Ads

সীরাত রিভিউঃ মহানবী সা.

মুরশিদা সাথী

গ্রন্থ: মহানবী সা.
লেখক: মাজিদা রিফা
আমরা পড়ি জানার জন্য, কখনো বিনোদনের জন্য।কতো কতো বই! তবে একজন মুসলিম হিসেবে যার সম্পর্কে আমাদের সবচেয়ে বেশি জানা প্রয়োজন তাকে নিয়ে কতটুকু পড়ছি? কতটুকু জানছি? অথচ আল্লাহ রব্বুল আলামীন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন,
“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।” (সূরা আহযাব:২১)
কিন্তু দূঃখের ব্যাপার হচ্ছে, রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে মুসলিমদের সম্পর্ক যতটা না কাছের হওয়া উচিত, ততোটা হয়না। যাকে সৃষ্টি করা না হলে এই পৃথিবী সৃষ্টি হতো না! তিনি বিশ্বনবি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই চিন্তা থেকে উদ্যোগ নিয়েছি সেল্ফে রাসূল এর সীরাত সম্পর্কিত যে কয়টা বই আছে সেগুলো আগে শেষ করবো। রাসূল এর সীরাত পড়েছি কিছু কিছু। একটা গ্রন্থ গিফট পেয়েছিলাম এক আন্টির কাছ থেকে। কিন্তু লেখকের উপস্থাপনা খুব বেশি মন টানেনি এবং ছাপাও ভুল আছে কিছু! যার কারণে আজো পুরোটা শেষ করতে পারিনি! তাই সেটা রেখে মাজিদা রিফা’র লেখা সীরাত গ্রন্থ ‘মহানবী’ পড়া শুরু করলাম। বলে রাখা ভালো মাজিদা রিফা বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং প্রথম পরিপূর্ণ নারী সীরাত লেখিকা। (পৃথিবীর অন্য কোন নারী সীরাত লেখিকা আছে কিনা আমার জানা নেই।) আলহামদুলিল্লাহ্‌ লেখিকার উপস্থাপনায় আমি মুগ্ধ।
লেখিকা পুরো বই বায়ান্নটি পরিচ্ছেদে সাজিয়েছেন। আর পরিচ্ছেদগুলোর শিরোনামও আকর্ষণীয়। ইতিহাসের ইতিহাস, জীবন-মৃত্যুর খেলাঘরে, পৃথিবী জুড়ে অন্ধকার, আমেনার আলো শিশু, সৌভাগ্যের পরশমণি………..
যা শুরু করলে শেষ না করে উঠতে মন চাইবেনা। বইয়ের প্রথম থেকে শেষ অব্দি একটা তীব্র আকর্ষণ অনুভব করেছি। মোটকথা, আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।পড়তে গিয়ে রাসূলের খুশিতে আনন্দ পেয়েছি, কষ্ট এবং বিয়োগে কেঁদেছি। কিছু যায়গায় এসে তো এমন অনুভূত হয়েছে যে, মনে হয় গলায় কাছে শক্ত কিছু আটকে আছে। –যখন উহুদ যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, দাঁত মুবারক শহীদ করে দিয়েছে,সাহাবারা কয়েকজন নিজেরা ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন আমার নবিকে রক্ষা করার জন্য। মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহকে রাসূল ইয়ামান অভিযান পাঠানোর সময় বলেছিলেন, মুয়ায তুমি ফিরে এসে আর আমাকে দেখবে না, আমার কবর এবং মসজিদের সামনে দিয়ে চলবে। তখন তিনি কেঁদে ফেলেছেন সাথে আমিও। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহ রাসূল এর মৃত্যু মানতে পারেননি। তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যে বলবে রাসূল ইন্তেকাল করেছেন তার হাত-পা কেঁটে ফেলবেন। রাসূল এর প্রতি সাহাবীদের ভালোবাসা দেখে আমার চোখ ভিজেছে। যদি তাদের মতো সামান্যতমও ভালোবাসতে পারতাম আমি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জন্য শিক্ষা।
যারা রাসূলের সীরাত পড়া শুরু করতে চান, তারা “মহানবী” দিয়ে শুরু করতে পারেন। কেননা “মহানবী” ব্যাপক তথ্যবহুল এবং সহজ-সাবলীল ভাষায় রাসূলের জীবনকথা। তাছাড়া,শুরুতেই যদি খুব বড় পরিসরের সীরাত দিয়ে পড়া শুরু করেন তাহলে শেষ পর্যন্ত মনযোগ এবং ধৈর্য্য দুটোই হারিয়ে যেতে পারে।
একজন নারী হয়ে লেখিকা এতো মূল্যবান একটা গ্রন্থ লিখেছেন। এটা কম কথা না! সুতরাং আমার মতে; একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, “মহানবী” গ্রন্থকে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। লেখিকা আমাদের আরো মূল্যবান কিছু গ্রন্থ উপহার দিবেন এই কামনা….
পরিশেষে, “মহানবী” গ্রন্থের লেখিকা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। এই দু’আ রইলো।
★সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
★রাদিয়াল্লাহু আনহ
প্রকাশনী: রাহাবার
মুদ্রিত মূল্য:৪৪০
পৃষ্ঠা সংখ্যা:৪৮০

লেখকঃ সাহিত্যিক ও সহ-সম্পাদক, মহীয়সী

আরও পড়ুন