Ads

বিয়ের জন্য কনে নির্বাচন করবেন যেভাবে?

।। নজরুল ইসলাম টিপু ।।

পৃথিবীর সকল জাতি ও ধর্মের নিকট নিজেদের মত করে বিবাহ প্রথা চালু আছে। ইহুদীরা বিয়ে করে কনের পিতার সম্পদ দেখে। খ্রিষ্টানেরা বিয়ে করে আভিজাত্য ও আসবাব পত্র দেখে। মুশরিকেরা বিয়ে করে নগদ অর্থের সমারোহ দেখে। আর মুসলিমেরা বিয়ে করে কনের খোদাভীতি দেখে। বিয়ে করা সকল নবীদের সুন্নাত। হাতে গোনা কয়েকজন নবী বিয়ে করতে পারেন নাই সেটা ভিন্ন ব্যাপার, ভিন্ন ইতিহাস।

ওমর (রাঃ) গরীব-অসহায় মানুষের খবর স্বচক্ষে দেখা ও নিজের কানে শোনার জন্য গভীর রাত্রে নির্জন কুঠির ও মহল্লায় ঘুরে বেড়াতেন। মায়ের আদেশ ছিল, দুধে পানি মেশাতে! বালিকা আপত্তি জানায়, এ কাজ আল্লাহ অপছন্দ করেন! ওমর (রাঃ) যে বাড়ীতে গিয়েছিলেন সাহায্য দিতে, উল্টো সে বাড়ীতে তিনি রত্নের সন্ধান পেয়ে যান। তিনি ছেলেদের ডেকে চুপিসারে বলেন, বাবারা বেদুইনের ঐ গরীব পরিবারে একটি শ্রেষ্ঠ কন্যা রয়েছে। তোমাদের আগ্রহী জন তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পার। অবশেষে এই কন্যাই ওমর (রাঃ) পুত্রবধূ বনে যান এবং সে কন্যার অধস্তন বংশধর সবাই খ্যাতিমান হয়েছিলেন। ওমর ইবনুল আবদুল আজিজের মত জগৎবিখ্যাত ব্যক্তি এই কন্যারই নাতি ছিলেন।

উপরের ঘটনাটি ইতিহাস কিন্তু মুসলমানদের সমাজ আজ নির্মম পরিহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে মুসলমানদের জীবন থেকে এই চরিত্র হারিয়ে গিয়েছে। মুসলমান আর কাফিরের জীবনের মাঝে বর্তমানে তফাত খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রে আলাদাও করা যায় না। পঞ্চদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইংরেজ কবি জন ডান তদানীন্তন খৃষ্ট সমাজের দুর্দশার চিত্র এভাবে এঁকেছিলেন, ‘যদি তোমরা আমাকে একটি সতী কন্যার সন্ধান দিতে পার তাহলে আমি হাজার মাইল পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েও তাকে দেখতে যাব’। তিনি সেটা তাদের সমাজে পান নাই! এটা নারীর দীনদারহীনতার কারণেই হয়েছিল ।

আরও পড়ুন- পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের আগে যা দেখা জরুরি

মুসলিম জীবনাদর্শের প্রতি তাঁর ছিল ঘৃণা, নতুবা তিনি প্রতিটি মুসলমানের ঘরেই সতী নারীর এই চিত্র দেখতে পেতেন। তাকে হাজার মাইল পরিভ্রমণও করতে হতনা। বর্তমানে পরিবেশ পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত বরবাদ হচ্ছে, মনে হয় সেদিন বেশী দূরে নয়, আমাদের সমাজেও জন ডানের মত কবির জন্ম হবে এবং হা হুতাশ করে কবিতা লিখবেন!

একটি সুখী সংসার প্রতিষ্ঠায় একজন নারীর ভূমিকা ব্যাপক। একটি পরিবারের সবাইকে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে পৌছিয়ে দেবার জন্য একজন নারীই যথেষ্ট। এটি মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সে লক্ষ্যে বিয়ের জন্য নারী নির্বাচনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। রাসুল (সাঃ) উল্লেখ করেন;

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيٰى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বলেছেন,

“চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয় তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে”। বোখারী ও মুসলিম।

উপরের হাদিস থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, কোন বধূর যদি দ্বীনদারী না থাকে তাহলে সে স্বামী ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। অনিবার্যভাবেই তার পরিবারে আগুন জ্বলবে। সংসার ছারখার হবে। দুনিয়া এবং আখেরাত দুটোই ধ্বংস হবে।

আরও পড়ুন- সত্যিকারের পুরুষ চাই

বাস্তবতা হচ্ছে, ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরীকদের সকল চরিত্রকে এক করলে যে ধরনের একটি অতি লোভনীয় চরিত্র ফুটে উঠে। সেটাই বর্তমানের অনেক মুসলমানদের চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক তো বাধ্য-বাদকতার চাদরে চাপা পড়েছে বহু আগে থেকেই। তার উপর চেপে বসেছে মেহমান খাওয়ানোর চাহিদা। কবুতর, চিংড়ী, খাসির মাংস, ডিম, কোয়েল, মুরগী কোন প্রাণীর নামই তালিকা থেকে বাদ পড়ে না। অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হয়, বরের গোষ্ঠী জীবনে যে জিনিষের স্বাদ নিতে পারে নাই, সেটা কনের পিতার মাধ্যমে খেয়ে জীবন ধন্য করতে চায়।

রাসুল (সাঃ) নিজের বিয়ের ওয়ালীমাতে শুধুমাত্র খেজুর, পনির, মাখন আর ঘি ব্যতীত অন্য কোন আইটেম রাখেন নাই। বোখারী একটি লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষে আমরা সেটাই দেখি;

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) খায়বার এবং মদীনাহ্‌র মাঝে তিন দিন অবস্থান করলেন এবং হুয়ায়্যার কন্যা সাফীয়ার সঙ্গে রাতে বাসর যাপনের ব্যবস্থা করলেন। আমি মুসলিমদেরকে তাঁর ওয়ালীমার দাওয়াত দিলাম। নবী (সাঃ) দস্তুরখানা বিছানোর নির্দেশ দিলেন এবং সেখানে গোশত ও রুটি ছিল না। খেজুর, পনির, মাখন ও ঘি রাখা হল। এটাই ছিল রাসুল (সাঃ) এর ওয়ালীমা…. বোখারী

আর পড়ুন–  তরুণদের বিয়ে ফ্যান্টাসি

তাই আসুন আমরা নিজেদের পরিবার ও সন্তানদের মাঝে ইসলামী চরিত্র ও আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি করি। কাউকে আল্লাহ ভীতি পাইয়ে দিতে দরকার হাদিস-কোরআনের জ্ঞান, আখেরাতের চিন্তা ও বিবেকের উপলব্ধি। আল্লাহর মহিমা, শেষ্ঠত্ব ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানলেই আল্লাহ ভীতি জন্ম নেবে। সে জন্য চাই লেখা পড়া। নিশ্চয়ই স্কুল কলেজের লেখাপড়ার কথা বলছি না। ড. শহীদুল্লাহ বলেছেন, যার নিকট কোরআনের জ্ঞান নাই, সে পণ্ডিত হলেও মূর্খ পণ্ডিত।

কলেজের লেখাপড়ার কথা বলছি না।

ড. শহীদুল্লাহ বলেছেন, যার নিকট কোরআনের জ্ঞান নাই, সে পণ্ডিত হলেও মূর্খ পণ্ডিত।

আরও পড়ুন- যেভাবে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করতে বলেছেন প্রিয় নবীজি সাঃ

আরও পড়ুন- সমাধান নাকি মনোযোগী কান

লেখকঃ নজরুল ইসলাম টিপু, লেখক ও  কলামিস্ট 
মহীয়সীঃ বিয়ের কনে নির্বাচন করার সময় সব পুরুষের সতর্ক থাকা উচিৎ । বিয়ের সময় কনে নির্বাচন করতে ভুল করলেই  মহা সর্বনাশ ঘটে যেতে পারে তার জীবনে । কনের দ্বীনদারী ছাড়া অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেয়া ঠিক না । সারা জীবন পস্তাতে হতে পারে । পুরুষের মনে রাখা উচিৎ যে তিনি তার বিনোদনের জন্য কোন নারী শুধু আনছেন না তার ভবিষ্যৎ সন্তানের মা বাসায় আনছেন । তিনি এই সময় যেমন কনে আনবেন তেমন সন্তান ভবিষ্যতে তার ঘরে আসবে এই বিষয়টা ভাল করে মাথায় রাখা উচিৎ ।
আরও পড়ুন