Ads

যে মসজিদে ভোরের আলোয় ফুটে ওঠে রঙধনুর রঙ !

কামরুজ্জামান নাবিল

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে মুসলিমদের কিছু প্রার্থনাকক্ষ স্বতন্ত্র ও অসামান্য বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে নকশার সুবাদে। ইরানের শিরাজ শহরে অবস্থিত ‘নাসির আল-মূল্ক মসজিদ’ তেমনই। বাইরে থেকে এটি দেখতে প্রচলিত ইবাদতখানার মতো লাগলেও ভেতরটা অনেক আকর্ষণীয়।

ইরানের সবচেয়ে চমৎকার মসজিদগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। রোজ সকালে সূর্যের আলোয় চারপাশের দেয়াল, খিলান ও স্পিয়ারে রঙধনুর সব রঙ প্রতিফলিত হয়। চকচকে কারুকার্যময় রঙিন কাচ ব্যবহার করা হয়েছে জানালায়। মূলত এর মাধ্যমে সূর্যের আলো ঢুকে পুরো মসজিদের অভ্যন্তর প্রাণবন্ত রঙধনুর রঙে আলোকিত করে। অনেক রঙের সম্মিলনে মসজিদটি এককথায় মনোমুগ্ধকর।

নাসির আল-মূল্ক মসজিদ বিভিন্ন নামে পরিচিত। ‘পিঙ্ক মসজিদ’ তথা ‘গোলাপি মসজিদ’ হিসেবে এটি বিখ্যাত। কারণ অভ্যন্তরে গোলাপি রঙা টাইলস ব্যবহার হয়েছে বেশি। উপরিভাগে হাজারও অঙ্কিত টাইলস দেখা যায়।
এছাড়া রেইনবো মসজিদ ও ক্যালিডোস্কোপ মসজিদ নামে ডাকে অনেকে। এতে ফুটে থাকে বহুরূপ। এর মেঝেতে আছে ফার্সি গালিচা। মসজিদের সম্মুখভাগ লতাপাতা ও ফুলসহ বৈচিত্র্যময় অলঙ্করণে সাজানো। সামনের আঙিনায় আছে চতুর্ভুজ আকৃতির জলাশয়। এর চারপাশে ফুলের সমারোহ।

কাজার রাজবংশের অন্যতম প্রধান হাসান আলি নাসির আল-মূল্কের ইচ্ছায় মসজিদটি তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি নির্মাণে প্রায় ১২ বছর লেগেছে (১৮৭৬-১৮৮৮ সাল)। এতে আছে সাতটি কাঠের দরজা। এগুলোতে ইসলামি শিল্পকলার ছাপ স্পষ্ট। মসজিদের দেয়ালে পুষ্পশোভিত নকশা ও পশ্চিমা স্থাপত্যকলা মসজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ঊনিশ শতকে ইরানে পশ্চিমা প্রভাব ছিল ব্যাপক।

মসজিদটির নকশা করেছেন ইরানি স্থপতি মোহাম্মদ হাসান-এ-মেমার, মোহাম্মদ হোসেইনি শিরাজি ও মোহাম্মদ রেজা কাশি-সাজ-এ-শিরাজি। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ হাসান-এ-মেমার মসজিদটির আগে বিখ্যাত ইরাম গার্ডেন সাজিয়েছিলেন।

অপূর্ব কারুকাজ দেখতে মসজিদ প্রাঙ্গণে ইরানের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় থাকে সবসময়। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্রমণপিয়াসীরা এসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। খুব সকালে যখন সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে মসজিদে, তখনই তাদের সমাগম বেশি থাকে। আর তখন সবার মধ্যে থাকে ছবি তোলার চেষ্টা।

ইরান ভ্রমণে এলে গোলাপি মসজিদ ঘুরে না গেলে অপূর্ণতা থেকে যায়। ইস্পাহান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিষয়ে পড়তে এসে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। পড়াশোনার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইরানের এমন দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখি।

মহাকবি শেখ সাদী ও হাফিজের জন্মস্থান ফার্স প্রদেশের রাজধানী ইরানের শিরাজ শহরে অবস্থিত নাসির আল-মূল্ক মসজিদ। এখানেই আছে ফার্সি সাহিত্যের এই দুই কীর্তিমানের সমাধিসৌধ। মসজিদ ছাড়াও দেখে যেতে পারেন সেসব।

ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে বিমান, বাস অথবা ট্রেনে সহজেই শিরাজ শহরে আসতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। আমাদের ইস্পাহান শহর থেকে বাসযোগে পাঁচ ঘণ্টায় যাওয়া যায় গোলাপি মসজিদে।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আমিন আবেদিনি, দেভ ওয়াং এবং মুহাম্মাদ রেজা।

লেখকঃ শিক্ষার্থী,  ডক্টর অফ মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্পাহান, ইরান।

 

আরও পড়ুন