Ads

স্ত্রীর আত্মীয়দের প্রতি কতোটা সচেতন আপনি?

আজিজা সুলতানা রোজী

“The people we are related to by blood and marriage are expected to be our closest allies, our greatest sources of love and support.” [www.helpguide.org]

মোবাইলের স্ক্রীনে চোখ পড়তেই অস্বস্তিতে ভরে গেলো সালমার মনটা । মা ফোন করেছে । এই কলটার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ছিল । কিন্তু হাসান বাসায় থকায় হয়তো বলবে, প্রতিদিনই ফোন করতে হয়? অথবা আমি যখন থাকি না তখন ফোন করতে পারো না ? সালমা ফোনটা না ধরে অন্য কাজে চলে গেল ।

সালমার শাশুড়ী মা প্রায়ই আফসোস করেন, নাতী-নাতনীরা তার সাথে কথা বলে না । বলবে কীভাবে? হাসান তো বাবার সাথে প্রায় কথাই বলে না । আর মার সাথে কথা বলার সময় বাচ্চাকে সাথে নেয় না । বাচ্চা কি দেখে দাদা-দাদুর সাথে কথা বলা শিখবে ।

সালমা কোনো প্রসঙ্গে যদি তার বাড়ির কথা বলে তখন হাসান বলে আমিও তো বাড়ি ছেড়ে আছি । আমার কি মা-বাবা নেই? মায়ের আঁচলের নিচেই যদি থাকবে তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন? যাও গিয়ে থাক । সালমা এখন বাড়ির কথা উচ্চারণ করতে সাবধান থাকে, কখন দশকথা শুনতে হয় । আল্লাহু লাতীফুন, বাসীরুন ।

আসলে আপনি যখন স্ত্রীকে ভালোবাসেন তখন তার প্রিয় মানুষগুলোকে ভালো না বেশে কীভাবে থাকবেন?  স্ত্রী নামক সৌখিন ডালটিকে আপনার পাশে জায়গা দিতে গিয়ে তার শিকড়গুলোকে কেটে দিবেন না । গাছটি বাঁচবে না ।অনেকে বিয়ে করে ভাবেন ফল তো পেয়েই গেছি । গাছ কেটে ফেলি । শুধু বউ হলেই চলবে, তাকে তো নিয়েই এসেছি । সুতরাং আর কারও সাথে সম্পর্ক রাখার দরকার নাই ।বাস্তবতা হল স্ত্রীর আত্মীয়দের সাথে আপনার সম্পর্ক যত মধুর হবে স্ত্রীর সাথে আপনার সম্পর্ক ততো মধুর হবে ।

হে নবীজির উম্মত নবী সাঃ এর কথা ভাবুনতো । তিনি ছিলেন রাষ্ট্র প্রধান তারপরও তিনি খাদিজা রাঃ এর বান্ধবীদের চিনতেন, নাম জানতেন ।

এমনকি খাদিজা রাঃ মৃত্যুর পরেও গোশত পাঠাতেন । হ্যাঁ মৃত্যুর পরও । শুধু খাদিজা রাঃ এর প্রতি ভালোবাসার সম্মানে । এই সুগভীর ভালোবাসার কী সংজ্ঞা আমার জানি না। আমার মাথা এর গভীরতার তল খুঁজতে গিয়ে সত্যি হারিয়ে যায় আর ফির‍্তে পারে না । এতো ব্যস্ততার মাঝেও তিনি কীভাবে সময় বের করতেন । তারা ছিলেন তার বান্ধবী, তার আত্মীয়দের তাহলে তিনি কীভাবে হক আদায় করতেন? জি এটাই ভালোবাসা ।

ওহী নাজিল হবার পর খাদিজা রাঃ তার চাচাতো ভাই ওরাকা বিন নওফেলের কাছে নবীজীকে নিয়ে যান । নবী সাঃ একবারও বলেননি ধুর তোমার সাথে যেতে হবে কেন? মাথা খারাপ! তোমার আত্মীয়দের বাড়ি যাব ! বরং খাদিজা রাঃ এর আত্মীয়দের সাথে তার এতো সুসম্পর্ক ছিল যে তিনি নির্দ্বিধায় গেলেন । তিনি কখনো বলেন নি তোমার আগের পক্ষের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না । বরং তার বাচ্চাদের মানুষ করেছেন । তিনি ছিলেন দায়িত্ববান মহান পুরুষ । প্রতিটা সম্পর্কের ব্যাপারে ভীষণ সচেতন, যত্নবান ।

কেউ কেউ আছেন নিজের বাড়ির খোঁজ খবর নেয়া পর্যন্তই শেষ । স্ত্রী তো তার বাড়ির জন্য আছেন । এভাবে দায়িত্ব দিব্বি এড়িয়ে চলেন । ওদিকে দুনিয়ার স্বার্থে ঠিকই কতো জনের সাথে যোগাযোগ করেন তো । আখিরাতের স্বার্থে মাসে দুই একবার তো অন্য আত্মীয়দের খোঁজ নিতে পারেন । আর কেউ কেউ তো কারোরই খোঁজ রাখেন না । এসব অধিকার ও সম্পর্ক নষ্টকারীদের জান্নাতই ছিন্ন হয়ে যায় ।

আর আপনি কি করেন? আপনি কোন সম্পর্কই রাখেন না । আপনার স্ত্রীকেও রাখতে দিতে চান না । তিনি কথা বললে, খোঁজ নিলে আপনার মনটা বেজার হয়ে যায় ।

দোয়া কবুলের জন্য, রিযিক বৃদ্ধির জন্য, আয়ু বৃদ্ধির জন্য, বরকতের দরজা খোলার জন্য আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে ।

কবরে শায়িত পরদাদা, তার বাবা, দাদা পর নানারাও উত্তরসূরীদের ভালো কাজ দেখে খুশী হন । জান্নাতে তারাও আমাদের সাথে মিলিত হবেন ইনশাল্লাহ ।

স্ত্রীর আত্মীয়দের সাথে বিশেষ করে মা-বাবা, ভাই-বোনদের সাথে যোগাযোগ রাখুন । সেখানে বেড়াতে যান ও তাদের ব্যাকুলতার সাথে ডাকুন । সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিয়া দিন । স্ত্রীর হাতে তাদের জন্য টাকা দিন । কাছে হলে আপনার খাবারে শরীক করুন ।

দাদা-দাদী, নানা-নানীর বয়স বেশী হয়ে গেলে তারাও শিশুসূলভ আচরণ বেশী পারেন । সেই আচরণ ও ভালোবাসা দিয়ে তারা যখন বিভিন্ন গল্প , তাদের ছোটবেলার কথা , অভিজ্ঞতা, মরাল লেসন, ইতিহাস ও দ্বীনিশিক্ষা দেন  তা শিশুমনে পাকা ছাপ রেখে যায় ।মা-বাবা ব্যস্ততায় সময় দিতে না পারলেও তারা সে অভাব পূরণের চেষ্টা করেন ।সিরিয়াল, গান, স্পোর্টস ডিভাইসের বাইরে তারা বাস্তবজ্ঞান দেন ।

আর হা আপনার বাচ্চাকেও আত্মীয়দের এই হক আদায়ে পাশে রাখবেন । তাদের কুশল বিনিময় করবে । মুরব্বীদের আলমারীতে খাবার ও খেলনা রাখলে তারা বাচ্চাদের দিতে পারবে । বাচ্চাদের এ বিষয়ে কার্টুন, ভিডিও দেখালে তারাও এই বিষয়ে চিন্তা করার সুযোগ পাবে । বাচ্চাদের হাত দিয়ে আত্মীয়দের গিফট দেয়াবেন   সে আত্মীয়দের চিনবে হক আদায় করবে । এটা মন উদার করে এবং তার মানবিকতার বিকাশ হবে ইনশাল্লাহ ।

আপনার স্ত্রীও কারও সন্তান, কলিজার টুকরা । কলিজা কেটে ফেলবেন না ।

চিরদিন কেউ বেঁচে থাকে না । আফসোসের জীবন যেন বয়ে বেড়াতে না হয়, সময় থাকতেই হক আদায়ের চেষ্টা করুন । তাদের জন্য আসার দাওয়াত দিয়ে আগাম টিকিট কাটুন ও প্রয়োজনীয় গিফট দিন । দেখুন কতো খুশী হয় তারা । আর আপনার স্ত্রী? এই সারপ্রাইজ তাকেও খুশী করবে ।

সুস্থ সম্পর্ক রক্ত চলাচলের মতো । একদিক থেকে অন্যদিকে প্রবাহিত হবে । অসুস্থ সম্পর্ক রক্ত জমাট বাঁধার মতো সবকিছু অচল করে দেয় ।

আপনি স্ত্রীকে কতোটুকু মর্যাদা দেন তার একটি ইনডিকেটর হলো তার আত্মীয়দের কতোটা মর্যাদা দেন  সেটি। বেছে বেছে আত্মীয়তা না করে সব আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ উন্মুক্ত রাখুন । যারা আপানার সন্তানের আত্মীয় তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে শেকড় চেনান ।  নইলে পরগাছার মতো সন্তান বেড়ে উঠবে ।

লেখকঃ নারী ও শিশু বিষয়ক কলাম লেখক

 

আরও পড়ুন