Ads

দাম্পত্য সিরিজঃ অরাজনৈতিক ঝগড়া (পর্ব-৬)

মাহজেবিন মম

রাসেল সাহেব রাসেল সাহেব

বারেক ফিরে চাও,

বইয়ের দিকে তাকালে তুমি
আমায় ভুলে যাও”

– কি ব্যাপার, পড়ার সময় জ্বালাতন করছ কেন?

– আপনাকে জ্বালাতন করার সাংবিধানিক অধিকার আমার আছে। তাই জ্বালাতন করছি।

– তা সংবিধানের কত ধারায় আছে এই অধিকার শুনি?

– আমাদের বিবাহের সংবিধানের ২য় ভাগের ৩য় অনুচ্ছেদে বলা আছে আমি যেকোন সময় আপনাকে জ্বালাতন করতে পারব।

– কোথায় আপনার সংবিধান নিয়ে আসেন তো দেখি। এসব মুখের কথার কোন ভিত্তি নাই।

– কে বলল আপনাকে মুখের কথার ভিত্তি নেই। বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে অলিখিত সংবিধান আছে। বৃটেন, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, সৌদি আরবের সংবিধানও অলিখিত। আর আপনি মিয়া আমার বিবাহের সংবিধান লিখা নাই বলে পাত্তা দিচ্ছেন না?

– বুঝলাম, তোমার যুক্তি মানলাম। কিন্তু তুমি যে বললে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আমি তোমাকে ভুলে যাই এটা কিন্তু সত্যি না। বরং তুমিই বই নিয়ে বসলে আমাকে ভুলে যাও। বই তো তোমার প্রথম প্রেম। এখন আবার ঝগড়াও করছ তুমি।

– হুমমমম, কথা অবশ্য মিথ্যা না। বই আমার প্রথম প্রেম…হিহিহি

– হয়েছে আর দন্ত বিকশিত করিয়া হাসিতে হইবে না। শুনেছি মানুষ জ্বরের ঘোরে নাকি প্রিয় মানুষকে ডাকে। কিন্তু তুমি এক বান্দা যে ঘুমের ঘোরে আমায় না ডেকে ক্লিওপেট্রা কে ডাক। আবার ঘোড়ায় চড়ে মিশর রওনা হও।

আমি- হিহিহি, দেখেন মিশর আমার কাছে একটা রহস্যের দেশ। জ্বর হওয়ার আগে মিশর নিয়ে পড়ছিলাম ত। তাই হয়ত ওসব বলেছি।

– মিশর সত্যিই এক রহস্যের দেশ। মিশরীয় সভ্যতা এবং মেসোপটেমীয় সভ্যতাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম সভ্যতা। জ্ঞান বিজ্ঞান, কৃষি সকল ক্ষেত্রে সভ্যতার শিখরে আরোহন করেছিল মিশর। আফ্রিকা মহাদেশের এই দেশটি নীল নদের তীরে গড়ে উঠেছে।

– হুমমম,, তবে নীল নদ তো দুটি নদীর সমন্বয়, মানে সাদা নীল নদ এবং নীলাভ নীল নদ। এরমাঝে নীলাভ নীল নদের উৎপত্তি হয়েছে ইথিওপিয়ার তানা হৃদ থেকে। দুটি নদ মিলিত হয়েছে সুদানের রাজধানী খার্তুমে। বিশ্বের ৯ টি দেশের মধ্য দিয়ে এই নদ প্রবাহিত হয়েছে।

– কিন্তু মজার ব্যাপার কি জান, মিশরের মরুভূমির বুক চিরে প্রবাহিত হলেও নীল নদ কখনও শুকাইনি কিন্তু।

– হুম, কিন্তু নীল নদ নিয়ে ইথিওপিয়া আর মিশরের মাঝে বেশ বিরোধ চলছে। ইথিওপিয়া নীল নদের বুকে বাঁধ দিয়ে জল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। তারা বাঁধটির নাম দিয়েছে ” গ্রান্ড ইথিওপিয়ান রেঁনেসা”। মিশর বরাবরই এই বাঁধ নির্মানের বিরোধিতা করে আসছে।

– মিশর কিন্তু তার নিজের স্বার্থের জন্যই বিরোধিতা করছে। এই বাঁধ নির্মিত হলে মিশর ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। মিশরের পুরো অর্থনীতিই আসলে নীল নদ কেন্দ্রীক।

– বর্তমান অবস্থা তাহলে আসলেই জটিল আকার ধারন করছে। আচ্ছা আপনি কি জানেন, মিশরে একেশ্বরবাদের সূচনা করেছিলেন ফারাও সম্রাট আখেনআতেন এবং তাঁর স্ত্রী নেফারতিতি। তাঁর শাসনামলে বহু দেবতার আরাধনা বন্ধ করে কেবল সূর্য দেবতার আরাধনার প্রচলন শুরু হয়েছিল।

– নেফারতিতিকে তো মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান নারী হিসেবে বিবেচন করা হয়। অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। স্বামীর পাশাপাশি বিপুল বিক্রমে রাজত্ব করেছিলেন।

– হুম, কিন্তু অত্যন্ত রহস্যজনক ভাবে তিনি হারিয়ে যান। তার মৃত্যু রহস্যের আজও কোন কূল কিনারা হয়নি। তবে গবেষকরা মনে করেন তুতেনখামুনের সমাধির কোন এক অংশে ঘুমিয়ে আছেন নেফারতিতি।

– মমীর দেশ, পিরামিড আর নীল নদের দেশ মিশর সত্যিই রহস্যময়। তুমি কি কাজি নজরুলের –

“মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়,
বিহ্বল চঞ্চল পায়”- গানটি শুনেছ?

– জি, শুনেছি। বুলবুল সরওয়ারের নীল যমুনার জল বইটি পড়েও মিশর সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি আমি।

– আচ্ছা কি যেন একটা ঘ্রাণ আসছে রান্নাঘর থেকে? ব্যাপার কি বল ত?

– ইয়ে মানে, ব্যাপার তেমন কিছু না। গোলাপ ফুল দিয়ে ডিম ভাজি করব। তাই ফুল এনে রেখেছি, তারই সুঘ্রাণ আপনি পাচ্ছেন।

– ইয়াক, তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি? গোলাপ ফুল কেউ ভাজি করে খায় নাকি? দুনিয়ায় কি খাবারের অভাব?

– এত চিল্লানোর কি আছে শুনি? আমি চাইনিজ একটা রেসিপিতে দেখেছি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ডিম ভাজি করতে। তাই সেটা প্রয়োগ করব বলে ফুল নিয়ে আসছি।

– ইয়া মাবুদ আপনি আমাকে উদ্ধার করেন। এইসব অখাদ্য কু খাদ্য তুমি খাও, আমি এসবে নাই।

– কি করব বলেন, আপনি তো আমাকে গোলাপ ফুল এনে দেয়া দূরে থাক, কচুরিপানার ফুল ও এনে দেন না। তাই ফুল দেয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এই অভিনব পন্থা গ্রহন করেছি। আপনার আর কিছু মনে না থাকলেও খাদ্যকণার কথা ঠিকই মনে থাকে। যখন মনে পরবে আপনাকে আমি গোলাপ দিয়ে ডিম খাওয়াতে চেয়েছি তখন ভয়েই আপনার ফুল কিনে আনার কথা মনে হয়ে যাবে.. হিহিহি

– হায় আল্লাহ, এই পাগল মেয়ের সাথে আমি কি করে সংসার করছি? এই মেয়ে এত পাগল কেন?

– যখন কেউ আমাকে পাগল বলে
তার প্রতিবাদ করি আমি,
যখন তুমি আমায় পাগল বল
ধন্য হয় যে সে পাগলামি,
ধন্য আমি ধন্য গো, পাগল তোমার জন্য গো”

(গান শুনিয়া ভদ্রলোক হাসিবেন না কাঁদিবেন স্থির করিতে পারিতেছেন না)

আগের পর্ব-

দাম্পত্য সিরিজঃ অরাজনৈতিক ঝগড়া (পর্ব-৫)

লেখক- শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন