Ads

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক 

(ভ্রমণ কাহিনী, পর্ব-১২)
– নুরে আলম মুকতা
একদিন আপা আর আমাকে কোনমতেই নির্দিষ্ট গেট দিয়ে প্রবেশ করতে দিলোনা পুলিশ। পরে শুনলাম অদুরে এক নারী হঠাৎ প্রাকৃতিক নিয়মের শিকার হয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন। মিনায় চলে যাবার আগে বায়তুল্লায় হাজিরা দিচ্ছি। আগের চেয়ে ভীড় শতগুনে বেড়ে গিয়েছে।
হজ্বের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সারা বিশ্বের মানুষ সমস্বরে  লাব্বাইক বলে আল্লাহর সান্নিধ্য  প্রার্থনা করছে। শরীরে কাঁপন ধরে যাচ্ছে।
আপা সহ পুরো দল দ্বোতলায় চলে যেতে চাইলে আমরা এসকেলেটরের কাছে সিরিয়ালের জন্য দাঁড়ালাম। সহজেই পেয়ে গেলাম। একদম শেষ মাথায় গিয়ে আপা আর এক বোন পা পিছলে পড়ে গেলো। আমি ধরে রাখতে ব্যার্থ হলাম। আল্লাহু আকবার বলে সজোরে চিৎকার করলাম। নিচে এক জোড়া ভিনদেশী শ্বেতাঙ্গ যুবক-যুবতী ওদের আস্তে করে কোলে তুলে নিলো।সুবহানাল্লাহী অবি হামদিহি। বিস্ময় কর!
যত দ্রুত সম্ভব আমি আর টুটুল নিচে নেমে শুশ্রূষা দেয়ার চেষ্টা  করলাম।
পড়ে যাবার সময় আল্লাহর ঘর দেখেছি ভাই,ব্যাথা পায়নি। আপা বললো। ঐ যুগলের জন্য আমাদের প্রার্থনা,
আপনারা যেখানেই থাকুন,ভালো থাকুন।
জিলহজ্বের সাত তারিখ বিকাল তিনটায় আমাদের ইহরাম বেঁধে মিনা অভিমুখে চলে যেতে হবে।  কিছু ওষুধপত্র, যেগুলো একদম জরুরী,আরেক সেট ইহরাম,একটি বেডসীট নিলাম। একটি ঝোলা ব্যাগে রুমের চাবি আর সমস্ত টাকা নিয়ে নিলাম। বিমানের টিকিটও নিলাম। ভাইবোনের একটি ব্যাগে সব জমা করলাম।
ইহরাম অবস্থায় কিয়ামতের মাঠে আল্লাহর কাছে নিজেকে তো সমর্পন করতেই যাচ্ছি। পিছুটান দিয়ে লাভ নেই। জীবনের যা কিছু অবশিষ্ট রইলো,থাক। আল্লাহ হাফেজ, মায়াময় পৃথিবী তোমায় সালাম।
জিলহজ্ব মাসের সাত তারিখে আমাদের মিনার তাবুতে চলে যেতে হবে। সময় ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে। তাই সবার মধ্যে  এক ধরনের তাড়া আর টেনশন কাজ করছে। একটি হুইল চেয়ার কিনলাম আপার জন্য। চায়নীজ। পাশের বাড়ির মহিলা ব্যবসা করে সেকেন্ড হ্যান্ড চেয়ারের। মালেক সহযোগিতা করলো। আমি নিজে গিয়ে বেছে নিলাম। দাম নিলো মাত্র সত্তর রিয়াল। প্রায় নতুন। আপা খুশি। আরো কয়েকজন কিনতে চাইলো কিন্তু ঠেলবে কে?

জিলহজ্ব মাসের সাত তারিখে আমাদের মিনার তাবুতে চলে যেতে হবে। সময় ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছে। তাই সবার মধ্যে  এক ধরনের তাড়া আর টেনশন কাজ করছে। একটি হুইল চেয়ার কিনলাম আপার জন্য। চায়নীজ। পাশের বাড়ির মহিলা ব্যবসা করে সেকেন্ড হ্যান্ড চেয়ারের। মালেক সহযোগিতা করলো। আমি নিজে গিয়ে বেছে নিলাম। দাম নিলো মাত্র সত্তর রিয়াল। প্রায় নতুন। আপা খুশি। আরো কয়েকজন কিনতে চাইলো কিন্তু ঠেলবে কে?

আরাফার ময়দান আর শয়তানকে পাথর মারার সময়ের জন্য প্রস্তুতি। ওখানে হাঁটতে হবে অনেক। আপাকে এ বিষয়ে কিছু জানাচ্ছি না।
একদিন সকাল বেলা আমাদের  এলাকার একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এলেন আমাদের  বাড়ি বেড়াতে। আমাদের  অবস্থান আর খানার ব্যবস্থাপনা দেখে বেচারা বিস্ময় প্রকাশ করলেন! নিজেদের পরিস্থিতি বর্ননা করতে গিয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা। আলাদা কাফেলায় গিয়েছিলেন।  পাহাড়ের ওপরে বাড়ি। ওঠা-নামা করা ভীষন কষ্টকর।বাড়ির ভেতরের ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। এসি প্রায় সময় নষ্ট  হয়ে থাকে, খানার বন্দোবস্ত  ছিলোনা। দূর থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসতে হত বায়তুল্লায়। নিদারুণ কষ্টে ছিলেন। আমরা যথাসাধ্য আপ্যায়ন করলাম। সান্তনা দিলাম।
মন খারাপ হয়ে গেল। এবাদত আর ভ্রমন দুটো স্বাভাবিক ভাবে না এগোলে হজ্ব জটিল। খানা আর বাসস্থান ভালো না হলে দূর্ভোগের শেষ থাকে না। এখানে ব্যালটি, নন ব্যালটি আর কাফেলার বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধানের অবকাশ রেখেই তবে আসা উচিত। আমি আমার দেশী ভাইদের আরো দূর্দশা  দেখে কষ্ট বাড়িয়েছি।
আমরা বাসস্থান আর খানার বিষয়ে একদম ভাবিনি। কখনও কখনও কিছু সমস্যা ছিলো, যেগুলো নিজেরাই ম্যানেজ করতে পারতাম। বিদেশ বিভুইয়ে  কষ্ট তো হবেই। কিন্তু মনুষ্য সৃষ্ট কষ্ট হলে তো বিপদ। একেবারে আমাদের বিরুদ্ধ আবহাওয়া। চরমভাবাপন্ন। সারাদিন টিকে থাকা মুশকিল। রাত বারোটার পর একটু শান্তি। আবার সূর্য  উঠলেই  চারপাশ লেলিহান তপ্ত।
তাঁবুর শহর মিনা
রাতের বেলা প্রায়ই পাড়ার ছেলে-মেয়েরা গলির রাস্তায় ক্রিকেট বা অন্য কোন খেলা খেলে। দিনে বেরোতে পারে না।
আপারা গ্রাইন্ড ফ্লোরে হবার জন্য প্রায়ই দেয়ালে বল মারতো ওরা। আমি বলার পর আর মারেনি।
আপাদের এসি একদিন পুরোদিন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । আমি বায়তুল্লাহ তে থাকার জন্য জানতে পারিনি। নারীরা এত কষ্ট সহ্য করতে পারে!
আমি সন্ধ্যের পর এসে দেখি  আপাদের ত্রাহি ত্রাহি  অবস্থা। মনটা বেজায় বিগড়ে গিয়েছিল।
আপনারা কাউকে কিছুই বললেন না, মালেক কে তো বলতে পারতেন? ও তো আপনাদের পাশেই থাকে? সারাদিন ওতো সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে?
আমরা বলেছি,ও আসেনি আপা বলল।
আমি মনে হয় মক্কার মাটিতে প্রথম রাগান্বিত হলাম।
তুমি জানো আমরা যথাযথ ভাড়া দিয়ে সৌদি সরকারের রিক্যুজিশনড বাড়িতে আছি, এ বাড়ি হাজীদের জন্য রিকুইজিশনড। আমি এখনি কাফেলা মালিক আর বলদিয়া কে রিপোর্ট  করতে যাচ্ছি। নারীদের কষ্ট দেয়ার ফল আমি দেখাচ্ছি , বলে আমি বাড়ি  থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি এমন সময় মালেক আমার হাত ধরে ফেললো।
ভাইজান, আমি এখনি মিস্ত্রি  ডেকে ঠিক করে দিচ্ছি মালেক বললো।
রুমের নারীরা বলছে,এজন্য ভাইকে জানাইনি আমরা। ভাই রেগে যাবে।
সৌদি পুলিশের  কিছু লোক সারাদিন পাড়া মহল্লায় আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। এদের ওরা বলদিয়া বলে। ওরা কখন কাকে যে বে আইনী কাজের জন্য ধরে ফেলে  বোঝা মুশকিল।
রাস্তায় তো পুলিশ প্রায় সারাক্ষণই আছে।
আমি একদিন তাড়াহুড়ো করে পানি আনার জন্য  নিচে নেমে গিয়েছি খালি গায়ে, শুধু ট্রাউজার পরে। খেয়াল ছিলো না। সামনে এসে বলে, হাজ্জা হারাম….
তুমি যদি হেরেমের মধ্যে  এহরামে থাকতে কিছু বলতাম না   এরকম কিছু বোঝাতে চাইলো আমাকে ঐ বলদিয়া।
আমি বুঝে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালাম , বলদিয়া মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।
নগ্ন শরীর লোকালয়ে হারাম ।
মূল হজ্ব পর্বে অংশ নিতে আজ মক্কা ছেড়ে যাচ্ছি আমরা। সবাই যে যার মতো মিনার তাঁবুর দিকে চলে যাচ্ছে। মক্কা চারদিনের জন্য একদম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।  সারা বছরের মধ্যে এ চারদিন কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী আর সৌদী কর্মকর্তা-কর্মচারী বায়তুল্লাহ তাওয়াফের সুযোগ পাবে। এ চারদিন বায়তুল্লাহ একদম ফাঁকা।
(চলমান)

লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।

আরও পড়ুন