহ লেখাটি এ্যাপ্রুভ করলো কেন?

আমিঃ ওটা যার যার দৃষ্টিভঙ্গী।

লেখকঃ আপনি কি বোঝাতে চাইছেন?

আমিঃ আমরা সকল ধর্মের প্রতি দারুন সহনশীল আর আমি নিজে একজন মুসলিম আপা। সহনশীলতা আমার ধর্ম।

লেখকঃ তাহলে ছবিটি কি অপরাধ করলো?

আমিঃ ইসলামী ধর্মীয় গুরুর ছবির চেয়ে কি উনার মতামতটি গুরুত্বপূর্ণ নয়?

লেখকঃ ছবিটি আমার খুবই প্রিয়।

আমিঃ হতে পারে। কিন্তু ওটা আপা আমরা নিরুৎসাহিত করি।

লেখকঃ আপনাকে স্বসম্মানে আমি উৎসাহিত করেছি এবং আপনি একজন মহীয়সী।

লেখকঃ আপনি মহীয়সীর কে?

আমিঃ মহীয়সী সম্পাদনা পরিষদের একজন অধম মুখপাত্র আপা।

লেখকঃ নিজেকে অধম বলছেন কেন?

আমিঃ নিজের মাপকাঠিতে উত্তম মনে করতে পারিনা আপা।

লেখকঃ তাহলে মহীয়সীর মুখপাত্র!এডমিন ট্যাডমিন না।

আমিঃ ট্যাডমিন না আপা। এডমিন তো বড় পোস্ট। হলে হতেও পারে।

লেখকঃ আজ জানলাম। গ্রুপের একজন মুখপাত্র থাকে।

আমিঃ আপা কথা তো কেউ বলবে, তাই একজন বলছি।

লেখকঃ ও ও তাহলে আর কেউ এ্যাপ্রুভ করলে আমার লেখাটি ছবি সহ যাবে?

আমিঃ যথেষ্ট রাত হয়েছে আপা। এখন আর কেউ এ্যাক্টিভ আছেন কিনা জানি না। তবে কেউ টিপে দিলে আমি আর কি করবো?

লেখকঃ রিপোস্ট করলাম।

আমিঃ করুন। কিন্তু মহীয়সী কে বিতর্কিত করবেন না আপা প্লিজ। ওটা বিতর্কিত ছবি।

লেখকঃ ছবিটি আমার প্রিয়।

আমিঃ তবে লেখাটি বাদ দিন।

লেখকঃ কেন লেখা বাদ দেবো?

আমিঃ আপনি তো বললেন, ছবিটি আপনার প্রিয়।

লেখকঃ না না, লেখা বাদ দিলে ছবিটি কেউ বুঝবে না।

আমিঃ আপা, আমি আশা করছি আপনি আমাদের মেসেজ বুঝেছেন।

(ততক্ষণে একঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে। লেখাটি রিপোস্ট আসেনি। বাড়ি নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে। রাতের খানা হিমশীতল রাতের মতো হিম হয়ে গিয়েছে। ক্ষুধা ফুরিয়ে গিয়েছে। কিচেনে ঢুকে খাবার অভিনয় করে কিছু থালা বাসনের শব্দ করে বেরিয়ে এলাম। যথারীতি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম, মেসেঞ্জারে নোটিশ উঁকি দিচ্ছে)

লেখকঃ আমি ভেবে দেখলাম, ছবিটি ছাড়াই লেখাটি যাক। কারো সচেতনতা বাড়ানোর জন্য লেখাটিই যথেষ্ট।

আমিঃ আমরা শালীনতার সাথে মুক্তবুদ্ধি আর বাংলা ভাষা সাহিত্যের চর্চা করি। মহীয়সী র গর্ভজাত সন্তান আমরা। কাউকে আঘাত করতে পারি না।

লেখকঃ আমি আপনাকে বছরের শেষ রাতে অনেক বিরক্ত করলাম। মনে কিছু করেন নি তো?

আমিঃ মনে তো অনেক করেছিলাম আপা। কিন্তু মননশীলতা পরিহার করতে পারিনি তাই আপনার কাছে ক্ষমা চাই।

লেখকঃ কি করলেন? আপনি ক্ষমা চাইলেন কেন?  আমাকে চাওয়ার সুযোগ দিলেন না!  হায় হায়!

আমিঃ আপনাকে বোঝাতে পেরেছি এজন্য নিজেকে ধন্য মনে করছি।

লেখকঃআপনার জন্য নতুন বছরের শুভকামনা

আমিঃ আপনার জন্য দীর্ঘ আর সুস্থ জীবন কামনা করছি আপা। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

(৩১.১২.২০২০ এর মধ্যরাত)

নুরে আলম মুকতা,কবি,সাহিত্যিক,অনুবাদক ও সহ-সম্পাদক,মহীয়সী।

আরও পড়ুন