।। জামান শামস ।।
পৃথিবীর গভীরতম সম্পর্কগুলোর একটি হলো স্বামী-স্ত্রী। এই সম্পর্ক যদি গভীর ও গাঢ় হয় তাহলে এই নশ্বর পৃথিবীও মনে হবে স্বর্গরাজ্য। ইসলামে এটাই একমাত্র বৈধ ও বেহেযাবী সম্পর্ক। বন্ধুত্ব তো স্বামী স্ত্রীতে। একই সংগে স্বামীও বন্ধু পর পুরুষও বন্ধু-এটা অশালীন ও অবৈধ। বর্তমান স্বামীও বন্ধু আবার প্রাক্তনও বন্ধু-এটাও অবৈধ ও অশালীন। আগেই বলেছি, ইসলাম স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে আর কোন তৃতীয় ব্যক্তির আনাগোনা এলাউ করে না। যিনিই তৃতীয়,তিনিই শয়তান। সম্পর্কের এমন গভীরতায়ই সুখ বইবে জীবনের সর্বময়।স্বপ্নময় দিন গত হবে অতি সহজে। জীবন কখনো তৃষ্ণাতুর হবে না। জীবন কখনো কষ্টকর মনে হবে না।
স্বামী-স্ত্রী দুজন দুজনার হলেই শান্তির বাতাস বহে জীবনের আকাশে। অর্থবিত্ত আর ঐশ্বর্য কিন্তু সাংসারিক জীবনের মূল চাবিকাঠি নয়। চাবিকাঠি হলো দুজনের বনিবনা, প্রেম-প্রিতি ভালোবাসা। একজন আরেকজনের পৃথিবী হওয়া। স্বামীর ভেতর স্ত্রী তার নিজের পৃথিবী খুঁজে নেয়া, স্ত্রীর ভেতর স্বামী তার নিজের পৃথিবী খুঁজে নেয়া। একজন ছাড়া অন্যজন দিশাহারা হওয়া।
হাজার বছরের জীবনযাত্রায় পৃথিবী এর প্রমাণ দেখেছে বহুবার; লক্ষকোটি টাকার সংসারও দুজনের অনলে পুড়ে ছাই হয়েছে, আবার শূন্যপাতার পথের ধারের সংসারও হয়েছে স্বর্গময়। এই সবকিছুর মূলে রয়েছে দুজনার সৌজন্যমূলক আচার আচরণ। আমাদের সমাজে যার উপস্থিতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। মেকী ভালোবাসা শুধু উপরে গতরে, ভিতরটা হয়তো ফাঁকা নয়তো অন্য কারো জন্য স্থির করে রাখা,অতি গোপন। আমার কথা পসন্দ না হলে গত দু’তিন মাসের সুইসাইডাল কেসগুলো স্টাডি করেই দেখুন। আরো দেখুন, বিয়ে ভাংগা সংসারগুলোর করুন আর্তিগুলো।
আমাদের সমাজে যত উপদেশ সব স্ত্রীকে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর কেমন আচরণ করতে হবে’ এই সম্পর্কে দশ বইয়ে দশটা উপদেশ অনায়াসেই পেয়ে যাবেন; এর বিপরীতে স্ত্রীর সঙ্গে তার স্বামী কী আচরণ করবে সেই সম্পর্কে দশ বই বা উপদেশ পেতে আপনাকে বেগ পেতে হবে। হাজারটা বই ঘেঁটেও এমনটা পাবেন না, যেখানে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রীর সঙ্গে তার আচরণের উপদেশ দেয়া হয়েছে। মেয়েদের দোষ ধরতে সবাই চোখ খাড়া,স্বামীরা রাজারও রাজা। তাদের কোন দোষ থাকতে নেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে নারীর অপরিণামদর্শী ও উদ্ধত আচরণ,স্বামীর আত্মীয় স্বজনের প্রতি বৈরীতা এবং চরম অনৈতিক পরকীয়াও সাংসারিক সুখ বিনষ্টের কারণ হয়।
আরও পড়ুন-
স্বামী-স্ত্রী তালাকের পরও ভালো বন্ধু ! নির্লজ্জ সংস্করণ।। ২য় পর্ব
আমাদের দেশের সমাজে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছিন্নতার অধিকাংশ ঘটনা কিন্তু স্বামীর আচরণ থেকেই উদ্ভব হয়। অথচ একটি সংসার টিকে থাকতে স্ত্রী যে ধরণের আচরণ করা জরুরি তার থেকে শতগুণে বেশি জরুরি স্বামীর আচরণ ঠিক করা। একজন স্ত্রী চাইলেই একটি সংসার ভেঙ্গে দিতে পারে না। এর বিপরীতে একজন স্বামী চাইলেই ভেঙ্গে দিতে পারে একটি সংসার, যদিও স্ত্রী থাকে নির্দোষ। আমাদের সমাজের তালাক ডিভোর্স বা বনিবনা অনুপস্থিতির ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখায় এর মূল দায়ভার আশি পার্সেন্ট পুরুষের ওপর। আর যত ওয়াজ নসিহত স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।
ইসলাম এই বিষয়টার প্রতি সর্বাদিক গুরুত্ব দিয়েছে। কঠোর ভাষায় স্বামীকে হুশিয়ারি করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে স্ত্রীর প্রতি তার আচার-আচারণ ও ব্যবহাববিধিতে। একশ্রেণির পুরুষ আছে যারা স্ত্রীকে ঘরের বুয়ার মতো ব্যবহার করতে চায়। আরেক শ্রেণির আছে যারা মনে করে স্ত্রীকে ঘরে তুলে তার প্রতি অনুগ্রহ করেছে। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীর অধিকারকে সমান করে দিয়েছে। আল কুরআনে ঘোষণা হচ্ছে- هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ নারীরা তোমাদের পোশাক স্বরূপ, তোমরাও নারীদের পোশাক স্বরূপ’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৭) এই আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট বুঝা যায়-
১. পোশাকের কাজ হল শরীরকে ঢেকে দেয়া। পোশাক পরিধানের অন্যতম উদ্দেশ্য যে তার শরীরকে আবৃত করবে। শরীরের যে অংশ পোশাক আবৃত থাকে সে অংশের ত্রুটিও ঢাকা থাকে। স্বামী স্ত্রী পরস্পরের দোষত্রুটিও পরস্পর এভাবে ঢেকে রাখবে। এ নিয়ে অহেতুক কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। একজন উত্তেজিত হলে অন্যজনও সমান্তরাল না চলে ধৈর্যধারণ করবে। পরস্পর পরস্পরকে নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সাথী ভাববে যেমনটি পোশাকের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। পোশাকের জন্য দেহ আবশ্যক তেমনি দেহের জন্য পোশাকের প্রয়োজন অনিবার্য।
২. পোশাক গায়ের সাথে লেগে থাকে। দেহ ও পোশাক বিচ্ছিন্ন নয়। উভয়ের মাঝে আর কোন অন্তরাল নেই। স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনও এরূপ পরস্পর যুক্ত থাকবে, তাহলে তাদের মধ্যে প্রগাঢ় সম্পর্ক থাকবে আল্লাহ পাক যাকে ‘মাওয়াদ্দাতুন অরাহমাত’ বলেছেন। উভয়ের দেহ, মন, চিন্তা, চেতনা পরস্পর কল্যাণকামীতায় কোন কিছু আড়াল থাকবে না। এর মধ্যে তৃতীয় কোন ব্যক্তির আনাগোনা থাকবে না।
৩. পোশাক বাহিরের ধূলিকণা আবর্জনা নিজের উপর নেয় এবং পরিধান কারীকে এসবের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী পরস্পর পরস্পর কে এরূপ আগলে রাখবে যেন কেউ নিরাপত্তাহীন হয়ে না পড়ে। স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে নেক্কার পরহেজগার ছালেহীন হওয়ার পথে উৎসাহ দিবে। স্ত্রী স্বামীকে সুদ, ঘুষ, মদ, পরকীয়া থেকে বাঁচাবে আবার স্বামীও স্ত্রীকে বেপর্দেগী সম্পদ কামনা ও অসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা করবে।
আরও পড়ুন-
স্বামী-স্ত্রী তালাকের পরও ভালো বন্ধু ! নির্লজ্জ সংস্করণ ।। ১ম পর্ব
৪. পোশাকের নিজস্ব কোন ব্যবহার যোগ্যতা নেই। এর নিপুণ সৃষ্টি শুধুমাত্র দেহের ব্যবহারের জন্য। আবার দেহ নিজ থেকেও আবৃত নয় যেমন পশুদের রয়েছে। পশুদের দেহাবরণ এমনভাবে তৈরী তা আপনা থেকেই শীত উষ্ণতা, বৃষ্টি ধুলি ময়লা থেকে দেহকে রক্ষা করতে পারে। তেমনি উষ্ণতাটাবে নারী কিংবা এককভাবে পুরুষ একটা পরিবার বা সমাজ নয়। নারী পুরুষের সম্মিলিত ভূমিকায় একটা সার্থক পরিবার ও সমাজ গঠিত হয়।
৫. নারী ও পুরুষ একজনের জীবন ও সম্মানের নিরাপত্তা অপরজনের উপর সমর্পিত। বহু স্বামী এমন আছেন যাদের কাছে স্ত্রীদের যে কোন কাজই সমালোচিত এবং সব সময় অসন্তোষ প্রকাশ করে। কোন ভাল কাজ হলে তার প্রশংসা হয় কম। আবার বহু স্ত্রী এমন আছে স্বামীদের দুর্বলতা অন্যের কাছে বলে বেড়ায় স্বামী কোন একটা ভুল করলে তার সংশোধনের জন্য হিতোপদেশতো দূরের কথা বরং রীতিমত খোটা দিতে শুরু করে এই বলে যে তোমার সংসারে এসে জীবনেও শান্তি পেলাম না। এর ফলে দাম্পত্য জীবন সন্দেহপূর্ণ হয়ে উঠে। ক্রমশ: সম্পর্ক শিথিল হতে শুরু করে।
তাই, ইসলাম স্বামীকে খুবগুরুত্ব ও সতর্কতার সঙ্গে বলে দিয়েছে স্ত্রীর সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করতে হবে। ইসলাম স্বামীকে এটা বলে দেয়নি যে, হে স্বামী তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে এটা করবে, ওটা করবে না, এইভাবে করবে, ওইভাবে করবে না’। এই টাইপের আদেশ দেননি, দিয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে অন্যকথায়। সেই কথা কী? আয়েশা ছিদ্দিকা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ، وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম পুরুষ সেই যে, তার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম পুরুষ। (ইবন মাযাহ: হাদীস নং ১৯৭৭, তিরমিযী: হাদীস নং ৩৮৯৫) অর্থাৎ স্ত্রীর সনদে স্বামী উত্তম। পুরুষের ভালোমন্দের ভার হলো তার পরিবার। যে পরিবারের সঙ্গে ভালো সে-ই উত্তম পুরুষ। সমাজে এমন অনেক মানুষ পাবেন যারা অন্যকে উপদেশ দেয় এই মর্মে স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। আর নিজে ঘরে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করে।
ইসলাম এটাকে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ করলো কেন? যুদ্ধের ময়দানে লড়ায়ে উত্তীর্ণ হলো সে ভালো বীর হয়, ভালো পুরুষ হয় না। আর পরিবারের সঙ্গে সদাচরণ করলে ভালো পুরুষ হয়? কারণ কী? নারী যখন বউ হয়ে শ্বশুড়বাড়ীতে এসে; এখানে তার আপন বলতে একমাত্র স্বামীই। দুর্বল মুহূর্তে সবাই আঘাত করতে পারে, কিন্তু ওই মুহূর্তে কেউ তার পাশে থাকে না। আপনি স্বামী যদি ওই দুর্বল মুহূর্তে সদাচারণ করতে পারেন তাহলেই আপনি সর্বোত্তম পুরুষ।
পবিত্র কোরআন হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আরচণ করবে। স্বামীর আচরণ সম্পর্কে ইসলাম খুবই সতর্ক। জাহেলি যুগে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে দাস-দাসির মতো আচরণ করতো। কোনো কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র মনের ইচ্ছেতেই স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন করে দিত। শুধু তাই নয়, বিচ্ছিন্নতার সময় স্বামীরা চাইতো যে, যেসব অলঙ্কার বা অন্যান্য পরিধেয় বস্ত্রসমূহ স্বামী দিয়েছে এগুলোও ফিরিয়ে দিক। আর জন্য তারা নির্যাতনও করতো প্রচুর। সেই কুসংস্কারকে সমাজ থেকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য আল্লাহ তায়ালা আদেশ দেন-وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদাচরণ করো (সূরা নিসা আয়াত ১৯)। এই অংশটুকুর ব্যাখ্যাতে ইবনে কাসির (রহ.) বলেন- স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণের অর্থ হলো স্ত্রীদের সঙ্গে তোমরা উত্তম কথা-বার্তা সুন্দর আচার-আচরণ এবং তোমাদের বেশভুষাও সাধ্যানুযায়ী সুন্দর রাখবে। এমন সুন্দর যেমনটা তোমরা তাদের থেকে আশা করো।
আরও পড়ুন-
এই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাফসিরে মাআরিফুল কোরআনে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।বলা হয়েছে, জাহিলিয়াত আমলে নারীদের ওপর স্বামীর পক্ষ থেকে উৎপীড়ন হতো এবং ওয়ারিসদের পক্ষ থেকেও। কোনো স্ত্রীলোকের স্বামী মারা গেলে ওয়ারিসরা তার সঙ্গে যদৃচ্ছা ব্যবহার করতো। মন চাইলে নিজেই বিয়ে করে নিতো কিংবা অন্য কারো বিবাহে আবদ্ধ করে দিতো। মন না চাইলে কারো কাছে বিয়ে দিতো না, বিয়ে বসতেও দিতো না। এমন কী তাদেরকে বন্দি করে রাখতো। যাতে অর্থ উপার্জনের পথ প্রশস্ত হয় এমন অবস্থায় স্ত্রীলোকটি হয়তো স্বামীর দেয়া ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে মুক্ত হতো, না হয় ওই অবস্থায় তাদের মৃত্যু হতো।
নারীর প্রতি সেই দুরবস্থা দূর করার জন্য আল্লাহ বলেন وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ। এই নাতিদীর্ঘ আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে যেমন ব্যবহার সে স্ত্রী থেকে আশা করে। ইমাম গাজাযী (রহ.) ইয়াহইয়াউ উলুমুদ্দিনে লিখেন ‘সকলের জেনে রাখা আবশ্যক যে, স্ত্রীদের নানান হক থেকে এটিও একটি হক যে, তার সঙ্গে স্বামী উত্তম ব্যবহার দেখাবে, উন্নত চরিত্রের পরিচয় দিবে। স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণের অর্থ এই নয় যে, শুধু তাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। বরং স্ত্রী থেকে কষ্ট পেলে সেই কষ্ট সহ্য করে নেয়া। তাফসিরে কুরতুবিতে এই আয়াতের ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে, এই আয়াতে শুধু স্বামীকে নয়, স্বামী, স্বামীর অভিভাবক, বড়ভাই, শ্বশুড় শাশুড়ীসহ সকল আত্মীয়বর্গকেও স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণের আদেশ দেয়া হয়েছে।
সদাচরণে বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই সতর্ক থাকতেন। এক হাদিসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَأَلْطَفُهُمْ بِأَهْلِهِ হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন- সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ মুমিন ওই ব্যক্তি যে আচারণে সর্বোত্তম এবং পরিবারের সঙ্গে সদয় আচরণকারী ও বিনয় বন্ধুসুলভ’ (তিরমিযি, হাদিস নং ২৬১৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের শেষ ভাষণ তথা বিদায় হজের ভাষণেও স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের নসিহত করে দিয়েছে। ঘোষণা দিলেন استوصوا بالنساء خيراً তোমরা নারীদের সঙ্গে সদয় আচরণের উপদশ গ্রহণ করো। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর সুন্দর আচরণ বা স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর সুন্দর আচরণ শুধুমাত্র সংসার সুখি হওয়া জন্য নয়, প্রতিজন স্বামীকে তার স্ত্রীর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছ এর জবাবদিহিতা করতে হবে কাল কিয়ামতের দিন, এমনভাবে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে এর জবাবদিহিতা করতে হবে কাল কিয়ামতের দিন।
আরও পড়ুন-
একথা আমরা জানতে পারি তিবরানির হাদিস থেকে ‘হজরত আবু আইয়ুব আনসারী রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিরোধ মীমাংসা করা হবে তাহলো এক স্বামী ও তার স্ত্রীর বিরোধ। আল্লাহর শপথ! (সে সময়) স্ত্রীর জিহ্বা কথা বলবে না, বরং তার হাত-পা সাক্ষ্য দিবে, পৃথিবীতে সে তার স্বামীর সঙ্গে এই এই আচরণ করেছে! আর স্বামীর হাত-পাও সাক্ষ্য দিবে যে, সে তার স্ত্রীর সঙ্গে এই এই ভালো আচরণ বা এই এই খারাপ আচরণ করেছে। অতঃপর আল্লাহর এজলাসে মনিব ও কর্মচারীসংক্রান্ত মামলা উঠবে। সেদিন কোনো আর্থিক জরিমানা করে বিরোধ মেটানো হবে না। বরং মজলুমকে জালিমের নেক আমলগুলো দিয়ে দেয়া হবে এবং মজলুমের বদ আমলসমূহ জালিমের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। অবশেষে প্রতাপশালী অহংকারী অত্যাচারীদের লোহার জিঞ্জিরে পেঁচিয়ে হাজির করা হবে। অনন্তর বলা হবে তাদের দাবড়িয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাও।’
চলবে…
লেখকঃ কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।
ফেসবুকে লেখক জামান শামস