Ads

জাপানের টাইফুন থেকে যেভাবে বেঁচে গেলাম

শাহীন আক্তার স্বাতী

জাপানে কোন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই। এখানে পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আগে পদপ্রার্থীদের বিশাল অহেতুক জনসভার আয়োজন হয়না। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি আছে কিনা আমার জানা নেই। প্রায় সাড়ে সাত বছর জাপান জীবনে আমি কোন মিছিল কিনবা হরতাল, অবরোধ দেখিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছাত্র ছাত্রীদের সাথে আমার পরিচয় আছে। তাদের অমায়িক এবং বন্ধুসুলভ আচরণ আমাকে সব সময় মুগ্ধ করে। এরা সহপাঠীকে পিটিয়ে মারার ক্ষমতা রাখে বলে আমার মনে হয়না। দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জাপান নি:সন্দেহে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ।দূষণমুক্ত, ফর্মালিনমুক্ত পরিচ্ছন্ন, উন্নত একটা দেশ।

কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য আধুনিক টেকনোলজিতে সেরা এই দেশটিতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ সীমাহীন। প্রকৃতির কাছে মানুষ সত্যি বড় বেশি অসহায়। লাগাতার টাইফুন, ভূমিকম্প দেশটিকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়ে যায়। তবুও এরা পরিশ্রমী জাতি বলে আবারও নতুন করে জেগে উঠে। নব উদ্যমে সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে।

আজকের টাইফুন নিয়ে পূর্ব থেকে যেভাবে প্রচার করছিলো, তাতে সবার ভেতরেই আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। গত মাসের টাইফুনের সময় ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সজাগ ছিলাম। মনে হচ্ছিলো, বিল্ডিংটা পড়ে যাবে। এবারের টাইফুন “হাবিগিজ” এর ভয়াবহতা শুনে ধরেই নিয়েছিলাম মৃত্যু খুব সন্নিকটে।

নিজেকে নিয়ে তেমন ভাবিনা কিন্তু বাচ্চাদের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। টেনশনে মানুষের ঘুম হয়না আর আমার অতিরিক্ত টেনশনে অতিরিক্ত ঘুম আসে। গেলো দুদিন আমার কাটলো ঘুমঘোরে। খুব ঝটপট, দ্রুত কাজ করে ফেলতে পারি কিন্তু দুশ্চিন্তায় সব যেনো থমকে রইল। গতরাতে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণ করেছি।

আজ সকাল থেকে ঝড়ের ভয়াবহ রুপ দেখার প্রতীক্ষা। ঘরে যত স্কচটেপ আছে সব জানালার কাচে লাগিয়েছি। যেহেতু আশ্রয়কেন্দ্র যাইনি তাই মনের মধ্যে নানা রকম অশুভ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। বাবুদের কী হবে? বাবুদের বাবা নিশ্চিন্তে আধাবেলা ঘুমিয়েছে। সে বলেছিলো কিছুই হবেনা কিন্তু লাগাতার ঝড়ের ভয়াবহতার প্রচারে আমার জ্বর চলে এসেছে। যেসব এলাকার উপর টাইফুন আঘাত হেনেছে সেসব এলাকা তছনছ হয়ে গেছে।

আল্লাহর অশেষ রহমত। এ পর্যায়ে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আমাদের এদিকটায় তেমন কিছুই হয়নি। গেলো দুদিন যারা যত্ন করে বারবার খোঁজ নিয়েছেন তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের দোয়ায় আমরা ভালো আছি। আলহামদুলিল্লাহ!

লেখকঃ সাহিত্যিক ও জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী

আরও পড়ুন