Ads

হেরটা মুলার-পঞ্চম পর্বঃ দ্য পাসপোর্ট এবং একটি গ্রাম

জুম্মি নাহদিয়া

হেরটা মুলারের দ্য পাসপোর্ট একটা অদ্ভুত রকমের দুঃখী গ্রামের গল্প। দুঃখী এবং হতাশ- মরনাপন্ন গ্রাম ছিল সেটা। এথনিক ক্লিঞ্জিং, মহাযুদ্ধ পরবর্তী টোটালিটেরিয়ান শাসনে বিপর্যস্ত। ঠিক গল্প না আসলে, উপন্যাস। আকারে ছোটখাটো। অনুচ্ছেদগুলো প্রসঙ্গ পাল্টায় কতগুলো বিচিত্র রকমের সুন্দর শিরোনামের (THE STONE IN THE LIME, GRASS SOUP, THE SUMMER KITCHEN, THE DEATH MARK) আশ্রয় নিয়ে আবার পাঁড় যাযাবরের মত এলোপথ পরিভ্রমণ শেষ করে কাহিনীর উদ্দেশ্যবিন্দুতে আবার এসে মিলেও যায়।

ভিন্ডিশ হচ্ছে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। গ্রামের এক মিলে কর্মরত এথনিক জার্মান অথবা সোয়াবিয়ান। সে তার গ্রামের আর দশজন সোয়াবিয়ানের মতই পশ্চীম জার্মানির সবচ্ছল এবং দারিদ্রমুক্ত জীবনের আশায় একখানা পাসপোর্টের আবেদন করেছিল। পাসপোর্টটি পাবার জন্য মেয়রকে বস্তা বস্তা ময়দা ঘুষও দিয়েছিল কিন্তু নৈরাশ্যে ভেঙ্গে পড়া দুঃখী গ্রামখানি ছেড়ে পশ্চীমে যাবার ছাড়পত্র কিছুতেই পাচ্ছিল না। একদম কিছুতেই না। তখন সে শেষ চেষ্টা হিসেবে তার কুমারী কন্যা আমালিকে মিলিশিয়াম্যান এবং প্রিস্টের কাছে পাঠায়, ইনফ্যাক্ট সেই প্রভাবশালী লোকগুলোর বিছানা থেকে পাসপোর্ট এবং ব্যাপ্টিসমল সনদগুলো উদ্ধারেই পাঠায়।

এখানে উল্লেখ্য, চশেস্কু ধর্মীয় শিক্ষা বিরোধী ছিলেন এবং সচরাচর চার্চগুলো যে বিশেষ স্থাপত্য ঘরানায় নির্মিত হত সেটাও তিনি পছন্দ করতেন না। যার কারণে বহু চার্চ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল সে সময়। যেগুলো রয়ে গিয়েছিল সেগুলোর স্ট্রাকচার বদলে ফেলার এবং স্থানান্তরের আদেশ দেয়া হয়েছিল। বেশ নিয়ন্ত্রিত পরিসরে মানুষ ধর্মীয় উপাসনায় অংশ নিতে পারত, তবে ধর্মযাজক এবং গির্জা কমিটিকে অবশ্যই চশেস্কু পন্থী হতে হত। সরকারের প্রতি সামগ্রিকভাবে অনুগত হতে হত। সে অর্থেই প্রিস্টকে ভিন্ডিশের সমাজে ক্ষমতাধর বলা হয়েছে। তো যাই হোক, দ্য পাসপোর্টের পটভূমি হল এই।

“দ্য পাসপোর্ট”র জার্মান নাম “Der Mensch ist ein grosser Fasan auf der Welt”। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, পৃথিবীতে মানুষ একটি বিরাট রঙিন পাখি। পাখির দরকার না হলেও পাখির মত হৃদয়টাকে আগলাতে হয় পাঁজরে যখন, মানুষের দরকার পড়ে আরেকটু নিশ্চিন্তে বাঁচবার জন্য কখনো কখনো আকাশে ওড়ার বৈধতা, দেয়াল টপকাতে বুনো হাঁসের কোন প্রবেশপত্রের প্রয়োজন হয়না, মানুষের হয়। তাই হয়ত অনুবাদক মার্টিন শালমার্স হেরটা মুলারের প্রথম ইংরেজীতে অনুবাদ গ্রন্থের নাম দিয়েছেন “দ্য পাসপোর্ট”।

বইটিতে উঠে এসেছে মধ্যযুগীয় নৈতিকতার বিষণ্ণ কিছু চালচিত্র, অনেকটা গ্রীম ব্রাদার্সের সংগৃহীত ডার্ক ফেইরি টেল গুলোর ছোঁয়া পাওয়া যেতে পারে সেখানে। দ্য পাসপোর্টের চরিত্রেরা বেশীরভাগই বুর্জোয়া সমাজে অবস্থান করেনা। দারিদ্রের সাথেই সহাবস্থান তাদের। তাদের মাথার ওপর একটি উৎসুক পেঁচা ভেসে বেড়ায়, মৃত্যুর অগ্রদূতের মত তাকিয়ে থাকে সেটি। কুসংস্কার পিছু ছাড়তে ভুলে গিয়েছিল সে মানুষগুলোকে। নারীদের ভাবা হত শুধুই গৃহী উচ্ছিষ্ট, কখনো কখনো বারবনিতা। সে বারবনিতারদের আগাগোড়া দখলের সক্ষমতার মাপকাঠি নির্ধারিত করত কম্যুনিজমের অধীনে জীবন ধারণের জন্য পুরুষের নামকাওয়াস্তে উপার্জিত অর্থ ।

মিলের নৈশপ্রহরী যেমন বলেন,

“There are women everywhere, “There are even women in the pond,”

পরবর্তীতে নৈশপ্রহরী ভদ্রলোক আরও বলেন,

“God knows what they’re for, women. . . . Not for us, not for you. I don’t know what they’re for. . . . And our daughters. . . . God knows, they become women too.”

ভিন্ডিশকে একই নৈশপ্রহরী ওয়ালাশিয়া অঞ্চলের ব্যপ্টিস্ট এবং সেখানকার কিছুটা শিথিল চরিত্রের নারীদের নিয়ে মন্তব্য ছোঁড়েন,

“They do it on the carpet in the prayers house. . . . The religion comes from America. . . . That’s across the water. . . . The devil crosses the water, too. They’ve got the devil in their bodies. . . . Yes, the Jews are the ruin of the world. Jews and women.”

নারীর নারীত্বকে মুলার এখানে সাদা ডালিয়ার সাথে বারবারই তুলনা করতে পছন্দ করেছেন উপন্যাসটিতে। একটা ছোট অধ্যায়ের নামই সেখানে WHITE DAHLIA. এই সাদা ডালিয়া এমন এক অবিশ্বাস্য ফুল যে কিনা অত্যন্ত অলৌকিকভাবে দীর্ঘ এবং তীব্র খরার ভেতরেও বেঁচে থাকতে পারে। বাতাসের আনাগোনার প্রশ্নই ওঠেনা এমন চরম গ্রীষ্মেও এক একটা অপুষ্ট সাদা ডালিয়াও মাটির বুকে খসে পড়েনা।

অন্যদিকে চরম পুরুষতান্ত্রিক এবং নারীবিদ্বেষী সমাজব্যবস্থাকে কিছুটা ধূসর কালো রঙধারী রূপকে ফ্রেমবন্দীও করেছেন। সবুজ এবং নীলকেও সাদা রঙের নারীত্বের ওপর চাপিয়ে দেয়া স্বৈরতন্ত্রের ভূমিকায় এনেছেন। সোভিয়েত নৈশপ্রহরীর বয়ানে পাওয়া যায় এমন এক নীল পেঁয়াজের বর্ণনা যেটাকে সোভিয়েত পুরুষেরা মুষ্টিবদ্ধ হাতে আঘাত করে আর নারীরা তাতে নতজানু হয়।

দ্য পাসপোর্টের অধিবাস্তববাদ নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা সাহিত্যের বাজারে প্রচলিত আছে। ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান সাহিত্যে স্যুররিয়েলিজম জনপ্রিয় হয়েছিল রোমানিয়ান দাদাইস্ট এবং প্রতীকী কবি ত্রিস্তান যারার হাত ধরে। পশ্চিম ইউরোপের চাইতে পূর্ব ইউরোপিয়ান সাহিত্যে স্যুররিয়েলিজমের আশ্রয় নেবার অধিকতর প্রবণতা ছিল। হয়ত ইস্টে বসে অনেক কথাই অকপট সোজা সরল বলা যেতনা যতটা বলা যেত ওয়েস্টে, আবার ১৯৪৫ সালে পশ্চিম ইউরোপের কিউবিস্ট ঘরানার অধিবাস্তববাদ আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবার পর, সে আন্দোলনের প্রভাব ইস্ট ইউরোপের সোভিয়েত দখলকৃত এলাকাগুলোতে বেশ একটু বিচ্ছিন্ন ভাবেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

তবে হেরটা মুলারের চিত্রিত স্যুডো রিয়েলিটি বনাম তৎকালীন দুঃশাসনকে ভীষণ এক স্বতন্ত্র ভঙ্গীতে সময়কে এঁকেছেন মুলার। ছোট ছোট অথচ ঝাঁঝালো শক্তিশালী বাক্যে। আর খালি চোখে দেখলে উদ্ভট সব শিরোনামে বাক্সবন্দী করেছেন মুলার তার অল্প কয়েক ছত্রের অধ্যায়গুলোকে। কখনো নাম দিয়েছেন মেটে ব্যাঙ, কখনো সুঁই, জিপসীরা ভাগ্য ফেরায়, ঘুমন্ত রাজা, স্ফটিকের ফুলদানি, মাকড়শা এই সমস্ত।

ইজরায়েলি- আমেরিকান ঔপন্যাসিক এবং সাহিত্য সমালোচক লেওরা স্কোলকিন স্মিথের সাথে হেরটা মুলারের ক্ষুদ্র পাঠক হিসেবে আমারও মনে হয়েছে স্বয়ং আপেল গাছটির সব আপেল খেয়ে ফেলা, ওইটুকু এক পেঁচার পুকুর এবং কুয়ার সমস্ত পানি শুষে ফেলা জাতীয় পরাবাস্তবের মুহুর্মুহু ব্যবহারের মাধ্যমে মুলার হয়ত তার পাঠককে এমন এক চিন্তায়, দ্বিধায়, ক্ষীণ এবং সীমাবদ্ধ দৃষ্টির অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করেছেন, হতে পারে ইচ্ছাকৃত ভাবেই, যাতে করে তার পাঠক উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মত করেই “কি হচ্ছে চারিদিকে এসব!” তার পুরোটা ধরতে না পারে, অর্থ না বুঝতে পারে, স্পষ্ট চিত্রায়ন ঘটাতে না পারে। চরম দুঃশাসনে নিমজ্জিত একটি সমাজের মানুষ যেমন প্রোপাগান্ডা এবং বাস্তবতার ভেতর কোন সাদৃশ্য বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

“In the morning night watchman didn’t lie down to sleep. He went to the village mayor. He told him that the apple tree behind the church ate its own apples. The mayor laughed. The night watchman could hear fear behind the laughter. Little hammers of life were beating in the mayor’s head.”

একনায়কতন্ত্রকে মোটাদাগে বুঝতে না পারার মত প্রচ্ছন্নতা থাকে এই উপন্যাসে। পাঠক অদ্ভুতভাবে শুধুই চোখের সাদা অংশ দেখতে দেখতে কেন্দ্রে থাকা কালো মনিটাকে একসময় আর দেখতে পায়না। সে কারণেই হয়ত অস্ট্রিয়ান সাহিত্যিক ইনগেবোর্গ বাখমান উপন্যাস শুরুর আগে ভাগেই তার বিস্ময়কর দুটো বাক্য নিয়ে হাজির হয়েছেন গ্রন্থে,

“The White appears in the eyelid fissure between East and west. The pupil is not be seen.”

ভিন্ডিশ জানতে পারে গ্রামবাসীরা পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছে। পশ্চীমে যাবার পাসপোর্ট, মুক্তিপত্রও বলা যায়। গ্রামবাসীরা তাদের বাড়ির আসবাবপত্র অফিসারদের দিয়ে দিচ্ছে। ভিন্ডিশের স্ত্রীর রাশান কয়েদখানায় বন্দী থাকার পর যে প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেয়েছিল ঠিক একই প্রক্রিয়ায় নিজের মেয়েকে ঠেলে দিল সে সজ্ঞানে, মুক্তির আশায়।

ভিন্ডিশ এক সময় সেই পরম কাঙ্খিত বস্তু পেল তবে তার কন্যার আত্মত্যাগে খুব একটা স্পষ্ট অনুভূতির প্রকাশ পাঠকের কাছে ধরা পড়তে দেয়নি। যদিও নৈশপ্রহরীর কাছে ভিন্ডিশ জানিয়েছিল

“There`s a shadow on the bicycle and a shadow on the grass……..I can`t look her in the eye anymore. There is a shadow in her eyes”.

তবু শেষ অবধি তার বিশ্বাসে কন্যা আমালি সহ তাবৎ নারীই দুর্গতির অকুণ্ঠ বাহনই থেকে গেল। ভিন্ডিশের ইচ্ছায় তার কুমারী কন্যার শরীরের বিনিময়ে পশ্চীমে যাবার ছাড়পত্র যোগাড় হবার পরেও নারীর কাঁধ থেকে এককভাবে দুর্গতির দায়মুক্তি ঘটেনি।

ব্রিটিশ লেখক এবং সমালোচক পল বাইলে এই বইয়ের মুখবন্ধে যথার্থই লিখেছিলেন

“Nothing changes, because nothing is expected to change.”

দ্য ল্যান্ড অব গ্রীন প্লামস: পরাজিতের দিনলিপি

রোমানিয়ার ভেঙ্গে মড়মড় অর্থ এবং সমাজব্যবস্থা, বিপন্ন ব্যক্তিজীবন তো বটেই সিক্যুরিটাটের ক্রমাগত হুমকী, নজরদারীতে অসহ্য হয়ে একসময় আত্মাহুতির কথা ভেবেছিলেন হেরটা মুলার। যে জীবন তাকে যাপন করতে হচ্ছিল, ঠিকমত তাল মেলাতে পারছিলেন না তিনি তার সাথে। নিজেকে শেষ করে দেবার মাঝেই হয়ত মুক্তির অনুসন্ধান করতে যাচ্ছিলেন প্রায়। কিন্তু সিক্যুরিটাটের সদস্যরা যখন তাকে চুবিয়ে মারা, পিষে মারার হুমকী দিয়ে যাচ্ছিল বারবার তখন তিনি থমকালেন। ভাবলেন আরেকটু।

নিজেকে শেষ করে দেয়ার মাধ্যমে তিনি আসলে সেই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের কাজ এগিয়ে রাখতে নারাজ থাকারই সিদ্ধান্তে থাকলেন শেষ পর্যন্ত। রাষ্ট্র তো চাইছেই সকল বিদ্রোহী মরে যাক। রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ- পরোক্ষ যে কোন মদদে মরুক তারা। মুলার কেন আগ বাড়িয়ে তাদের এ কাজে সহায়তা করতে যাবেন?

মুলারের বেশ কিছু বন্ধুকে প্রাণ দিতে হয়েছিল কোন অপরাধ ছাড়াই। হয়ত তারা কোন ছবি তুলেছিল অথবা এমন কিছু লিখেছিল যা রাষ্ট্রের প্রকাণ্ড ভাবমূর্তির সাথে বেমানান। মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের। এদের ভেতর কোন কোন ভাগ্যহতের কাঁধে আত্মাহুতির দায় চাপানো হয়েছিল যদিও তারা স্রেফ সিক্যুরিটাটের ক্রোধের শিকারই ছিল। স্বৈরতন্ত্রের দিন তো একদিন শেষ হল, আবার ফিরে এসেছে যদিও নতুন রূপে কিন্তু সে মৃত মানুষগুলোর বেঘোরে হারানো প্রাণের দাম চুকানো সম্ভব না কখনো।

সেই বেদনাবিধুর স্মৃতিকে সাথে নিয়ে মুলারের দ্য ল্যান্ড অব গ্রীন প্লাম বইটি লেখা। অনুবাদ নাম এটি। ১৯৯৪ সালে যার জার্মান অরজিনাল “Herztier” লেখা হয়েছিল। লোলা নামের কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য একটি মেয়ের ডায়রিকে কেন্দ্র করে যে কিনা চশেস্কু এবং তার দলীয় অপশাসনের সাথে নিজেকে কোনভাবেই মানিয়ে নিতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। তার এই মৃত্যুই তাকে কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যপদ থেকে নিষ্কৃতি দিতে পেরেছিল।

দ্য ল্যান্ড অব গ্রীন প্লামসের কাহিনী বিবৃত হয়েছে একজন ন্যারেটরের মাধ্যমে। ন্যারেটরটি ছিল লোলার রুমমেট তেরেসা, যে বিশ্বাস করত না এটা আত্মহত্যা। ডায়রিটা সে খুঁজে পায় এবং তার তিন বন্ধু এডগার, গিওর্গ এবং কুর্ট কে জানায় সে কথা। বর্ণনায় সুতীব্রভাবে রোমানিয়ার ঈশ্বর হিসেবে নিজেকে জাহির করা চশেস্কু আমলের প্যারানয়া, সাইকোলজিক্যাল ট্রমা এবং সাধারণ মানুষের কুণ্ঠিত জীবনকে যেন চোখের সামনে দেখতে পাওয়া যায়। আরও দেখতে পাওয়া যায় একনায়কতন্ত্র থেকে প্রস্থানের পথ খুঁজে পাবার পরেও দুর্ভাগ্য যদি সঙ্গ না ছাড়ে তাহলে কাঙ্খিত জায়গাতেও অন্তীম পরিণতি মর্মান্তিকই হয়।

যদিও এই দেখতে পাওয়াটা পাঠকের জন্য অতটা সহজ হয়না দ্য ল্যান্ড অব গ্রীন প্লামসে। এর কারণ অবশ্যই হেরটা মুলারের সাধারণ গদ্যরীতির বাইরে দৃঢ়ভাবে অবস্থানের অনড় সিদ্ধান্ত। সচরাচর গল্প কিংবা উপন্যাস যে নির্মাণশৈলী অনুসরণ করে লেখা হয়ে থাকে মুলারের তার ধারে কাছে যেতে রাজী না হবার অদম্য ইচ্ছা।

তবুও ছোট ছোট বাক্যের গঠন এবং শব্দ নির্মাণের প্রতিটা ইট প্রচণ্ড ঈগল চোখে লক্ষ্য করার অভ্যাস থাকলে যোগাযোগটা ধীরে ধীরে বুঝতে পারা যায়। আরও অনুভব করতে পারা যায় চেপে রাখা দুঃসময়ের এক একটা ভারী পাথর।

এমন এক মর্মন্তুদ উপন্যাসের নামকরণও খানিক আঁকাবাঁকা পথে। চশেস্কুর অফিসারদের কাঁচা এবং কচকচে সবুজ বরই জাতীয় ফল দাঁতের নীচে পিষে ফেলার ক্রমাগত চিত্রায়ন পাওয়া যায় এখানে। সে চিত্রায়নে অসংকোচ লোভ মূর্ত হয়ে ওঠে, শোষণও। জার্মান ভাষায় Herz

অর্থ হৃদয়, আর Tier অর্থ পশু। অথচ এই দুয়ে মিলে যা হয় কিছুটা আত্মজীবনী কিছুটা রুপকার্থক বইটির অনুবাদক মিখায়েল হোফমান সেদিকে না গিয়ে “The land of green plums” হয়ত এ কারণেই সাব্যস্ত করলেন।

আজকের পর্ব শেষ করছি এই বইয়ের ভাল লাগা দুটো উদ্ধৃতির মাধ্যমে। আগামী পর্বে আলোচনা করব দ্য হাঙ্গার এঞ্জেল এবং গুলাগ নিয়ে।

“When we don’t speak, said Edgar, we become unbearable, and when we do, we make fools of ourselves.”

“At a time I used to think that in a world without guards people would walk differently from the way we do in our country. Where people are allowed to think and write differently, I thought, they will also walk differently.”

(চলবে………)

লেখকঃ সাহিত্যিক ও প্রবাসী বাংলাদেশী,জার্মানি

আগের পর্ব-দ্বৈত স্বত্বা ও ভঙ্গুর সময় সংক্রান্ত সত্যের নির্মাণ

আরও পড়ুন