Ads

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু

এইচ বি রিতা

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু একটি ব্যাপক অর্থ নির্দেশক শব্দ। ‘ক্লিনিক্যাল ডায়াগনস্টিক স্পেশাল নিড’ শব্দটি এমন একজন ব্যক্তির অক্ষমতাকে বর্ণনা করে যার ক্রিয়ামূলক বিকাশে সহায়তা ও সাহায্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। সেটা হতে পারে চিকিৎসা, মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর গড় মান সাধারণ মানুষের থেকে বেশি, আবার কমও হতে পারে।

সহজ ব্যাখ্যায়, ইন্দ্রিয় ক্ষমতা, বুদ্ধি বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে যেসব শিশুর বিশেষ শিক্ষা, বিশেষ চিকিৎসা বা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়, সেসব শিশুকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলা হয়।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য জাতীয় প্রচার কেন্দ্র অনুযায়ী (NICHCY নামে পরিচিত) ৭০ থেকে ৭৫–এর নিচের আইকিউ একটি বৌদ্ধিক অক্ষমতা নির্দেশ করে। অনেক ক্ষেত্রে মেডিকেল ডায়াগনোসিসের ওপর ভিত্তি করে ১২০–এর ওপর বা বাইরের আইকিউ ও বৌদ্ধিক অক্ষমতা নির্দেশ করতে পারে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের লক্ষণাবলি ভিন্ন ও স্পষ্ট হয়। এদের চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। শারীরিক (physical), বিকাশযুক্ত (Developmental), আচরণ/ সংবেদনশীল (Behavioral/ emotional) এবং সংবেদনশীল প্রতিবন্ধী (Sensory-impaired)।
শারীরিকভাবে একাধিক স্কলেরোসিস, অ্যালার্জি, হাঁপানি, জুবেনাইল আর্থরাইটিস, লিউকোমিয়া, পেশি ডিসস্ট্রফি এবং মৃগী লক্ষণগুলো লক্ষণীয়। ফাটল ঠোঁট ও অনুপস্থিত অঙ্গগুলোও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

বিকাশযুক্ত প্রতিবন্ধকতায় ডাউন সিনড্রোম, অটিজম, এডিএইচডি, সেরিব্রাল প্যালসি, অ্যাস্পেরগার সিনড্রোম, ডিসলেক্সিয়া, ডিস্ক্যালকুলিয়া, ডিসগ্রাফিয়া, ডিসপ্র্যাক্সিয়া, অ্যাফাসিয়া বা ডিসফেসিয়া, শ্রুতি প্রক্রিয়াকরণ ব্যাধি, ভিজ্যুয়াল প্রসেসিং ডিসঅর্ডারগুলো লক্ষণীয়। আচরণগত ও সংবেদনশীলায় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ও বাইপোলারসহ বিচ্ছিন্নতা বা ডিসসোসিয়্যাসন, ট্রমাজনিত স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ, হতাশা ও মনোযোগ ঘাটতি (হাইপার অ্যাক্টিভিটি) রোগগুলো লক্ষণীয়।
সংবেদনশীল-প্রতিবন্ধিতায় অন্ধত্ব, বধির বা সীমিত শ্রবণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী লক্ষণগুলো লক্ষণীয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে উপস্থিতিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ধরনগুলো তীব্র আকার ধারণ করলে এবং কোনো শিক্ষার্থীর আইকিউ ২০ থেকে ৩৫–এর মধ্যে হলে, শিক্ষার্থীকে একটি গুরুতর কেস হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। স্কুলগুলোতে এসব শিক্ষার্থীর সহায়তার প্রয়োজন হয় এবং তাদের সাফল্যের জন্য আলাদা সেটিংয়ে ব্যবস্থা করে বিভিন্ন পরিষেবা সরবরাহ করা হয়।

একটি শিশু কেন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, তার সম্পূর্ণ সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, অকালে বা স্বল্প ওজনে জন্ম, প্রসবোত্তর ড্রাগ, অ্যালকোহল বা তামাকের ব্যবহার, গর্ভাবস্থায় দরিদ্র পুষ্টি অর্থাৎ পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন, প্রোটিন বা খাদ্যের মধ্যে আয়রন ইত্যাদির অভাব, মা বা সন্তানের দ্বারা উচ্চ স্তরের পরিবেশগত বিষের প্রকাশ (যেমন সিসা), গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে বা শিশু বয়সে সংক্রমণ হওয়া, ট্রমা এবং স্ট্রেসজনিত সময়কাল…ইত্যাদি বিষয়গুলো জড়িত থাকতে পারে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা সিনড্রোম, টার্মিনাল ডিজিজ, গভীর জ্ঞানীয় দুর্বলতা বা মারাত্মক মানসিক সমস্যা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। অন্যান্য শিশুর বিশেষ চাহিদাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে—শিক্ষার অক্ষমতা, খাদ্য অ্যালার্জি, বুদ্ধিমত্তার বিকাশ বিলম্ব বা আতঙ্কিত হওয়ার সমস্যাগুলো। এমন শিশুদের চাহিদার চ্যালেঞ্জগুলো সাধারণ শিশুদের থেকে মারাত্মক হয় এবং আজীবন স্থায়ী চ্যালেঞ্জও হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের অতিরিক্ত সহায়তা ও অতিরিক্ত পরিষেবাগুলোর প্রয়োজন হয়। তাঁদের অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা শিক্ষাগত, সামাজিক, সংবেদনশীল ও কখনো কখনো চিকিৎসার মাইলফলক পূরণে সহায়তা করে। আবাসন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সম্পৃক্ততা ও আর্থিক লেনদেনের প্রতিদিনের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় তাঁদের আজীবন দিকনির্দেশনা এবং সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিবন্ধী শিক্ষা আইন ইনডিভিজুয়্যাল উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি এডুকেশন অ্যাক্টের (IDEA) অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এই আইনটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আর্লি ইন্টারভেনশন পরিষেবা, বিনা মূল্যে পাবলিক বিশেষ শিক্ষা ও এ সম্পর্কিত পরিষেবায় উপযুক্ত পদক্ষেপগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য আর্লি ইনন্টারভেনশন শিক্ষাগত, আবেগময় ও সামাজিক সম্ভাবনা পূরণে সহায়তা করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর্লি ইন্টারভেনশন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা শুরুতেই চলমান শিশুর বিকাশ ক্ষমতা মূল্যায়ন করে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিকাশ ও আচরণের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকতে পারে। শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখে রাখা ভালো। যেমন—শিশু জন্মের ৬ মাস অবধি যদি কোনো ধরনের শব্দ না করে বা হাসি না দেয়, উচ্চ শব্দে সাড়া না দেওয়া বা শব্দ এবং কণ্ঠস্বরকে অনুসরণ করার চেষ্টা না করা, তিন মাস বয়সের পরও মাথা ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া, কোনো জিনিস বা ব্যক্তিকে চোখ দ্বারা অনুসরণ করতে সমস্যা হওয়া, বাহু বা পা শক্ত থাকা এবং শরীরের ভঙ্গিটি স্বাভাবিক না হওয়া…ইত্যাদি।

৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত যেসব জিনিস লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলো—কোনো কিছু লুকাতে দেখার পরেও সেটা খুঁজে বের করার মতো সাধারণ জিনিসগুলো আবিষ্কার করতে সমস্যা হওয়া, ঘরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ডাকার পর প্রতিক্রিয়া করতে সমস্যা হওয়া, উঠে দাঁড়াতে সমস্যা হওয়া, কোনো জিনিসের কাছে পৌঁছতে বা জিনিসটি হাতে নিতে অসুবিধা হওয়া, পিক-অ্যা-বু–এর মতো গেম খেলায় রিঅ্যাকশন না করা, প্রথম দিকে ‘মামা’ বা ‘দাদা’–এর মতো সহজ শব্দগুলো বলতে শুরু না করা—এমন সব আচরণের পুনরাবৃত্তি করা যা আঘাত করতে পারে, যেমন নিজেকে কামড় দেওয়া বা মাথায় আঘাত করা…ইত্যাদি।
এমন কোনো লক্ষণ নজরে পড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাহিত্যিক, শিক্ষক ও সাংবাদিক 

আরও পড়ুন