Ads

আরবদের জীবন যাপন (পর্ব -১)

মোঃরুহুল আমিন

আমি সৌদিতে আছি এক যুগেরও বেশি সময়। আরবদের সামাজিক রীতিনীতি সংস্কৃতি সম্পর্কে নিজ চোখে দেখতেছি।আরবদের মধ্যেও ভালো মানুষ মন্দ মানুষ আছে।আমি যদি আমার দেশের মানুষের সাথে তুলনা করি আমার কাছে আরবরা এগিয়ে আছে অনেক কারনেই।তাই বলে আমি আমার দেশের মানুষকে ছোট করছি না।আরবদের সাথে আমাদের কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।কিন্তু মুসলিম হিসেবে সবারই মৌলিক পার্থক্য ঊনিশ বিশ হওয়ার কথা ছিলো।বাস্তবে পার্থক্য যোজন যোজন দূর।যদিও পৃথিবীর কোনো দেশেই পরিপূর্ণ শরীয়াহ আইনের প্রয়োগ নেই।সৌদিতে আংশিক চালুর আছে।
যদিও সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সংস্কার নিয়ে নানান প্রশ্ন আছে,শাসন পরিবারের নীতি নৈতিকতা নিয়ে।আমার আলোচ্য বিষয় সেটা নয়।

আমার আলোচনার বিষয় হলো মুসলমানদের লাইফ স্টাইল কেমন হওয়া উচিত।নিজের চোখে যতটুকু দেখেছি কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।আরবরা পরিবার নিয়ে পৃথক থাকতে পছন্দ করে।আমাদের মতো যৌথ পরিবার প্রথা প্রচলিত নেই।মা বাবার দ্বায়িত্ব সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করে তোলা।যুবক হলে বাবা মায়ের দ্বায়িত্ব অনেকাংশেই শেষ। যুবক হলে তাকেই তার ভবিষ্যতে পরিকল্পনা করতে হবে।চাকরি কিংবা ব্যবসা করেই তাকে বাড়ি গাড়ি বিয়ে করতে হবে।এটাই মোটামুটি রীতি।উচ্চ বৃত্তের ক্ষেত্রে কিছুটা উল্টোও হতে পারে।

আরব ছেলেরা চাইলেও আমাদের দেশের ছেলের মতো এতো সহজে বিয়ে করতে পারে না।প্রথমত বিয়ের জন্যে পাত্রীর বাবাকে পণ দিতে হয়।পণ কতো হবে তা নির্ভর করে বংশ মর্যাদার উপর।একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হলে মোটামুটি গুছিয়ে নিতে হয়।ইনকামের পথ সুগম হলে নিজস্ব বাড়ি করতে হয়।
সামর্থ্য অনুযায়ী গাড়ি ক্রয়। তারপরই একজন যুবক বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।বাল্য বিবাহ কদাচিৎ।

আরব দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি।আমরা অনেকই আরবদের একাধিক বিয়ে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে থাকি।বাস্তবতা আমাদের অনেকেরই অজানা।প্রথমত নারী সংখ্যায় বেশি,দ্বিতীয়ত আরব ছেলেরা আমাদের দেশের মতো ২০/২২বছর বয়সে বিয়ে করতে পারে না।কারণ হলো তাকে তার বিয়ের খরচ সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।

আরব মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিয়ের যে খরচ পড়ে যায়, কম করে বাংলার কোটি টাকার মতো।যে বিয়ে করবে তাকেই সম্পূর্ণ বহন করতে হয়ে।
কতো রকমের আয়োজন হয় নিজ চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না।ধনীদের বেলায় তো কথাই নেই।

টাকার অভাবে বিয়ে করতে দেরি হয়ে যায়।আবার মেয়ের সংখ্যা বেশি।তাই বিত্তশালীরা তিন চারটি করে বিয়ে করে।তবুও মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স আমার কাছে ৩০+ মনে হয়।আরব পুরুষরা যদি একাধিক বিয়ে না করে,অনেক মেয়েই স্বামীর অধিকার কিংবা স্বামীর সুখ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে।
এখনো অনেক মেয়েরা বঞ্চিত।

আরবদের জীবন যাপন অনেক ব্যয় বহুল।বিয়েতে কী পরিমাণ স্বর্ণের অলংকার লাগে তা আমার আপনার কল্পনার বাহিরে।কয়েকটি কারনে আরবরা একাধিক বিয়ে করে,একাধিক বিয়ে করা ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে।এই বিষয়ে ইসলামি স্কলাররা আরো সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারবেন।
পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি, নারীরা যেনো অধিকার বঞ্চিত যেনো না হয়, আরো অনেক কারনেই ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন দিয়েছে।
আরব পুরুষেরা একাধিক বিয়ে করার পরও অনেক মেয়ের সঠিক সময়ে বিয়ে হচ্ছে না।এটাই বাস্তবতা।একটি পরিবারে কম করে হলেও চারটা পাঁচটা মেয়ে থাকে,সে তুলনায় ছেলে দুইটা কিংবা তিনটা থাকে।আমার মনে হয় শতকরা ৯৫ভাগ পরিবারেরই এমন চিত্র।

(চলবে)

আরবদের জীবন যাপন সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথে থাকুন

লেখকঃ সৌদি আরব প্রবাসী কবি ও সাহিত্যিক 

আরও পড়ুন-

যে বিয়ে পড়িয়ে আমি অভিভূত

আরও পড়ুন