সুমেরা জামানঃ
জামানকে বললাম শোন, আজ থেকে এ সংসারে আমরাও সীমিতকরণ নীতিমালা মেনে সব কাজ করবো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ধুমকেতুর মতো। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো!
জামান তখন রিডিং রুমে এ্যানিমেল ফার্মে নাক ডুবিয়ে পড়ছে। পড়ার সময় সে কানে কম দেখে, চোখেও কম শুনে। (এটাই অনুমতি নেবার জন্য শ্রেষ্ঠসময়)
পুরো দেশ যখন সীমিতকরণ নিয়ে ভাবছে তখন আমিও মনে করলাম নিজেদেরকে আপডেট করা জরুরী! আর কতোদিন কুয়োর ব্যাঙ হয়ে থাকবো তো বল কি করবো?
যা ভাল হয় করো।
ব্যস অমনি আমি আমার রাজ্য রান্নঘরে ঢুকেই কাজ শুরু করে দিলাম। মনে হলো শিংমাছের আজ এ্যান্টেনা আর লেজটা সীমিতাকারে ছেঁটে দিব। তারপর চুলোতে।
আহা!
আগে ওদের কতো কষ্ট দিয়েছি! এতে মাছও জীবিত থাকবে আবার নীতিও ।
হঠাৎ করে অংকিতা দিদির কথা মনে হলো। সে বলেছিল চালের সাথে পানি মিশিয়ে রান্না করলে যদি ভ্যাজাল না হয় তবে দুধের সাথে মিশালে দোষ কি?
আজ তাই আমিও সীমিতাকারে পানি দিয়ে ভাত রান্না করবো। তার কথাটা মনে ধরেছিল।
ইফতারের টেবিলে আরিবা বলছে
‘আম্মু এটা কি রকম বেগুনী ‘!
বললাম সীমিতাকার বেগুনী
আনুশা বলছে ‘ আমার জামাটা কই ‘
এখন খাও তো। পোশাকের কারখানা সীমিতাকারে খুলেছে। জামা হবে ঈদের আগে। ওদের বানাতে সময় লাগবে না?
আম্মু,আমার বেগুনীর জামা কই?
অহ্! এটা সীমিতাকার বেগুনী! পাতলা করে কেটে তেলে ভেজেছি বেসনে ডুব দিতে দেইনি। এইতো। এখন খাও।
মজা আছে!
এটাও নাও সীমিতাকার পিয়াজু। ডাল বেশী পিঁয়াজ কম।
শোন, তোদের মা দূর্নীতি করেছে পিঁয়াজুর সাথে। ডুবুরী নামায়ে খুজলেও একটা পিয়াজের আশও পাওয়া যাবেনা!
তারচে বরং বলো ডালজু।
সীমিতাকার ডালজু
রাতে খাবার টেবিলে, জামান বলছে এটা কি রান্না করেছো?
শিং মাছের সীমিত রেজালা।
ও! দারুন হবে মনে হয়!
ভাত এতো শক্ত কেন? আর মাছ এমন তেতো লাগছে যে !
ওদের পেট ভর্তি সম্পদ! আই মিন ডিম।সীমিতাকারে সম্পদ সংরক্ষণের চেষ্টা করেছি । দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার জরুরী।
পেটের মাছ কাটোনি!
সরি মাছের পেট কাটোনি?
কি আশ্চর্য! এখন কিভাবে খাবো?
আমি কানের কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে বললাম, সীমিতাকারে খাও।
আপডেট হও!
স্বাদের চেয়ে সম্পদ বড়।
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক।