Ads

স্বামী-স্ত্রী তালাকের পরও ভালো বন্ধু হতে পারে কি?।। ১ম পর্ব

।। জামান শামস ।।

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কই ইসলামে একমাত্র বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক যতক্ষণ তা অটুট থাকে। কুরআন,হাদীস ও ইসলামী স্কলারগণের বিভিন্ন লিখায় এটি সুস্পষ্ট। ইসলামে যৌনতা বিষয়ক উইকিপিডিয়ার লেখাটি অনেক রেফারেন্স উল্লেখ করে তা সমৃদ্ধ আকারে ছেপেছে,যে কেউ তা পড়ে নিতে পারেন। বৈবাহিক সম্পর্ক যেভাবেই অবসান ঘটুক তা আর পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে না পুনরায় বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত না হলে। অর্থাৎ আপনি স্বামী হলে পরপুরুষ আর স্ত্রী হলে বেগানা নারী। এখানে কোন ফতোয়া চলে না। সমাজ বিজ্ঞান, সাইকোলোজীর ব্যাখ্যাও অচল। কয়েক প্যারা পর আবার এই আলোচনায় ফিরবো।

ইসলামে বিবাহবহির্ভূত বিপরীত লিঙ্গের মানুষের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎসহ তাবৎ যৌন সম্পর্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রবল এবং কেবলমাত্র বৈবাহিক যৌনতা স্বীকৃত। ভালোবাসা ও নৈকট্যের মহৎ উপকারিতা হিসেবে কুরআন ও হাদিসে বিবাহ নামক অনুমোদিত যৌন সম্পর্ক সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। এমনকি বিয়ের পরেও কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন কোন পুরুষ তার স্ত্রীর রজঃস্রাবকালীন সময়ে এবং সন্তান প্রসবের পর একটি নির্ধারিত সময়কালে (৪০ দিন) তার সাথে সহবাস করতে পারবে না। বিবাহ বহির্ভূত যৌন আচরণ কঠিন পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রজননশীল ধর্ম হওয়ার খাতিরে, ইসলাম বৈবাহিক যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে বর্ধনশীল বংশবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। গর্ভপাত (গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যতিরেকে) এবং সমকামিতার মত কর্মকাণ্ড ও আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । তবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ঈমানদার চিকিৎসকের পরামর্শে অস্থায়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ অনুমোদিত। এগুলো এক প্যারায় বর্ণিত সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন।

জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়ে পড়ে তিক্ত ও বিষাক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমনভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকে না;কেউ কাউকে এক লহমার জন্যেও সহ্য করতে পারে না ঠিক তখনই এই চূড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন সেখানেই তালাক ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

দাম্পত্য জীবনে ফাঁটল ধরে যে কারণে

 

ইসলামে বিবাহ যেমন পবিত্র ও ঘনিষ্ট সম্পর্ক তেমনি তালাক অনুমোদিত হলেও সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়।

ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ أَبْغَضُ الْحَلَالِ إِلَى اللَّهِ الطلاقُ আল্লাহ তা’আলার কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট হালাল কার্য হলো তালাক। ( আবূ দাঊদ ২১৭৮, ইবনু মাজাহ ২০১৮, আত্ তারগীব ১২৩৮)।

একান্তভাবে দু’জন নারী পুরুষের মধ্যে চূড়ান্তভাবে সংসার আর ধরে রাখা সম্ভব নয়,কেবলমাত্র এমন পরিস্থিতিতেই তালাক অনুমোদনযোগ্য। আমরা তালাকের পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিলে বুঝতে পারবো,বিষয়টা কত অপছন্দের। তার আগে বৈবাহিক সম্পর্কের স্পিরিট নিয়ে দু’চার কথা বলি।

আল্লাহ তা’আলা পৃথিবী আবাদ রাখার জন্য মানুষকে খলীফারূপে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে এমন প্রকৃতি ও প্রবৃত্তি দান করেছেন যাতে সে অতি সহজে নিজের বংশ বৃদ্ধি ও আবাদ করতে পারে। ক্ষুধা-নিবৃত্তি করে যেমন তার নিজের অস্তিত্ব অবশিষ্ট থাকে; তদ্রূপ যৌনক্ষুধা নিবৃত্তি করলে তার বংশ বাকী থাকবে। এই যৌনক্ষুধা এমন এক ক্ষুধা, যার তাড়নায় ক্ষুধার্ত মানুষ নিজেকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ ও আয়ত্তে রাখতে পারে না। ক্ষুধা উপশান্ত না হওয়া পর্যন্ত মানুষ প্রকৃতিস্থ হতে পারে না।

ইসলাম বিবাহকে বৈধ করেছে এবং ব্যভিচারকে অবৈধ ও হারাম ঘোষণা করেছে। নারী-পুরুষের এই মিলনকে যদি নিয়ন্ত্রিত করা না হতো, তাহলে পৃথিবীতে সুশৃঙ্খল সমাজ ও সংসার গড়ে উঠতো না। স্থায়ী হতো না প্রেম ও সম্প্রীতি। সেই দাম্পত্য গড়ে উঠতো না, যাতে থাকে একের পক্ষ থেকে অন্যের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থত্যাগ ও উৎসর্গ।এ এমন এক সম্পর্ক যাকে আল্লাহ “মাওয়াদ্দাতুন অরাহমাহ” বলেছেন, আর কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা একে অপরের পোশাক।”

وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَكُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِكُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡكُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَكُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَكَّرُوۡنَ

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা রুম : আয়াত ২১)

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّهُنَّ

তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ`। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

অন্যদিকে এর বিপরীত বিবাহ বহির্ভূত জ্বেনার সম্পর্ককে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।এর ত্রিসীমানায়ও না যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-

وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا

আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। (সূরা ইসরা :আয়াত ৩২)

সমাজের মানুষরা যেন অসভ্য ও উচ্ছৃঙ্খল না হয়ে উঠে, লাগামহীন যৌনাচারে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব না ঘটে এবং মানুষ পশুর পর্যায়ে নেমে না যায়। তাই তো ইসলামে  ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে কঠোরতম শাস্তি-ব্যবস্থা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴾

‘‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী—ওদের প্রত্যেককে একশত কশাঘাত কর; যদি তোমরা আল্লাহতে ও পরকালে বিশ্বাসী হও, তাহলে আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে অভিভূত না করে। আর মু’মিনদের একটি দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’’(সূরা আন-নূর : ২)

আরও পড়ুন-

জনসমক্ষে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা প্রদর্শন কি গ্রহণযোগ্য?

আবূ হুরায়রাহ্ এবং যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, দুই বিবদমান ব্যক্তি তাদের অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তন্মধ্যে একজন বলল, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন। অপরজনও বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অবশ্যই আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন এবং আমাকে এতদসম্পর্কে বলার অনুমতি দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা বল! লোকটি বলল, আমার ছেলে তার চাকর ছিল এবং সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করেছে। অতঃপর লোকেরা আমাকে বলল, আমার ছেলের শাস্তি হলো ’রজম’ (পাথর নিক্ষেপে হত্যা), কিন্তু আমি রজমের পরিবর্তে একশত ছাগল ও একটি দাসী ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে আদায় করেছি।

পরে আমি ’আলিমগণের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা জানালেন যে, আমার ছেলের শাস্তি হলো একশত চাবুক এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর তার স্ত্রীর শাস্তি হলো ’রজম’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জেনে রেখো! কসম ঐ আল্লাহর! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করব। আর তা হলো, তোমার একশত ছাগল ও দাসী ফেরত নিয়ে তোমার ছেলেকে একশত চাবুক মারা হবে এবং এক বছরের জন্যে দেশান্তর করা হবে। আর হে উনায়স! তুমি সকালে তার স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে যিনায় লিপ্ত হওয়াকে স্বীকার করে, তাহলে তার প্রতি ’রজম’ অবধারিত কর। অতঃপর মহিলাটি স্বীকার করল এবং তিনি তাকে রজম করলেন। (সহীহ বুখারী ৬৬৩৩, মুসলিম ১৬৯৭-৯৮, আবূ দাঊদ ৪৪৪৫, নাসায়ী ৫৪১০, তিরমিযী ১৪৩৩, ইবনু মাজাহ ২৫৪৯, আহমাদ ১৭০৩৮)

এই একই হাদীসে আমরা পেলাম,

অবিবাহিত ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিণীর শাস্তি প্রকাশ্য একশত বেত্রাঘাত এবং বিবাহিতদের শাস্তি হলো রজম বা কোমর অবধি মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা।

তদনুরূপ সমকাম বা সমলিঙ্গী-ব্যভিচারকেও ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। প্রকৃতিগতভাবে পুরুষ নারীর প্রতি এবং নারী পুরুষের প্রতি আসক্ত এবং উভয়েই একে অপরের মিলন লাভের আকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই প্রকৃতির সীমা উল্লংঘন করে এবং নৈতিক নিয়ন্ত্রণের বেড়া ডিঙ্গিয়ে যারা নির্লজ্জভাবে পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে সমকামে নিজেদের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে তাদেরও শাস্তি হত্যা । ইকরিমাহ্ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যে ব্যক্তিকেই লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মতো (সমকামী) দেখতে পাও, তখন তাদের উভয়কে (যে করে এবং যার সাথে করা হয়) হত্যা কর। ( আবূ দাঊদ ৪৪৬২, তিরমিযী ১৪৫৬, ইবনু মাজাহ ২৫৬১, ইরওয়া ২৩৫০, সহীহ আল জামি‘ ৬৫৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ২৪২২)

কৃত্রিম-মৈথুন বা হস্তমৈথুন অত বড় মহাপাপ না হলেও যা স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুন ক্ষতি ও হানিকর এবং তা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِيْنَ هُمْ لِفُرُوْجِهِمْ حَافِظُوْنَ، إِلاَّ عَلى أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُوْمِيْنَ، فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذلِكَ فَأُولئِكَ هُمُ الْعَادُوْنَ

অর্থাৎ, ‘‘যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে, তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। তাছাড়া অন্যান্য পথ অবলম্বন করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী।’(সূরা মুমিনুন আয়াত ৫-৭)

বিবাহিত স্ত্রী অথবা যুদ্ধলব্ধ দাসীর সাথে শরীয়তের বিধি মোতাবেক কামবাসনা করা ছাড়া কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার আর কোন পথ হালাল নয়। স্ত্রী অথবা দাসীর সাথে হায়েয-নেফাস অবস্থায় কিংবা অস্বাভাবিক পন্থায় সহবাস করা অথবা কোন পুরুষ অথবা বালক অথবা জীব-জন্তুর সাথে কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করা-এগুলো সব নিষিদ্ধ ও হারাম। অধিক সংখ্যক আলেমের মতে হস্তমৈথুনও এর অন্তর্ভুক্ত। [দেখুন, তাফসীরে ইবন কাসীর]

আরও পড়ুন-

বিয়ের জন্য কনে নির্বাচন করবেন যেভাবে?

সুতরাং কৃত্রিম মৈথুন এক প্রকার সীমালংঘন; যা মহাপাপ। তাছাড়া আল্লাহর রসূল (ﷺ) যখন সামর্থ্যবান যুবকদেরকে বিবাহ করতে বললেন, তখনই অসামর্থ্যবান যুবককে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। যাতে যৌন-তাড়নায় যুবকদল কোনরূপ বিপথগামী হয়ে না যায়। পক্ষান্তরে এতে হয়তো ক্ষণিকের যৌনস্বাদ আছে কিন্তু এর পশ্চাতে আছে মহালাঞ্ছনা, মহাপরিতাপ।

শরীয়ত যেমন সর্বপ্রকার ব্যভিচারকে হারাম ঘোষণা করেছে তেমনি ব্যভিচারের কাছ ঘেঁসতে, অবৈধ যৌনাচারের নিকটবর্তী হতে নিষেধ এবং এর সমস্ত ছিদ্র-পথ বন্ধ করতে আদেশ করেছে। কারণ, যে পথ হারামের দিকে নিয়ে যায় সে পথে চলাও হারাম।

তদনুরূপ বেগানা নারীর সাথে কোন কামরা বা স্থানে নির্জনতা অবলম্বন, বাড়ির দাসী বা দাসের সাথে গৃহকর্তা বা কর্ত্রী অথবা তাদের ছেলে-মেয়ের সাথে নিভৃতবাস, বাগদত্ত বরকনের একান্তে আলাপ বা গমন, বন্ধু-বান্ধবীর একত্রে নির্জনবাস, লিফ্টে কোন বেগানা যুবক-যুবতীর একান্তে উঠা-নামা, ডাক্তার ও নার্সের একান্তে চেম্বারে অবস্থান, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা, স্বামীর অবর্তমানে কোন বেগানা আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে নির্জনবাস, ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে বা রিক্সায় রিক্সাচালকের সাথে নির্জনে গমন, পীর ও মহিলা মুরীদের একান্তে বায়াত ও তা’লীম প্রভৃতি একই পর্যায়ের; যাদের মাঝে শয়তান কুট্নী সেজে অবৈধ বাসনা ও কামনা জাগ্রত করে কোন পাপ সংঘটিত করতে চেষ্টা করে। আল্লাহর রাসুল বলেছেন,

لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ»

“কোনো পুরুষ একজন মহিলার সাথে নির্জনে মিলিত হলে তাদের তৃতীয় সঙ্গী হয় শয়তান”। (তিরমিজি, মিশকাত)

বারুদের নিকট আগুন রাখা হলে বিস্ফোরণ তো হতেই পারে। যেহেতু মানুষের মন বড় মন্দপ্রবণ এবং দুর্নিবার কামনা ও বাসনা মানুষকে অন্ধ ও বধির করে তোলে। তা ছাড়া নারীর মাঝে রয়েছে মনোরম কমনীয়তা, মোহনীয়তা এবং চপলতা। আর শয়তান তো মানুষকে অসৎ কাজে ফাঁসিয়ে দিয়ে আনন্দবোধ করে থাকে।

বুঝতে হবে,তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী এখন আর স্ত্রীর মর্যাদায় নেই । তিনি এখন স্রেফ একজন পরনারী। ইসলামে এক্স বা সাবেকের কোন স্থান নেই । তার আলাদা কোন সত্তা নেই। যেই মাত্র তিনি স্বামী কর্তৃক তালাক বা নিজ থেকে খুলা নিয়ে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেন, তাদের মধ্যে আর কোন বন্ধুত্বই থাকবে না। বিবাহ বিবর্জিত হয়ে পরিত্যক্ত জনকে যদি এমন পরম বন্ধুই ভাবেন তবে কেন বিচ্ছিন্ন হলেন ? নিজের সন্তান দেখার বাহানায় বা জরুরতে তার সাথে নির্জনতাও অনুরূপ। কারণ, সে আর স্ত্রী নেই। আর এমন মহিলার সাথে বিপদের আশঙ্কা বেশী। শয়তান তাদেরকে তাদের পূর্বের স্মৃতিচারণ করে ব্যভিচার করিয়ে ছাড়তে পারে।

চলবে…

লেখকঃ কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জামান শামস

আরও পড়ুন