-রত্না আফরোজ
তোমাকে খুঁজে খুঁজে হেঁটেছি আমি অজস্র পথ,
দিকভ্রান্ত পথিক যেমন
শত শতাব্দীর সিঁড়ি বেয়ে বড়ো ক্লান্ত আমি।
কতকাল আমি ঘুমহীন রাতজাগা প্রহরী,
যেন একজোড়া সতর্ক চোখ, আমার ভাবনার দুঃখ জলে তুমি তরী ভাসাও রোজ নিরবে,
অথচ ঢেউ ভাঙা স্রোতের মতো ভেসে ভেসে
এক নদী হতে অন্য নদী সমুদ্র সাগর মহাসাগর
তন্ন তন্ন করে খুঁজে আবার ফিরে আসি বালিয়াড়ি বালুচরে।
তুমি তখন গাঙচিল হয়ে উড়াল দাও আকাশ নীলে,
আমি মেঘের সীমানা ছাড়ায়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরি
সবুজ অরণ্য পথের পদ্মফোটা দীঘির জলে।
কখনো চাঁদের আলো দুচোখে মেখে
সারা আকাশ করে তোলপাড়, করেছি
তোমারই সন্ধান অগণন তারার ভিড়ে।
আমার বিনিদ্র রাতের জোছনা ধোয়া জানালায় আধো ঘুম আধো জাগরণে
ফিরে আসো তুমি সুস্বপ্নের বার্তা নিয়ে।
তারপর আমি জানিনা কতোদিন কতটা প্রহর
ছিলাম প্রশান্তির নীড়ে,
কতরাত ভিজেছি কুয়াশার জলে।
অতঃপর মিশে আছি দূর গাঁয়ের সরুপথের ঘাসের ভিতর,
আমি মৃত্তিকার অন্তরে পেতেছি কান
মনে হলো শুনতে পেলাম পাতালপুরির
অসংখ্য দেয়াল ভেদ করে তুমি যেন ডেকেছিলে
আমায়, এইতো আমি এখানে এই মাটির গভীরে।
আমি তখন ক্রমশ যেতে থাকি গহীন অন্ধকার গহব্বরে
দেখি অগুণিত অনুজীব কতো বিষাক্ত কীটের বসবাস,
ফিরে ফিরে যায় প্রতিধ্বনি হয়ে আমার দীর্ঘশ্বাস।
যে মুখ আমি দেখিনি বহুদিন করি তারই সন্ধান,
সন্ধ্যার আঁধার কেটে যখন নক্ষত্রেরা জেগে ওঠে আকাশে
তুমি কি ডেকেছিলে আমায় সন্ধ্যাতারা হয়ে
আমি সারানিশি পশ্চিমাকাশে করি বিচরণ ধ্রুবতারার খোঁজে
রাতশেষে ভোরের শিশিরে ভিজে, পুর্বাকশে
তুমি জ্বলজ্বল করে জ্বলছো শুকতারা হয়ে
আমি নিরাশায় ডুবি বারংবার এই লুকোচুরি খেলার ছলে।
মনে হয় আমি বুঝি বিলুপ্ত একনগরীর ধোঁয়াসে বেদনার রেখা
হারিয়ে গিয়েও পদচিহ্ন ফেলে গেছি
স্বপ্নহীন পৃথিবীর হৃদয়ের ভিতর ।
রত্না আফরোজ- কবি।