Ads

মুভি রিভিউঃ ওপেনটি বায়স্কোপ (স্পয়লার এলার্ট)

রাজু আহমেদ

মুভিঃ  ওপেনটি বায়স্কোপ (স্পয়লার এলার্ট)
পরিচালক-অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
অভিনয়ে-ঋদ্ধি সেন, সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, সোহিনী সরকার, রজতাভ দত্ত, পরান বন্দোপাধ্যায়, কৌশিক সেন ও আরো অনেকে
দৈর্ঘ্য- ২ ঘন্টা ১৭ মিনিট
মুক্তি – 2০১৫ সালের ১৫ জানুয়রি

পুরাতন কলকাতার শরৎচন্দ্র বাইলেনে বসবাস করা একদল মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার গল্প। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ফোয়ারা’ নামক এক দূরন্ত কিশোর।তার নানা স্বপ্ন, প্রেম আর অনেক প্রথম অভিজ্ঞতাকে সেলুলয়েড বন্দি করার ফন্দি করেছেন পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যয়।সিনেমার শুরুতে ‘ফোয়ারা’ বোর্ডিং স্কুল থেকে মারামারি করে বহিস্কৃত হয়ে তার বিধবা মায়ের কাছে ফিরে আসে । যে মা রুটিরুজির তাগিদে কাজ করে স্থানীয় নেতার মানসিক অসুস্থ স্ত্রীর সেবিকা হিসেবে। এই সুযোগে অনিচ্ছা সত্বেও দুশ্চরিত্র নেতার সাথে তার মায়ের একধরণের অবৈধ সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।এই নিয়ে মা-ছেলে সম্পর্কের দোটানা সৃষ্টি হয়।
কিশোর ফোয়ারা রকে বসে বন্ধুদের সাথে গুলতানি করে সময় পার করে।এরই মাঝে পাশের ফ্ল্যাটের কিশোরী কেড়ে নেয় ফোয়ারার হৃদয়।এই নিয়ে ফোয়ারার সাথে তার বন্ধুর দ্বন্দ তৈরি হয়।এই দ্বন্দ মিটার আগেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘কবচ’ কর্তৃক পরিচালিত ঝড়েপড়াদের বাচ্চাদের স্কুলের বার্ষিক ফাংশনে স্থানীয় যুবনেতার বোমার আঘাতে মারা যায় ফোয়ারার বন্ধু।তারপর নানা ঘটনা প্রতিঘটনায় স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের সাথে যুবনেতার নেতৃর্ত্বাধীন ক্লাবের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হলে পাড়ার নেতা সিদ্ধান্ত দেন দুই পক্ষের মধ্যে ফুটবল ম্যাচ হবে। যারা জিতবে তাদের প্রতিষ্ঠান থাকবে অন্যটা বন্ধ করে দিতে হবে।
প্রথমে ফোয়ারা খেলতে রাজি না হলেও পরবর্তীতে সে কবচের অধিনায়কত্ব করে এবং তার পিতাকে মনে করিয়ে দেওয়া দূর্দান্ত খেলা উপহার দিয়ে হারিয়ে দেয় প্রতিপক্ষে ইস্পাত ক্লাবকে।
এরপর ফোয়ারা তার মা,বন্ধুবান্ধব,প্রিয় পাড়া ছেড়ে পড়াশোনার জন্য আবার হোস্টেলে চলে যায়। অনেক অনেক বছর পর কিশোর ফোয়ারা পরিপূর্ণ যুবক হয়ে পাড়ায় ফিরে আসে তার মাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু মা ‘কবচ’কে ছেড়ে, পাড়াকে ছেড়ে যেতে অস্বীকার করে। ফোয়ারা মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে পা বাড়ায়। পথিমধ্যে পূর্বতন প্রেমিকার স্মৃতিও সময়ের স্রোতের কাছে হার মেনে যায়। ফোয়ারা ফিরে চলে তার নতুন ঠিকানায়……
সংক্ষেপে এই হচ্ছে ‘ওপেনটি বায়স্কোপ’ সিনেমার গল্প। গত শতাব্দীর ৮০-৯০ এর দশকে কলকাতায় পাড়াকেন্দ্রিক যে সামাজিক জীবন গড়ে ওঠেছিল তা স্বার্থকভাবে চিত্রায়িত হয়েছে এই সিনেমায়।পাড়ার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দৈনন্দিন জীবন নিখুঁতভাবে ওঠে এসেছে পর্দায়। আর ফোয়ারারূপী ঋদ্ধি সেন, তার বন্ধুদের সাপোর্টিং রোল প্লে, পাড়ার ওঠতি নেতার চরিত্রে বিশ্বনাথ বসু, ফুটবল কোচের ভুমিকার রজতাভ দত্তের অভিনয় ছিল দূর্দান্ত।
গত এক দশকে ভারতীয় বাংলা সিনেমার যে বাঁকবদল তার অনুপম নিদর্শন ব্যান্ড দল চন্দ্রবিন্দুর সদস্য অন্যতম অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক প্রথমবারের মত পরিচালিত এই সিনেমা। এই সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন চন্দ্রবিন্দুর আরেক সদস্য উপল সেনগুপ্ত ফলে দর্শক শ্রোতা পুরাতন চন্দবিন্দুর আমেজ টের পাবেন পুরোপুরি। ছেলেবেলাকে মনে করিয়ে দেওয়া এই দৃষ্টিনন্দন চমৎকার গল্পের সিনেমা দর্শক একবার দেখতে আরম্ভ করলে এক বসায় শেষ না করে ওঠতে পারবেন না।

লেখকঃ কলামিস্ট

আরও পড়ুন