মেঘলা আকাশ
রাবেয়া সুলতানা মুনা
আকাশে ভীষণ মেঘ। যে কোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। জানালার পাশে চেয়ারে বসে ভাবছিলাম আপুর কথা। হঠাৎ কি হয়েছিল আপুর, এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল! হঠাৎ মনে হলো প্রিয়া আপুর ডায়েরির কথা। আপু ডায়েরি লিখতো নিয়মিত ,ডায়েরির মলাট উল্টাতেই একটি পাতায় চোখ আটকে গেল ।
“সুখের আশায় ছেড়ে যেতে চাও আমায়। তাই তো! যাও, ছেড়ে দিলাম তোমাকে, থাকো সুখে। আমিও আর তোমাকে ধরে রাখবো না। তোমাকে বলবো না কষ্টে আছি তুমিহীনা, বলবো না আগামী রাত গুলো কাটবে নিদ্রাহীন। সত্যিই বলবো না! ছেড়ে দিলাম তোমায়।
ফারাবীর সাথে পরিচয় আমার অনলাইনে। তারপর থেকে প্রতিদিন অনেকটা সময় ফোনে কথা হতো। ফারাবী মাঝে মাঝে গান শুনাতো। আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম। নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলি। ধীরে ধীরে আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই। এক সময় ওকে আমি ভালোবাসার কথা বলি, ফারাবীও বলে আামাকে ভালোবাসে,ভালোই কাটছিল আমাদের দিনগুলো। কিন্তু আমার আনন্দ বেশী দিন থাকলো না, কিছুদিন পর থেকেই ফারাবী বদলে যেতে লাগলো। কিন্তু আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না তোমার সাথে কথা না বলে থাকা। কারণ আমরা এক সময় একে অপরের সাথে সব কিছু শেয়ার করতাম। দুঃখ, হাসি, কান্না, আনন্দ, ভয়, বেদনা, ভালোলাগা সবকিছু। কিন্তু তোমার সাথে আজ আমার এই পৃথিবী শেয়ার করতে কষ্ট হচ্ছে। তাই এই পৃথিবী তোমাকে দিয়ে আমি চললাম।”
আপুর ডায়েরি পড়ে চোখ দুটি ভিজে গেল আমার। আজ দু’দিন হলো প্রিয়া আপুর মৃত্যুর। ভালোবাসার মানুষটির ফিরে আসার অপেক্ষায় আর থাকা হলোনা তার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়েরি রেখে দিলাম। তখনি কাছে থাকা আপুর মোবাইলটা বেজে ওঠে,কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি একটা মেসেজ এসেছে। ফারাবী লেখা সেভ করা নাম্বার থেকে
“জানি প্রিয়া আমার অপরাধের কোন ক্ষমা নেই, তুমি সত্যিই অসাধারণ একটা মেয়ে। আমি তোমায় বলতে পারিনি, আমি বিবাহিত, আমি যদি বিবাহিত না হতাম তাহলে সত্যিই তোমাকে আমার করে নিতাম। তাই বলছি আমাকে ঘৃণা করো, কিন্তু খুব বেশি ঘৃণা করতে যেওনা। তাহলে আর ভুলতে পারবে না। অচেনা একটা প্রতারক এর জন্য নিজেকে কষ্ট দিওনা প্লিজ”
মেসেজটা পড়ে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো। কিছু না করতে পেরে জানালা দিয়ে মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলাম ।
বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, ঝুম বৃষ্টি, এমন বৃষ্টির দিনে আপুর গুনগুনিয়ে গাওয়া গান শুনতে পারবো না কখনো, এটা ভাবতেই বারিধারা নামলো দু’চোখ বেয়ে ।
লেখিকা : রাবেয়া সুলতানা মুনা