Ads

বই পর্যালোচনাঃ অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী

আয়েশা সিদ্দিকা

বই পর্যালোচনা
বইঃ অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী
লেখকঃ আহমদ ছফা

মানুষ হয়তো বারবার প্রেমে পড়ে কিন্তু একজন মানুষই হয়তো হৃদয়ের কোটরে এমন একটা জায়গা দখল করে নেয় সেখানে তার বাস অনন্তকাল। যার কাছে গোপন রাখতে ইচ্ছে করে না অতীতে জীবনে ঘটে যাওয়া খুঁটিনাটি ঘটনাও। লঘু থেকে গুরুতর যেকোনো ঘটনাই বলা যায় বরং গোপন রাখতে অপরাধবোধ হয়। তাকে বলেই যেন অন্য রকম শান্তি অনুভূত হয়। ( ভিন্ন মত ও হতে পারে)

যাইহোক এবার আসি আহমদ ছফার “অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী” উপন্যাসে। আহমদ ছফাও যেন হৃদয়ের কোটরে বাস করা সেই প্রিয়তমাকে অতীতে জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে আত্নার পরিশুদ্ধি করছেন। ও হ্যা ভাবছেন আহমদ ছফার কথাই কেন বলছি?

কারণ আহমদ ছফা নিজেই দাবি করেছেন বইটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস। বইটি উত্তম পুরুষে বর্ণিত। কথক জাহিদ তার জীবনে যে অতীতে একাধিক নারী এসেছিল তাই অকুণ্ঠচিত্তে চিঠিতে বলছেন নবপ্রত্যাশিত প্রিয়তমাকে।

বইটির শুরুতেই মানুষের নাম নিয়ে লেখক দারুণ সব অপ্রিয় সত্য কথা বলেছেন। মানুষের নামই তার অস্তিত্বের প্রতীক। এই নাম নিয়ে আমিও স্কুল, কলেজে দারুণ ভুগেছি।

জাহিদের জীবনে প্রথম যে মেয়েটি আসে সে যেন নিজেকে ছেলে মনে করে,গতানুগতিক নারীত্বকে অস্বীকার করে। তার নাম দুরদানা আফরাসিয়াব। দুরদানাার এই ব্যতিক্রম আচরণ জাহিদকে আকর্ষণ করে। ব্যতিক্রম যেকোনো কিছুর প্রতিই হয়তো বেশিই আকর্ষণ থাকে।
কিন্তু চাইলেই তো নারীত্বের বৈশিষ্ট্য গোপন রাখা যায় না। দুরদানাও তার নারীত্বকে গোপন রাখতে পারে না, ধরা পড়ে জাহিদের কাছে। জাহিদ তো দুরদানাকে আর পাঁচটা মেয়ের মতো মনে করে নি।জাহিদ দুরদানার এই নারীত্বকে মেনে নিতে পারে না।তারপর আপনা থেকেই সম্পর্ক মলিন হয়ে যায়।

তারপর জাহিদের জীবনে আসে শামারোখ। দুরদানার মতো সেও ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্র। কারণ সে তার স্বার্থ হাসিল করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তার চেহারার সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্যে পুড়ে অনেক কবিই কাব্য রচনা করে। সেই সৌন্দর্যে জাহিদও পুড়ে যায়। শামারোখের জন্য সে যেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে নির্দ্বিধায়।
শামারোখের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। শামারোখ সমাজে নিন্দনীয় হলেও জাহিদের কিছুই আসে যায় না। শামারোখের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার শত্রুতে পরিণত হলেও শামারোখের চাকরি পেতে সে সর্বোচ্চ সহায়তা করে। বলা যায় জাহিদের জন্যই শামারোখের চাকরি হয়। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর শামারোখ বদলে যেতে শুরু করে। শাসারোখ তরুণ কবি শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শাহরিয়ারের অকালমৃত্যু ঘটে। শেষে শামারোখ কাকে যেন বিয়ে করে বিদেশে পাড়ি দেয়। জাহিদ আবারও ব্যর্থ।

এসব ঘটনা জাহিদ চিঠিতে যাকে লিখছে তার নাম লেখক সোহিনী উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছু জানতে পারি না। কারণ লেখক বইটির দ্বিতীয় খন্ড লিখবেন বলেই হয়তো এখানে তার সম্পর্কে কিছু লেখেন নি।কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের বা লেখকের দ্বিতীয় খন্ড লেখার আগেই লেখক ওপাড়ে পাড়ি দেয়।তবে পাঠক একটু খুঁজলেই উপন্যাসের কিছু চরিত্রের উপস্থিতি বাস্তবে পেয়ে যাবেন।

নিঃসন্দেহে উপন্যাসটি একটি প্রেমের উপন্যাস। তবে আহমদ ছফার লেখায় যে আমরা একটা অন্য রকম তেজ দেখতে পাই এবং সমাজে নামধারী বড় বড় মানুষের ভালোমানুষী মুখোশ টেনে উন্মোচন করতে সিদ্ধহস্ত তার ব্যতয় ঘটেনি এই উপন্যাসেও।

“গাভী বৃত্তান্ত ” বইটির মতোই এখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীর শিক্ষকের ভালোমানুষী মুখোশ টেনে উন্মোচন করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি, বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারটাও উঠে এসেছে। এমনকি যুদ্ধপরবর্তী অস্থিরতা বিরাজমান বাংলাদেশের চিত্রও পাওয়া যাবে।

সবশেষে বলতে চাই উপন্যাসটি ভালো লেগেছে। যারা পড়েন নি শীঘ্রই পড়ে ফেলুন। যারা পড়েছেন তারা কমেন্টে জানাতে পারেন কেমন লেগেছে।

লেখকঃ কলাম লেখক

আরও পড়ুন