ডা.জোবায়ের আহমেদ
আজকে চেম্বারে ফলোয়াপে এসেছিলেন মনির সাহেব।মনির সাহেবের ব্রেন স্ট্রোকের জন্য শরীরের বাম পাশটা অবশ।সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ আছে।অনেক দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।প্রতিবার চেম্বারে আসলে উনার স্ত্রী উদগ্রীব হয়ে নানা প্রশ্ন করেন।বারবার জানতে চান তিনি কি আর পুরোপুরি সুস্থ হবেন কিনা?আবার আগের মত সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারবেন কিনা?অনেক সচেতন একজন নারী তার পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্বামীর প্রতিটি মেডিসিন বুঝে নেন যত্ন করে।আমি কখনোই বিরক্ত হইনা।উনাকে আশা জাগানিয়া কথা শুনাই।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি মনির সাহেবের স্ত্রীর উনার স্বামীর জন্য মায়াটা।হাত ধরে ধরে হাঁটিয়ে নিয়ে আসেন স্বামীকে চেম্বারে।
মনির সাহেবের মুখেও শুনি স্ত্রী কতটা যত্ন নিচ্ছেন সেখবর।মাত্র ৪২ বছর বয়সেই মনির সাহেব অচল হয়ে গেলেন।আগে বিদেশে ছিলেন।।সেখানেই স্ট্রোক করেন।তারপর দেশে ফিরে আসেন।
এমন দায়িত্বশীলা,যত্নবতী স্ত্রী না থাকলে মনির সাহেবেরজন্য এই জীবনটা টানা কঠিন হয়ে যেতো।একজন নারী একদিকে সংসার ও বাচ্চা, অন্যদিকে অসুস্থ স্বামীর দেখভাল একা সামলাচ্ছেন বিরক্তি ছাড়া।
আমি শুধু ভাবলাম, এমন নারীরা না থাকলে পুরুষদের জন্য এই দুনিয়া নরকে রুপান্তরিত হয়ে যেতো।ভালবাসার মানুষকে বিপদের দিনে,অসুস্থতায়, অচল অবস্থায় যেই নারী পরম মমতায় এক সমুদ্র মায়া নিয়ে দেখেশুনে রাখছেন, তা কতবড় দায়িত্ব পালন অনুভব করতে পারি কয়জনে?
আমি নিয়মিত রোগী দেখার পাশাপাশি মানুষের জীবন দেখি।অনেকের স্বজনদের প্রতি যেমন অবহেলা ও উদাসীনতা দেখি,আবার কারো কারো স্বজনের প্রতি এত ভালবাসা ও যত্ন দেখে মনটা খুশিতে আপ্লুত হয়ে উঠে।স্বামীর কামাই নেই এখন।তিনি অচল,অবশ,স্থবির।তিনি অসহায় ও মুখাপেক্ষী।
এমন মানুষকে যিনি বোঝা না ভেবে যত্ন নিচ্ছেন আগলে রাখছেন, তার জন্য শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।।
লেখকঃ চিকিৎসক ও কলাম লেখক