Ads

বুক রিভিউঃ খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা

সাবিনা ইয়াসমিন

বইয়ের নামঃ খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা
মূলঃড.ইয়াসির ক্বাদি
ভাষান্তরঃমোহাম্মদ সাইফুল্লাহ
প্রকাশনাঃ প্রচ্ছদ
মুদ্রিত মূল্যঃ১৫০টাকা

প্রতিষ্ঠিত বা স্বীকৃত যেকোন কিছু আমরা অবলীলায় গ্রহণ করতে পারি;কিন্তু অপ্রতিষ্ঠিত কোন কিছুর ক্ষেত্রে? কেমন হতে পারে আমাদের প্রতিক্রিয়া! কোন সংশয় ছাড়াই কি মেনে নিতে পারি,বিশ্বাসের সঙ্গে কি বলতে পারি-আল্লাহ আপনাকে কখনও লাঞ্চিত করবেন না!
রাসূল(সা.) তখনও নিজেই অনিশ্চয়তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, কি হচ্ছে তাঁর সঙ্গে (জিবরাইল আ. এর আগমন পরবর্তী সময়ে)? যে মুহাম্মাদ (সা.) প্রচন্ডভাবে ভীত, দুই ঘন্টা পথ হেঁটে এসেও খাদিজা রা. কে বলেছেন চাদরাবৃত করে দিতে, ঠিক সেই মুহুর্তে নিমিষেই শীতের তীব্রতা, ভয়ের তীব্রতা সব কাটিয়ে দিয়েছেন মহীয়সী নারী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রা.। সেই চাদরের সঙ্গে রাসুল(সা) এর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি(খাদিজা রা.) যেন তাঁর বিশ্বাস, সম্মান, ভালোবাসা সবকিছু।

তাই খাদিজা রা. কে স্বয়ং আল্লাহ করেছেন সম্মানিত, দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা। জিবরাইল আ. এর মাধ্যমে দিয়েছেন সালাম সঙ্গে দিয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ। শেষ করলাম ড. ইয়াসির ক্বাদির “মাদার অব দ্য বিলিভার্স”লেকচার সিরিজের অনুবাদ ” উম্মুল মুমিনিন সিরিজ”এর “খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা”।

খাদিজা রা. আমাদের প্রথম মা, রাসূল সা. এর প্রথম এবং সসর্বাধিক প্রিয় সহধর্মিণী, তাঁর সন্তানদের মা,ইসলামে প্রথম ঈমান আনয়নকারী, প্রথম পবিত্রতা অর্জনকারী,প্রথম সালাত আদায়কারী, মূলত ইসলামের অনেক কিছুতেই খাদিজা রা. ছিলেন প্রথম।

৭৬ পৃষ্ঠা সম্বলিত ছোট্ট বইটা পড়ে যথেষ্টই পরিতৃপ্ত হয়েছি,আলহামদুলিল্লাহ।শুধু খাদিজা রা.-কে নিয়ে একটু বিশদে পড়া প্রথমবারের মত।খাদিজা রা. জন্ম নিয়ে বা তাঁর বিয়ের বয়স নিয়ে যে মতানৈক্য আছে তা বইটি পড়েই জানতে পারলাম। আমাদের মাঝে স্বীকৃত যে খাদিজা রা. এর রাসূল সা. এর সঙ্গে বিয়ের সময় ছিলো ৪০বছর, কিন্তু এখানে আরও একটা মত আছে।অনেক স্কলাররা মনে করেন সে সময় রাসূল সা. এর বয়স ছিল ২৫ বছর খাদিজা রা. এর ২৮ বছর।সত্যিই,প্রকৃত ঘটনা আল্লাহ ভালো জানেন।

লেখক আলোচনা শুরুর আগেই দিয়েছেন কৈফিয়ত। কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সে সময়কার নারীদের সম্পর্কে খুব বেশি বর্ণনা পাওয়া যায় না।কারণ সে সময় নারীরা প্রকাশ্যভাবে প্রভাবশালী কোন ভূমিকা পালন করতো না।তাই তাদের সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা তাদের ঘরের পুরুষদের মাধ্যমেই।আর খাদিজা রা. এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।তার সম্পর্কে জানা যায় রাসূল সা. এর মাধ্যমে আবার কখনো আয়শা রা. এর মাধ্যমে এবং আয়শা রা. জানার মাধ্যমও ছিলেন রাসূল সা. ।

খাদিজা রা. সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন আয়শা রা. এবং হযরত আলী রা.।কারণ আলী রা. লালিত ও পালিত হয়েছিলেন খাদিজা রা. এর ঘরেই।

ছোট্ট পরিসরেই মোটামুটিভাবে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া খাদিজা রা. সম্পর্কে। খাদিজা রা. এর ব্যাপ্তি ছিল মাক্কী জীবনের প্রথম সময়,যে সময় রাসূল সা. এর জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল, সেই প্রতিকূল সময়ে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে পাশে থেকেছেন খাদিজা রা.।একজন নারীর জীবনে বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন দায়িত্ব আসে,সেই অনেক ধাপের মধ্যে প্রধান একটি ধাপ একজন স্ত্রীর দায়িত্ব হিসেবে। তা তিনি শুধু যথাযথভাবে পালনই করেননি বরং সর্বাত্মক ও সফলভাবে পালন করে গেছেন।

খাদিজা রা. অত্যন্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তার প্রমাণসরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় সহীহ বুখারি ও মুসলিমে।সেখানে বর্ণিত হয়েছে”জিবরাইল এসে বলেন,হে আল্লাহর রাসূল!তাঁকে তাঁর প্রভুর ও আমার পক্ষ থেকে সালাম নিবেদন করুন।আর তাঁকে মণিমুক্তা খচিত একটি বেহেশতি মহলের সুসংবাদ দিন, যাতে কোন শোরগোল কিংবা ক্লান্তি নেই।”

সুনানে নাসায়িতে খাদিজা রা. এর উত্তর বর্ণিত হয়েছে।তিনি জবাব দেন-“আল্লাহ তা’আলা নিজেই সালাম, জিবরাইলের প্রতি সালাম আর আপনার ওপর সালাম ও রহমত।” মদিনায় পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ বছরের ঘটনা। সাহাবিদের সালাতের মধ্যে তাশাহুদে আল্লাহর প্রশংসা করতে বলা হয়।তখন সাহাবায়ে কেরামগণ “হে আল্লাহ! আপনাকে সালাম” বলে প্রসংশা করেন। তখনও তারা আল্লাহকে প্রশংসা করার রীতি জানতো না, তখন রাসূল সা. তাদের শিখিয়ে দেন তাশাহুদ।কিন্তু খাদিজা রা. জিবরাইল আ.কে তাৎক্ষণিক জবাব দেন। এ থেকে খাদিজা রা. জ্ঞানের গভীরতার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বর্তমান আত্মকেন্দ্রিকতার যুগে যখন দাম্পত্যকলহ বা টানাপোড়েন খুব স্বাভাবিক, তখন খাদিজা রা. ও রাসূল সা. হতে পারেন সবচেয়ে সফল দাম্পত্যের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

খাদিজা রা. ছিলেন রাসূল সা. এর সুখের চেয়েও দুঃখের সঙ্গী অনেক বেশি।তাই রাসূল সা.হৃদয়ে খাদিজা রা. জন্য ভালোবাসা ছিল স্থায়ীভাবে,যা খাদিজা রা. মৃত্যু তো মলিন করতে পারেই নি, পারেননি অন্য উম্মুল মুমিনিনসহ আয়শা রা.।

গৃহাভ্যন্তরেই যার জীবনের সীমা ছিল, যিনি ছিলেন না কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাসূল সা. এর ছায়া সঙ্গী হয়েও অন্ধকারেও মিলিয়ে যাননি,বরং ছিলেন রাসূল সা. এর জীবনের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, নারীদের মধ্যে সেরা চারজনের একজন, আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ প্রাপ্ত, আমাদের জন্য অনুপম আদর্শ “খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা।”

লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক

আরও পড়ুন