Ads

কছের দাদার ম্যাট্টিক পরীক্ষা

।। হোসনে আরা মেঘনা ।।

পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট পেতে চাইলে অনেক পড়ালেখা করতে হয়, পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম বলতে পড়ালেখার কাজে পরিশ্রম, ফসলের জমিতে হাল বহা কিংবা সাংসারিক কোনো কাজে পরিশ্রম করার কথা বলছি না।

কছের দাদা ছিল এমন একজন ছাত্র যে অনেক পরিশ্রম করতো সাংসারিক কাজে। সকাল বিকেল পড়ার সময় পড়ার ভয়ে সাংসারিক অনেক কাজ করত।

ভোরে ঘুম থেকে জেগে নামাজ সেরে সবাই পড়তে বসে, আর কছের দাদা গোরুর গোহালে গিয়ে গোরু বের করে। পোয়াল কেটে গোরুকে খেতে দেয়। ওর বাবা তাতে ভীষণ খুশি। বাবা যখন হাল বহাতে যেতো কছের দাদা ঢিল মুগুর নিয়ে বাবার পিছে পিছে যেতো। বাবার জন্য হালের জমিতে ভাত পানি নিয়ে যেতো। স্কুলে যাওয়ার ভয়ে কছের দাদা সংসারের এই কাজগুলো করতো।

চেরু ছিল খুব জোকার টাইপের লোক। কছের দাদাকে বলতো কচ্চা (কছের চাচা)। এভাবে ফছিরকে ফোচ্চা, খুরশেদকে খুচ্চা, হুসেনকে হুঁচ্চা —-এই রকম সম্বোধন করতো।

ছোট চাচা ছিলেন কছের দাদার ক্লাসমেট। তিনিও চেরুর মত করে স্কুলে যাওয়ার সময় হাঁকতেন —–

– ওওও কচ্চা, ইসকোলোত য্যাবেন্নাহ ?

– না রে বাআআআ। বাবার নামে বিলোত ভাত লিয়্যা যাওয়া ল্যাগবে। তুমি যাও, হামি পরে যামুনি।

পরে যামুনি বলে কিন্তু যায় না। মাঝে মধ্যে দু’এক দিন স্কুলে যায় বটে কিন্তু একটা বিষয়ও পড়তে পারে না। এভাবে কছের দাদা দিনের পর দিন পড়ার সময়গুলো বাড়ির কাজে ব্যয় করেছে।

একদিন ছোট চাচা বললেন,

– ক্যারে বা, এইভাবে ইসকোল কামাই করলে পরীক্ষ্যাত পাস করব্যার প্যারবেন? ম্যাট্টিক পরীক্ষ্যার সময় তো কাছাইয়াই আ্যালো।

– কি যে কস রে বা, পাস করমু না মানে !! পাস করা কোনো ব্যাপার ? পরীক্ষ্যা আসুক দেকিস, টেজোত ম্যাইরা দিমু।

কছের দাদার কথা শুনে সেদিন সবাই হোহো করে হেসে উঠেছিল।

ম্যাট্টিক পরীক্ষার আর মাত্র এক মাস বাঁকি। কছের দাদার হঠাৎ মনে হলো একদম কিছু না পড়লে তো পরীক্ষায় কিছুই লিখতে পারবে না। তাই দিনের কাজ ছেড়ে রাতের ঘুম ছেড়ে লেখাপড়ায় ভীষণ মনোনিবেশ করলো।

রাত জাগার চোটে পরীক্ষার তিন দিন পূর্বে এমন সর্দি কাশি আর জ্বর শুরু হলো যে কছের দাদা আর বাঁচেই কি না। শেষ পর্যন্ত কছের দাদার এবারের মত আর পরীক্ষা দেওয়া হলো না।

আগের দিনে নবম শ্রেণিতে নাম রেজিষ্ট্রেশন করার পর এক রেজিষ্ট্রেশনে তিন বার পরীক্ষা দেওয়া যেতো। কছের দাদা পরে আরও দুই বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু প্রতি পরীক্ষার এক মাস আগে রাত জেগে পড়ার কারণে পরীক্ষার সময় কঠিন অসুখে ধরে। তাই আর পুরো পরীক্ষাটা দেওয়া হয়ে উঠেনি। কছের দাদার কপালে ম্যাট্টিক পাস জোটেনি, সারা জীবন আন্ডার ম্যাট্টিক পাশই রয়ে গিয়েছিল।

 

আরও পড়ুন