Ads

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক  ভ্রমন কাহিনী পর্ব-১০

– নুরে আলম মুকতা

সূর্যের আলো দেখতে পাচ্ছি। আমার শিয়রে মা জননী বসে আছে। মায়ের কোন জাত-পাত নেই,দেশ নেই,সীমা-পরিসীমা নেই। মা অকৃত্রিম, মা পবিত্র। সারা বিশ্বের অন্তত পাঁচটি দেশের মা এর সাথে কথা বলেছি। সবাই একই রকম। মা এর কোন ভেদাভেদ নেই। উঠে বসলাম।
মা মাথায় হাত দিলে আর অশ্রু  সংবরন করতে পারলাম না।
আপার কথা মনে হতেই মা এর কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিলাম। দ্বিমাত্রিক ভালোবাসা  বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। এ ঋণ অপরিশোধ্য। আমার মাকে আর কোনদিন দেখবনা যেমন,এ পৃথিবীতে  এই জননীকে ও তো আর কোনদিন দেখবনা।
আপা তো হেলাল ভাইয়ের  হেফাজতে তাই স্বস্তি। কিন্তু আমার জন্য আপার অবস্থা  চিন্তা করে প্রায় দৌড়ে নির্দিষ্ট  স্থানে গিয়ে দেখি
ওরা নাই। কিছুক্ষণ বায়তুল্লাহর চারিদিকে হাঁটলাম। আমি জানি এভাবে  খুঁজে ফেরা একদমই  বোকামী। তাও কেন যেন হাঁটলাম। কুড়ি দিন ধরে তো একাজ করছি কিন্তু আজ একটু তৃপ্তি ভরেই হাঁটছি। খেই হারিয়ে ফেলছি। সাথে আমার ব্যাগ পানির বোতল,স্যান্ডেল জুতা কিছুই নেই। নগ্ন শরীর,নগ্ন পা। শুধু ট্রাউজার। নিজের দিকে দেখলে অাদিম আদিম মনে হচ্ছে। আমি নিঃস্ব,রিক্ত। নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছি। এরকম বৈধ উপভোগ্য ঘটনা শুধু মক্কা আর মদীনা শহরেই সম্ভব।
আপা তো হেলাল ভাইয়ের  হেফাজতে তাই স্বস্তি। কিন্তু আমার জন্য আপার অবস্থা  চিন্তা করে প্রায় দৌড়ে নির্দিষ্ট  স্থানে গিয়ে দেখি
ওরা নাই। কিছুক্ষণ বায়তুল্লাহর চারিদিকে হাঁটলাম। আমি জানি এভাবে  খুঁজে ফেরা একদমই  বোকামী। তাও কেন যেন হাঁটলাম। কুড়ি দিন ধরে তো একাজ করছি কিন্তু আজ একটু তৃপ্তি ভরেই হাঁটছি। খেই হারিয়ে ফেলছি। সাথে আমার ব্যাগ পানির বোতল,স্যান্ডেল জুতা কিছুই নেই। নগ্ন শরীর,নগ্ন পা। শুধু ট্রাউজার। নিজের দিকে দেখলে অাদিম আদিম মনে হচ্ছে। আমি নিঃস্ব,রিক্ত। নিজেকে সমর্পন করে দিয়েছি। এরকম বৈধ উপভোগ্য ঘটনা শুধু মক্কা আর মদীনা শহরেই সম্ভব।
নিঃস্ব পথিক হেঁটে চলেছি মুহম্মদ (সাঃ) এর হিজরাহ রোড ধরে। কেউ কারো পানে নিবিষ্ট  চিত্তে তাকায় না। সবাই ব্যাস্ত,সৃষ্টি কর্তার সান্নিধ্য লাভের জন্য। আপাদ মস্তক আবৃত এক মহিলা একটি আমার হাতে একটি  প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো হনহনিয়ে। মনে হলো ওর সময় নেই কোনদিকে তাকানোর। খেজুর,পানি আর কয়েকটি জুস প্যাক। রাস্তার ধারে বসে আছি। দেশে এরকম অবস্থায় বসলে নিশ্চিত পাগল বলত। এখানে সবাই পাগল। আল্লাহর পাগল। আমিত্ববোধ  নেই। শক্তি আর সম্পদের  বাহাদুরি নেই। তুমি যেই হও,
আদম সন্তান ছাড়া কোন পরিচয় নেই কারো।
অবনত মস্তকে দাঁড়াও।
আমি আজ মনে হয় আমিত্বের শৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছি,
সবাই আমাকে সাহায্য করছে কেন?
নিঃস্ব,দরিদ্র যে, তার দিকেই তো মানুষ  হাত বাড়ায়।
দূর পাহাড়ের দিকে তাকালাম। মনে হলো ওরা আমাকে ডাকছে,
চলে এসো,বুকে আশ্রয়  নাও। তোমাদের জন্য সহস্রকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
আফ্রিকান এক ভাই কে ইশারায় ডাকলাম, চলে এলো। ইতিমধ্যে  জমাকৃত প্যাকগুলো দিয়ে দিলাম। ও বললো…আলহামদুলিল্লাহ
পুলিশ এসে এক ঝটকায় ফুটপাথ পরিস্কার করে গেল। আফ্রিকান মেয়েগুলো কে কোন গলিতে লুকিয়ে গেল। আমি আর এক উজবেকিস্তানের মহিলা বসে রইলাম। দুজনকে খেজুর আর পানি দিয়ে গেল পুলিশ, মাথায় জলের স্প্রে দিল। খেজুরের চাইতে জল স্প্রে টাকেই প্রান জুড়ানো মনে হল।
কত বেলা হয়েছে বুঝতে পারছি না।
মহিলাকে ইশারায় বললাম,সময় কত? ও আমার মুখের সামনে এমন করে ওর গলায় ঝুলানো ঘড়িটি ধরলো,চোখ ফিরিয়ে নিলাম,ও খিলখিলিয়ে হেসে ফেললো।
সামনেই আমাদের বাড়ি। বসার ইচ্ছে ছিল আরো কিছুক্ষন। কিন্তু  বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। জোহরের  আজান শোনা যাচ্ছে।
এখানে একটি কথা বলে রাখি।
সৌদি  রাজ বড় দুটি মাযহাব কে সমন্বয় করেছে। এজন্য প্রথম যারা আসবেন তারা একটু বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রতি ওয়াক্তের সময় আমাদের  চেয়ে একটু করে এগিয়ে আছে এখানে। এজন্য নামাজের জামাত ধরার ক্ষেত্রে  প্রথম  দিকে সমস্যা  হবে। জোরে কেরাত পড়ার সময় সুরা ফাতিহার শেষে জোরে আমীন চালু ওখানে। হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) নির্দেশ ওরা পালন করছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি  নয়।
সৌদি  রাজ বড় দুটি মাযহাব কে সমন্বয় করেছে। এজন্য প্রথম যারা আসবেন তারা একটু বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রতি ওয়াক্তের সময় আমাদের  চেয়ে একটু করে এগিয়ে আছে এখানে। এজন্য নামাজের জামাত ধরার ক্ষেত্রে  প্রথম  দিকে সমস্যা  হবে। জোরে কেরাত পড়ার সময় সুরা ফাতিহার শেষে জোরে আমীন চালু ওখানে। হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) নির্দেশ ওরা পালন করছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি  নয়।
বিশ্বের অনেক মুসলিম, চারটি মাযহাবেই একই জামাতে নামাজ পড়ছে। ভিন্নতা কিছু আছে।থাকুক। কেই কাউকে কিছুই বলেনা। মন্তব্য ও করে না।
শাফেয়ী, মালেকি, হানাফি, হাম্বলী (রঃ) সবাই এক কাতারে। এক জায়গায় সবাই মিলিত হয়েছে,তা হলো একেশ্বর  নিরাকার আল্লাহ কে সেজদাহ ।
আপার দরজায় দাঁড়িয়ে জোরে সালাম দিলাম। মূহুর্তের  মধ্যে  দরজা খুলে  জড়িয়ে  ধরল।
আপা কাঁদছে আমিও কাঁদছি। কপালে চুমু দিয়ে বলল,
আমি কষ্ট  পাই এরকম কাজ আর করিসনা ভাই। যদি করিস,আমাকে না জানিয়ে করিস।
আমি মাথা নিচু করে রইলাম।
রুমে গেলে হেলাল ভাই জড়িয়ে  ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল।  আমার প্রায় দুদিনের খানা জমা হয়ে আছে। ওগুলো আর খাওয়া যাবে না।
রুমের সবাই যেন দমবন্দ অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল । আমি ফিরে এসেছি,স্বস্তি বোঝা যাচ্ছে সবার মানসিকতায়।
আপা শপিং এরিয়া ঘুরে বেড়াবে বলে আমাকে জানিয়েছে। বিশাল বিশাল শপিং মল। কিন্তু ফুটপাতের গুলোও কম না। বিশাল পন্যের সমাহার। হজ্ব যাত্রীদের যা যা প্রয়োজন  আর স্যুভেনির সব পন্য সুলভ।
আমাদের দেশী প্রবাসীদের দোকান খুবই  কম। ভারতীয়,পাকিস্তান  আর আফগানদের দখলে সব ব্যাবসা।  আমাদের বাড়ির নীচ থেকেই শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে অদূরে এক আফগান ভাইয়ের দোকানে আটকে গেলাম।
আমাদের দেশী প্রবাসীদের দোকান খুবই  কম। ভারতীয়,পাকিস্তান  আর আফগানদের দখলে সব ব্যাবসা।  আমাদের বাড়ির নীচ থেকেই শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে অদূরে এক আফগান ভাইয়ের দোকানে আটকে গেলাম।
কাবুলিওয়ালা হাম্মাদ!
দোকান মুলত জায়নামাজ, কম্বল আর কার্পেটের। কিছু মনোহরী সামগ্রী ও আছে। তসবীহ আছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম।
বন্ধুর কথা মনে হলো। দোস্ত একটি দোকানে দাঁড়িয়ে  না থেকে একটু যাঁচাই করে নিও। রিয়াদ থেকে মামাত ভাই তো পরামর্শ দিয়েই চলেছে। তাই আবারো কিছু দোকান দেখে নিলাম। আমাদের চাহিদা কিছু জায়নামাজ, টুপি,হিজাব,বোরখা এগুলো। আমরা এরাদা করেছিলাম পবিত্র মাটি থেকেই নেব। কিন্ত মুহম্মদ ( সাঃ) নির্দেশ টি মাথায় রাখতে হবে। তিনি উম্মতদের নির্দেশ করেছেন, তোমরা হজ্বে এলে আমার সাথে দেখা কোরো, ” আমার সাথে সাথে আবু বকর রাঃ আর হযরত উমর রাঃ দের তোমাদের সালাম পেশ কোরো আর মদীনা শহরে কিছু সওদা কোরো। “
লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন