মাহজেবিন মম
বেলকনিতে বসে আছি এমন সময় উনি এসে বললেন-
– কি ব্যাপার বল তো? তোমার অমন ঝকঝকে বদন খানিতে রোদের হাসির বদলে এক খন্ড মেঘ দেখতে পাচ্ছি কেন?
– আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ” উড়াউড়ির দিন “পড়ছিলাম। একটা বাক্য পড়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই হাসতে পারছি না, দুঃখিত।
– তা কি সেই অমিয় বাণী? যা শুনিয়া স্তব্ধ হইলো আমার অর্ধাঙ্গিনী?
– উনি নিউইয়র্ক প্রবাসী এক মহিলার প্রসংশা করতে গিয়ে বলেছেন ‘গড়পড়তা বাঙালি মেয়েদের মতো বেহুদা আলসেমি বা গড়িমসি নেই তাঁর।’ এটা কোন কথা? বাঙালি মেয়েরা বেহুদা আলসেমি করে নাকি?
– হুম এই কথাটা অবশ্য ভাবনার উদ্রেক করে।
আমি- অবশ্যই ভাবতে হবে। আমাদের গ্রাম বাংলার মহিলারা ঘরের সমস্ত কাজ সামলান, সন্তানদের মানুষ করেন, কৃষিকাজেও সহায়তা করে থাকেন। ধান তোলার মৌসুমে কি পরিমান কাজ করতে হয় তা কি কারো জানতে বাকি আছে? আর বর্তমান সময়ে তো মেয়েরা সংসার, চাকরি, বাচ্চা মানুষ করা সবকিছু সমান তালে সামলাচ্ছেন। তাহলে বেহুদা আলসেমিটা করল কখন?
– বুঝলাম। উনি মনে হয় তোমার মতো কিঞ্চিত অলস মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন এ কথা।
– কি!!! এতো বড় কথা!! আমি অলস???
– হাহাহা, তোমাকে রাগানো কত্ত সহজ। এই গান শুনবে, গান?
– আপনার কাক কন্ঠের গান শোনার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।
– আমি শোনাব কে বলল, ইউটিউব শোনাবে।
(অতঃপর রাজ্জাকের সিনেমার গান চলছে)
শোন গো রূপসী ললনা,
আমাকে কথায় কথায় চোখ রাঙানো চলবে না
– এই মুহূর্তে গান বন্ধ করেন, নাহলে মোবাইলটার অকাল মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী থাকবো না কিন্তু।
– উফ, তুমি তো দেখছি এটম বোমা হয়ে গিয়েছ। যে কোনো মুহূর্তে ফেটে পড়বে মনে হচ্ছে।
– তাহলে আমাকে ইজরায়েল কিংবা সৌদির মুহাম্মদ বিন সালমানের বাসায় রেখে আসেন প্লিজ।
– কেন বল তো? ওখানে রেখে আসব কেন?
– ওমা, আমি না বোমার মতো ফেটে পড়ব। তাই ইজরায়েল আর তাদের বন্ধু- বান্ধবদের একটু উড়িয়ে দিয়ে আসি। কি বলেন?
– হুমম,,উত্তম প্রস্তাব। সম্প্রতি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন এবং সৌদি যুবরাজ বিন সালমান গোপন বৈঠক করেছেন। সৌদি আরবকে গোটা মুসলিম বিশ্ব অন্যরকম চোখে দেখে। সৌদি যদি ইজরায়েল কে স্বীকৃতি দেয় তবে সেটা ফিলিস্তিনের জন্য খারাপ হবে।
– এজন্যই তো বললাম, আমাকে পাঠিয়ে দেন। বোমা ফাটিয়ে বেটাদের একটু শায়েস্তা করে আসি।
– আচ্ছা বোমা পরে ফাটালেও চলবে। এখন খাবার দাও তো। খুব খিদে লেগেছে।
চড়াইনি ভাত
এটা শুনে মাথায় দিয়েন না হাত,
আজকে আম্মার বাসায় দাওয়াত
– আগে বলবে না, কতদিন আম্মাজানের হাতের মজার মজার খাবার খাইনা। যাও যাও রেডি হও।
– ও আচ্ছা, আম্মার হাতের রান্না মজার আর আমার হাতের রান্না সব অখাদ্য? তাই এতো তাড়া ঐ বাসায় যাওয়ার?
– কি বিপদ। আমি কি তাই বলেছি নাকি? তোমার রান্না খেয়ে এস কে ( ডাইরিয়া হাসপাতাল) হাসপাতালে যেতে হয়নি এটাই আমার সৌভাগ্য।
– ছিঃ ছিঃ, আপনি এতো অকৃতজ্ঞ! এতই যখন সমস্যা তাহলে দুবাই থেকে রান্নার শেফ আনিয়ে নিন। ওরা দুবাইয়ের শেখদের রান্না করে খাওয়াতে উস্তাদ। ওদের রান্না করা খাবসা আর উটের দুধ পান করবেন সব সময়।
– আরে নাহ। সেটা কি আর সম্ভব। তাছাড়া ওদের দেশ তো ১৩ টি মুসলিম দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, বাংলাদেশ যদিও নেই তার মাঝে। কিন্তু ইজরায়েলের বন্ধু দেশের সাথে তো আমরা কোনো সম্পর্ক রাখতে পারিনা, তাইনা?
– তাহলে আমিও আপনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলাম। আগামী তিন দিন আপনার সাথে আমার কথাবার্তা বন্ধ।
– আরে আরে বল কি তুমি। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা লাগবে কেন? তুমি বরং বিদ্রোহ করতে পার। জান তো, ভারতে কৃষক বিদ্রোহ চলছে। তিনটি বিতর্কিত আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে পাঞ্জাব, হরিয়ানা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাজারো কৃষক এখন দিল্লিতে অবস্থান করছে। তুমিও বিদ্রোহ করতে পার, স্লোগান টোগান দিলেও আমি মাইন্ড করব না।
– ধন্যবাদ, আমি ভালো স্লোগান দিতে পারি সেটা তো আপনার অজানা নয়, তাই না?
– জানি তো, তুমি শান্ত থাকলে এই অধমের গান শোনার সৌভাগ্য হয় আর অশান্ত হলেই স্লোগান। কিন্তু এখন যে আমার পেটের ভেতরেও স্লোগান শুনতে পাচ্ছি।
খাদ্য খাদ্য খাদ্য চাই
খাদ্য ছাড়া উপায় নাই
– হিহিহি, পেটে টান পরিলে এই দশাই হয় মশাই। তাই বুঝে শুনে কথা বলবেন। কবে যে আমি রান্না করব না বলে বিদ্রোহ ঘোষনা করি তার গ্যারান্টি দিতে পারছি না। এখন চলেন মায়ের বাসায় যাই।
– চল চল যাই। যেতে যেতে একটা কবিতা শুনাই-
তুমি আমার বউ,
তুমি ছাড়া জগতে নাই কেউ,
তুমি সর্বদা হৃদয়ে তোলো ঢেউ
(পটানোর চেষ্টা চলছে আরকি………..)
(চলবে)
আগের পর্ব-দাম্পত্য সিরিজঃ অরাজনৈতিক ঝগড়া (পর্ব- ২)