Ads

বেনু_ আপা

বেনু আপা দেখতে খুব মিষ্টি তবে ক্ষীণকায়া নন। খেতে পারেন বেশ ভালোই আর সবচেয়ে ভালো পারেন হাসতে আর হাসাতে।

মন ভালো করার জন্য, একটু আনন্দময় সময় কাটানোর জন্য বেনু আপাদের বাসায় আমার প্রায়ই যাওয়া হতো। বেনু আপার সাথে যদি কয়েকদিন দেখা না হতো বা কথা না হতো তখন কেমন যেন লাগতো। মনে হতো অনেক দিন ধরে জ্বরে ভুগছি।

বেনু আপা লেখাপড়ায় বেশ ভালো কিন্তু উনি লেখাপড়া মোটেও পছন্দ করতেন না। প্রায়ই বলতেন, ” শোন আমাদের উন্নতি অবনতির মুখে। অত লেখাপড়া শিখে কি হবে! ”

বেনু আপার কাছে দুনিয়ায় সব বিষয়ই কৌতুকময় হয়ে উঠে। একবার উনি রাত আটটায় ফোন দিয়ে বললেন, ” ভোম্বল শোন, মিনির একটা অংক কোন ভাবেই করতে পারছি না একবার আসবি?” আমি বললাম,” কোন অংক?”
—— ঐ যে বানরের বাঁশের মাথায় চড়ার অংক। বাঁশ কিনেছি, তেলও মাখিয়েছি কিন্তু বানর পাইনি। তুই একবার এসে উঠে দেখাবি।
বেনু আপার কথা শুনে হাসবো না কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না। শুধু রাগে মুখ দিয়ে বেরুলো, ” ফোন রাখো।”
——- রাগ করিস কেন, তোর আর বানরের মধ্যে তো শুধু একটাই পার্থক্য…. লেজের। শোন, তুই চট্ করে চলে আয়। তোর জন্য পাকা কলা কিনে রেখেছি।

বেনু আপার বোনের মেয়ে মিনি কে পড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছি। মিনি, বেনু আপার চেহারা, শারীরিক গঠন সবই পেয়েছে শুধু মেধাটা পায়নি। মিনি কে পড়াতে গেলে, নিজের পড়াটা ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। একদিন মিনি কে পড়াতে গিয়ে প্রচন্ড মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বেনু আপা কে গিয়ে বললাম, ” আমি মিনিকে আর পড়াতে পারবোনা। ”
——- এই নে দুই টাকা। নাস্তা তো থাকছেই এর সাথে আজকে থেকে যুক্ত হলো পড়ানো শেষে দুই টাকা। এখন যা, পরশু দিন সময়মতো চলে আসিস।
আমি দুই টাকা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বের হলাম আর মনে মনে বলতে থাকলাম, “একেই বলে লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। ”

বেনু আপার ভাই নিজের পছন্দে বিয়ে করেছেন। ভদ্রমহিলা অপূর্ব সুন্দরী এবং সেই সাথে আহ্লাদী। সুন্দরী মেয়েরা একটু আহ্লাদীই হয়। কিন্তু বেনু আপা এই আহ্লাদ টা কোন ভাবেই নিতে পারছেন না।

বিয়ের তিন চার দিন পর বেনু আপা সকাল বেলায় নাস্তা তৈরী করছেন। উনার নতুন ভাবী পাশে বসে চা খাচ্ছেন। উনার নতুন ভাবী হঠাৎ বলে উঠলেন, ” আচ্ছা বেনু, এই যে তুমি একটু পোড়া পোড়া আলু ভাজি করো, এটা কি ভাবে করো?”

—— ও মা ভাবী তুমি জানো না! তাহলে শোন, প্রথমে একটা কড়াইতে তেল, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আলু সব দিবে। তার আগে অবশ্য চুলা জ্বালিয়ে নিবে। কড়াই গরম হলে হাত দিয়ে নেড়ে নেড়ে ভাজিটা উল্টেপাল্টে দিবে আর হাতের তালুর পাশটা কিছুক্ষণ পর পর দেখবে। যখন দেখবে হাতের তালুর পাশের চামড়াটা পুড়ে পুড়ে গেছে, তখন বুঝবে ভাজি টাও হয়ে গেছে।

বেনু আপার ভাবী পরে আর কখনোই বেনু আপার সামনে আহ্লাদ করেননি।

মিনির সামনে পরীক্ষা। বেনু আপা মিনিকে পরীক্ষার সময় স্কুলে আনা নেওয়ার কাজ স্বেচ্ছায় নিয়েছেন। বেনু আপার ভালোই লাগে, মিনিকে স্কুলে আনা নেওয়া করতে। একদিন মিনিকে স্কুলে দিয়ে বেনু আপা অন্যান্য গার্জিয়ানদের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন। ঐ গার্জিয়ানদের মধ্যে একজন হঠাৎ বলে উঠলেন, ” ভাবী, ডিম কি ভাবে হাফ বয়েল করতে হয়, আমি না বুঝতেই পারি না। আপনারা কি ভাবে বুঝেন?”
সাথে সাথে বেনু আপা উত্তর দিলো, ” ও মা, ভাবী আপনি জানেন না ডিম কি ভাবে হাফ বয়েল করতে হয়? তবে শুনেন, চুলায় আগুন দিয়ে একটা পাতিলে পানি দিবেন। পানির মধ্যে একটা ডিম আর একটা আঙ্গুল দিবেন। যখন দেখবেন আঙুল কুঁচকে গেছে তখন বুঝবেন ডিম হাফ বয়েল হয়ে গেছে। ” বলেই বেনু আপা বেশ চওড়া একটা হাসি দিলেন। আর ঐ ভদ্রমহিলার কথা, না-ই বা শুনলেন।

বেনু আপার সাথে আমি আর আমার ছোট আপা এক বাসায় বেড়াতে গেছি। ঐ বাসায় আমাদের কে নাস্তা দিয়েছে সাতটা পাপড়। আমরা তিনজন দুটা দুটা করে ছয়টা পাপড় সাবাড় করে ফেললাম। প্লেটে ছিল একটা পাপড়। আমার ছোট আপা দেরী না করে ঐ একটা পাপড় অতিদ্রুত মুখের মধ্যে চালান করে দিলো। আমি আর বেনু আপা বিষ্ময় সূচক দৃষ্টিতে আপার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ বেনু আপা সবকিছু ভুলে আপাকে বকতে লাগলো, ” ছিঃ ছিঃ ছিঃ, তুই এমন। একটা গোটা পাপড় একাই খেলি। একটু ভাগও তো দিতে পারতি। ছিঃ। ”

বেনু আপা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উনার অপারেশন হবে। সকালে নার্স এসেছে উনাকে তৈরী করতে। নার্স এসে দেখে বেনু আপা তৈরী। তবে একটু বেশীই তৈরী। বেনু আপা মুখে পাউডার দিয়েছেন। ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক আর কপালে একটা টিপ। নার্স অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি এভাবে সেজেছেন কেন?”
বেনু আপা লজ্জা লজ্জা চেহারা করে বললেন, ” কেন, ওটিতে পুরুষ ডাক্তার থাকবেনা বুঝি!”

এই হলো আমাদের বেনু আপা, বেদনা যার কাছ থেকে অনেক দূরে থাকে।

লেখকঃ শোয়াইব আহমদ, এ্যাডমিন মহীয়সী প্যানেল,কবি ও সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন