Ads

অনন্ত বিরহ

কুলসুম আক্তার সুমী

হাত ফসকে চলে যাওয়া সময়টাকে
মুঠো ভরে ধরতে চাই।
প্রজাপতি দিনগুলোকে
কাঠের সিন্দুকে সাজিয়ে রাখতে চাই
পুতুলের কাপড়ের মতো।

আমার শৈশবে দেখা শতবর্ষী বটগাছটা
এখন আর নেই।
তবু চোখ বন্ধ করেই
আজো আমি পাখির কলকাকলী মুখরিত ভূতুড়ে সৌন্দর্য দেখতে পাই।
প্রেম প্রেম ভাবে ভরা
কৈশোরের চোখে দেখা কৃষ্ণচূড়ারাও নেই।
অথচ, কোকিল-পিউকাহার মিতালী
আমার চোখেই আঁকা আছে।
সেই সরু স্রোতস্বিনীটাও তো বেদখল-
তবু আশ্বিনের বাঈদানী লটবহরের সাথে আমিও হেঁটে আসি দিগন্তের পার।
কখনো হারিয়ে খুঁজি হারানো আমায়!

অলক্ষ্যে ফেলে আসা বিকেলের সোনারোদ
মুঠো ভরে ধরতে চাই।
নিকোনো উঠোনে বসে
গায়ে মাখতে চাই রুপোলী জোৎস্না
মায়ের আদরের মতো।

শৈশবের স্বপ্নচোখে দেখা সেই পদ্মদীঘি
এখন আর নেই।
শুধু বুকের ভেতর আছে,
মাঘী পূর্ণিমায় দীঘির পরে
চাঁদের সামিয়ানা।
ঘুমের ঘোরে আজো হেঁটে চলে যাই
সেনবাড়ির পূব পাশের খোলা প্রান্তরে।
বয়েসি শিমুলের মগডালের ভূত
আর মামাবাড়ির পুকুরের
দক্ষিণ-পশ্চিম কোনার
বড় তাল গাছের পেত্নীটা
দেখার সাধ অপূর্ণই রয়ে গেল আমার!
অনন্ত বিরহ জীবনে, মরণেও!

অবহেলে ছুঁড়ে ফেলা সময়টাকে
চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে চাই।
সঞ্চিত লাকড়িতে বিনিময় করতে চাই
একটি বাহারি কলসি, একটি রঙ্গিন পুতুল
ধামিচার কুমোর পল্লীতে।

তেপান্তরের মাঠটা খালি নেই আর!
তবু ভোকাট্টা ঘুড়িটা আছড়ে পড়ে বুকের পরে,
মান্জা দেওয়া নাটাই-সুতো আজো সিথানে।
কাঁচা আম ফাটানো স্কুলের দেওয়াল
আজো অপেক্ষায় আছে।
মেশানো লবন মরিচের কৌটো
ভাতঘুমে ফিসফিসিয়ে ডাকে।
বৌচি, গোল্লাছুট, রুমাল চোরেরা
দাপিয়ে বেড়ায় স্মৃতির উঠোন।
হা-ডু-ডু খেলার বন্ধুরা
প্রায়শই হাঁক মারে
নাগরিক ব্যস্ততায়।
তবে কি কোনদিন বড় হব না!?

হাত ফসকে হারিয়ে ফেলা সময়টাকে
আরেকবার খুব করে পেতে চাই।
এ চাওয়া কি শুধু আমার!
নাকি… অধরার প্রতি প্রেম
মানব জন্মের অনুষঙ্গ!?

সেই দেবদারু, ছাতিম গাছ আর নেই,
জবা-এলাচের বন উজাড়।
তবু পাতার ফাঁকে টুনটুনি আজো বাসা বুনে।
আজো বকুলের ডালে বসে
অতিথির আগমনী শোনায় হলদে কুটুম পাখি।
চৈত্রের কোনাকুনি পথ,
তেমাথা রাস্তা, কবর, শ্মশানের যত ভূতুড়ে গল্প,
শাপলা-শালুকের বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতি!
মায়ের হাতে রান্না কবুতরের মাংস,
মধ্য পৌষের খেজুরের রস…
মাস কলাইয়ের ডাল কিংবা চিংড়ির ভর্তা।
সেইসব স্বাদেরা ও পালিয়েছে প্রকৃতির মতো
কিংবা আমিই পালিয়েছি সবকিছু ছেড়ে।

কুলসুম আক্তার সুমী – কবি।

আরও পড়ুন