আব্দুল জব্বার
এক
ইদানীং নিজের ঘরটায় একটা পরিবর্তন লক্ষ করছে ফয়সাল। বিছানা-বালিশ, বইপত্র, চেয়ার-টেবিল, ঘরের মেঝে সবকিছু পরিপাটি আর ঝকমকে। ভাবতেই পারছে না এমনটি হয় কি করে! মা তো এমনটি সাধারণত করেই না, তাহলে হয় কেমনে! মনে হয়, জ্বীন পরীতে এসব করছে; যদিও ওসব ও বিশ্বাস করে না। মাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছে কয়েকবার কিন্তু বলা হয়নি। আজও হলো না। জরুরী একটা কাজ নিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে। সম্পূর্ণ মনোযোগ ল্যাপটপের মনিটরে নিবিষ্ট করে।
মনে হয় দরজা দিয়ে কেউ একজন ঢুকলো। ল্যাপটপের মনিটর থেকে চোখ সরানোর সুযোগ নেই। তাই তো কাজ চলছেই। পেছনে ঝাড়ু দেয়ার মতো শব্দ হতে থাকে। টাইপের কাজটা বাদ রেখে কৌতুহলবশত পেছনে তাকায়। চমক লাগে একটা মেয়ে ওর ঘরটা ঝাড়ু দিচ্ছে। ফয়সাল নিজেকে পরখ করে নিশ্চিত হয়, স্বপ্ন নয় সত্যি। আচমকা ধমক দিয়ে বলে, এই এই মেয়ে, তুমি তুমি কে! এখানে এখানে কি করছো?
মেয়েটা কোনও কথার জবাব দেয় না, আগের মতোই তার কাজ করতে থাকে। ফয়সাল আশ্চর্য হয়, কেমন বেয়াদব মেয়ে রে বাবা কথার কোনও জবাব দেয় না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, এই মেয়ে তুমি তো ভারী বেয়াদব, কথার জবাব দিচছ না যে?
নরম স্বরে মেয়েটা জবাব দেয়, আমার নাম সুমি ….
– বের হও, বের হও! সাহস কতো আমার ঘরে, আমাকে না বলে ঢুকে পড়েছে। তোমাকে কে বলেছে আমার ঘর পরিস্কার করতে?
– খালাম্মা বলেছে…
ফয়সালের চেঁচামেচিতে ওর মা ঘরে প্রবেশ করে, কি হয়েছে ফয়সাল, এতো হৈহুল্লোর করছিস কেন?
– মা, তুমি আসছো? এই দ্যাখো এই মেয়েটাকে তুমি নাকি বলেছো আমার ঘরদোর পরিস্কার করতে?
– হুম পাঠিয়েছি, তো কী হয়েছে?
– কি হয়েছে মানে, কোথাকার কে না কে,বলা নেই কওয়া নেই – হুট করে আমার ঘরে ঢুকলেই হলো? তাই তো বলি আজ কয়েকদিন ধরে আমার ঘর, ঘরের জিনিসপত্র এতো পরিপাটি কেন। কাজের মানুষ রেখেছো, অথচ আমি জানি না! আজকাল তুমি কেমন হয়ে গেছো মা! এই মেয়ে তুই দাঁড়িয়েই রয়েছিস, বের হ।
মা বাধা দিয়ে বলে ফয়সাল, মুখে লাগাম দে। কার সাথে তুই তুকারি করছিস ; জানিস ও কে?
– ও মেয়ে কে তা আমার জানার দরকার নেই।
– অবশ্যই জানতে হবে। ও হলো তোর ছোট খালার একমাত্র মেয়ে সুমী। বাবা মা হারা মেয়েটা এখন থেকে আমাদের এখানেই থাকবে। আমাকে দেখা শোনা করবে, পড়ালেখা করবে আর মাঝে মধ্যে আমাদেরকে সাহায্য করবে।
– তোমাকে দেখা-শোনার আর কাউকে পেলে না, সংসারে আরেকজন শত্রু সদস্য বাড়িয়ে নিলে তো? ঠিক আছে, যা মনে করো তাই করো। তবে আমার কোনও সাহায্য লাগবে না। এই তুই যা।
– না, ও এখন থেকে এ বাড়ির একজন সদস্য। ওর সবখানে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।
– মা, তুমি বুঝতে পারছো না …
– আমি সব বুঝি। তুই তোর কাজ কর, আর সুমী ওর কাজ করুক।
ফয়সাল রাগে কটমট করে কিন্ত মায়ের উপর দিয়ে কোনও কথা বলতে পারে না। তাই তো সোজা ল্যাপটপের টেবিলে বসে।
মা বের হয়ে যায়। সুমী মেঝে ঝাড়ু দিতে থাকে। সবশেষে টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, ফয়সালকে উদ্দেশ্য করে বলে, পা দুটো একটু উচু করুন, ঝাঁট দিতে হবে।
ফয়সাল কোনও কথা না বলে পা মেঝেতেই রাখে। সুমী বাম হাত দিয়ে পা দুটো উঁচু করে ধরে ঝাঁট দিতে থাকে। ফয়সাল হতভম্ব হয়ে বলে, আরে, আরে …
সুমী বলে পা নামাবেন না, পায়ে ঝাঁটার বাড়ি লাগলে অমঙ্গল হয়।
সুমী ঘর থেকে বের হবার সময় ফয়সালের অলক্ষ্যে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।
চলবে
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক