Ads

তবু বলতে হয় “হ্যাপী ফাদার্স ডে”

এইচ বি রিতা

প্রতিবারের মত এবারো ক্লাসে ‘ ফাদার্স ডে ‘ শৈল্পিক কার্ডটি বানাতে গিয়ে হতাশ হতে হবে। নির্দেশনা-সহায়তার সময় হয়তো কেউ মুখ ভার করে বলে বসবে, “আই ডোন্ট হ্যাভ এ্য ডেড!”

ডাবল অস্কার বিজয়ী জোডি ফস্টার ও বাবা ছাড়াই বেড়ে উঠেছিলেন। তার জন্মের আগেই মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বাবার সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। বাবা দেখতে কেমন? তা তিনি কখনোই জানেননি। অথচ এই বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী নির্বিশেষে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং সফল হয়েছিলেন। বাবার অভাব তাঁর শৈশবকে আঘাত করেনি।তবে পিতা ছাড়া সব শিশুরাই যে জোডি ফস্টার হতে পারবেন, বিষয়টা এমন নয়।

প্রতি বছর ‘ফাদার্স ডে’তে আমরা ক্লাসে শিক্ষার্থীদের দ্বারা সুন্দর রঙ ও কারুকার্যে কার্ড বানাই। কার্ডের ভিতর থাকে কয়েক লাইনে বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাতে একটি চিঠি। অনেক শিক্ষার্থীদের বাবা থাকে না। অনেকের মাও থাকে না। কেউ গ্রেন্ডপেরেন্টসদের সাথে থাকে, কেউ ফস্টার কেয়ারে থাকে। তাদের বিষণ্ণ মনে বলতে শুনি, “আমার তো বাবা নেই। কার জন্য কার্ড বানানো?”

তখন তাদের ভাবনাগুলোকে ভিন্ন উপায়ে আমাদের সহজ করে তুলতে হয়। এ দেশের শিক্ষকতায় শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, নিজস্ব বহু কৌশল ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোভাব, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাই হয়তো আমাদের ‘হিউম্যান মাইন্ড এন্ড বিহেভিয়ার’ নিয়ে প্রচুর পড়তে হয়।

সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বাবাদের প্রতি ভালবাসা, সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশে বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশে জুনের তৃতীয় রবিবারটি পালন করা হয় ‘ফাদার্স ডে’ বা ‘বাবা দিবস’ হিসাবে।

মা দিবসের পরিপূরক হিসেবে বিশ শতকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পিতৃত্ব উদ্‌যাপনে ফাদার্স ডে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এর নেপথ্যে রয়েছে সোনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক মহিলার গল্প।

আরকানসাসে জন্মগ্রহণকারী সোনোরা ১৯১০ সালে ওয়াইএমসিএ-তে ওয়াশিংটনের স্পোকানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফাদার্স ডে। এই দিনটির প্রথম উদ্‌যাপন হয় ১৯১০ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে। ১৯১৩ সালে কংগ্রেসে ফাদার্স ডেকে জাতীয় স্বীকৃতি দেওয়ার একটি বিল প্রবর্তিত হয়। ১৯১৬ সালে রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ফাদার্স ডে উদ্‌যাপনে স্পোকানে গিয়ে একে অফিশিয়াল করতে চেয়েও ব্যর্থ হন। ১৯২৪ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্যালভিন কুলিজ জাতীয় পর্যায়ে ফাদার্স ডে পালনের পরামর্শ দেন। ১৯৫৭ সালে মেইন অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মার্গারেট চেজ স্মিথ তাঁর লিখিত প্রস্তাবে, কংগ্রেসের প্রতি মায়েদের সম্মান করতে গিয়ে ৪০ বছর ধরে বাবাদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ আনেন। ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন ডি জনসন জুনের তৃতীয় রোববারকে ফাদার্স ডের ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরও ছয় বছর পরে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের আইনি স্বাক্ষরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পিতৃদিবস উদ্‌যাপন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র।

এই দিনটি একটি বিশেষ দিন। সারা বছর নানান ব্যস্ততায় থেকে বছরের একটা দিনে বাবাদের প্রতি বিশেষ উপায়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাতে তৎপর হন প্রায় সব সন্তানেরাই। কিন্তু যাদের পিতা নেই, তাদের জন্য দিনটি নিশ্চয়ই সুখকর নয়। পথের পাশে ফুল বিক্রি করা শিশুটি যখন নিজ হাতে কোন এক সন্তানের কাছে তার বাবাকে দিতে ফুলটি বিক্রি করে, তখন তার নিশ্চয়ই নিজ পিতাকেও একটি ফুল দিতে মন কাঁদে।

যে বৃদ্ধ পিতার সন্তান থেকেও নেই, শরীরের ঘাম ঝরিয়ে রোদে পুড়ে যিনি পেটে ভাত জুটান, বিশেষ এই দিনটিতে কোন পিতা-পুত্রকে রিকশায় করে ভাল একটা রেস্টুরেন্টে টেনে নিতে নিশ্চয়ই তার শরীরের ঘামের সাথে, চোখের জলও মিশে যায়।

যে সব পিতারা তাদের সদ্য প্রস্ফূটিত সন্তানদের হারিয়েছেন, তাদের জন্য বাবা দিবস বুক ভার করা বেদনার। সারা বছর তারা সন্তান হারানোর শোকে থেকেও, বিশেষ এই দিনটিতে অন্য পিতাদের কাঁধে হাত রেখে সন্তানদের হাঁটতে দেখে, নিজের বুক চেপে ধরেন নিশ্চয়ই।

গত দের বছরে করোনা মহামারী সময়কালে হাজার পিতারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। যারা ছিল গত বছর আজকের এই দিনে, তারা আজ মাটি চাপা; কোথাও নেই।পিতাগুলোর বুকে কেমন ব্যথা হবে, জানা নেই।

ফরাসী ঔপন্যাসিক, স্মৃতিচারণকারী এবং সাংবাদিক জর্জ স্যান্ড বলেছিলেন, “জীবনে একটাই সুখ, ভালোবাসা এবং ভালবাসা পাওয়া।”
বেঁচে থাকলে ভালবাসা বিলানো যায়। চলে যাওয়া মানুষগুলো থেকে ভালবাসা পাওয়া কি যায়? অমীমাংসিত সমীকরণে সুখ দুলভ।

তবু বলতে হয় ‘হ্যাপী ফাদার্স ডে!’

লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, শিক্ষক ও সাংবাদিক

লেখকের প্রকাশিত আরও লেখা পড়ুন-

২০২১-২০২২ প্রস্তাবিত বাজেটে ভাতা বাড়েনি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের

আরও পড়ুন