কামরুজ্জামান জেমস
“শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশি” এই কথা বললেই একটি নাম ভেসে উঠে, একটি মানুষের নাম, ছবি ভেসে উঠে, তার নাম আমাদের সুপরিচিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। ওয়ালীউল্লাহ এর বিখ্যাত উপন্যাস লালসালুর একটি ডায়লগ । শুরুর দিকে ফুটে উঠে দারিদ্রের কারনে ছুটে চলা মজিদের মহব্বনগরে নাটকীয় আগমনের কথা। সে সময় সে আসে বাংগালীর দুর্বলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ধর্মীয় পরিচয়ের লেবাসে। তার মহব্বতনগররে আগমন দোয়া দরুদ, সুরা পড়তে পড়তে। এতে সেখানকার অধিবাসীরা তার দিকে ঝুকে পড়ে। সে নিজেকে ইসলামের প্রচারক হিসেবে পরিচয় দেয়। এ উপন্যাসের মুল চরিত্র মজিদ। তার জন্মস্থান এলাকায় বন্যায় সকল ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই নিজেকে অনাহারী থেকে রক্ষা করতে মজিদ মহব্বতনগরে যায়। সে আগের দিনে সে গ্রামের পুরাতন কবরের কথা জানতে পারে। সে তার অজানা কবরের কথা বলে যা জংগলে ঢাকা ছিল এবং তার দাবি মতে মুদাচ্ছির নামে পীরের ছিল। যদিও এ নামে কেউ ছিল বলে কেউ জানে না। পুরো উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে মিথ্যা পীরের উপর ভিক্তি করে। এর সাথে ধর্ম বা দেশপ্রেম বা মানবপ্রেম এর কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শুধু পেটপ্রেম বা পেটপূজার। পেটের দায়ে কিভাবে মজিদ সবকিছু করে তা তুলে ধরা হয়েছে। ক্রন্দনরতা তার খুব ভালো লাগে।
কোন গ্রামে প্রভাব বিস্তার করতে গেলে প্রয়োজন প্রভাবশালী কাউকে বসে আনা। এর ধারাবাহিকতায় মজিদ খালেক ব্যাপারীকে নিজের বসে এনে তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। তার জৈবিক চাহিদা মেটাতে বিয়ে করে। প্রথমে রহিমা নামে একজন বিধবাকে বিয়ে করে এবং পরে জমিলাকে বিয়ে করে। জমিলা প্রতিবাদী নারীর প্রতীক হিসেবে উপন্যাসে অবস্থান নেয়।
এজন্য মজিদ তাকে অত্যাচার করে এবং শেষে মাজারের সাথে বেধে রাখে। মজি মাজারের সকল টাকা পয়সা আত্মসাত করে। এখানে বহুবিবাহের সরুপ তুলে ধরা হয়েছে। মজিদের, খালেক ব্যাপারীসহ বহুবিবাহ তুলে ধরা হয়েছে।
গ্রামবাসীদের মাজারকেন্দ্রীক কুসংস্কার দূর করতে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন চুরমার করে দেয় মজিদ। এমনই কুটিল চাল চালে সে বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে যায়। এখানে গ্রামীণ রাজনীতির ছবি ফুটে উঠে।
মাজারের আয়ের মাধ্যমে মজিদ অল্প কিছুদিনে ঘরবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয়ে যায়। গ্রামের মানুষেরা ধার্মিক হওয়ায় মজিদের কথা অনুসারে কাজ করে। তারা তার কথাকে অলংঘনীয় বলে মনে করে। তাই মজিদ পরে পারিবারিক জীবনেও নাক গলায়। তাহেরের বাপ মায়ের একান্ত পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে তাহেররের বাপের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং কিছু আদেশ দেয় যা সে সহ্য করতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়। আবার আমেনার চরিত্র খারপ এই অপবাদ দিয়ে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তালাক দেওয়ায়। তবুও মজিদ ও মাজার নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
আওয়ালপুরের পীরের কাহিনী খালেক ব্যাপারীর ১ম স্ত্রীর মুখে শুনতে পাওয়া যায়। তার কোন সন্তান ছিল না। তাই সে আওয়ালপুরের পীরের কাছ থেকে পানি পড়া আনতে বলে। মজিদ থাকতে অন্য কারও কাছে পানি পড়া আনতে যাবে তা মজিদ সহ্য করতে পারে নি। তাই ব্যাপারীকে দিয়ে তাকে তালাক দেওয়ায়। এতে মজিদের ভণ্ডামির বহিপ্রকাশ ঘটে।
উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটে জমিলার উপর অত্যাচারের পরিণতির মাধ্যমে যদিও মজিদের কিছুটা হলেও ভালোবাসার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। শেষে আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে মজিদ ও তার মাজারের অক্ষমতার প্রমাণ লালসালু উপন্যাসে ফুটে উঠে।
উপন্যাস- লালসালু
লেখক– সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
প্রকাশক- নওরোজ কিতাবিস্তান
পৃষ্ঠা- 67
মূল্য-
প্রকাশকাল-2006
কামরুজ্জামান জেমস কবি ও সাহিত্যিক।