উন্নত বিশ্ব- তৃতীয় বিশ্ব কোন বিশ্বই নিরঙ্কুশভাবে শিশুবান্ধব না।ঘরের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকে নিপীড়ক। শিক্ষাঙ্গনে থাকে; হোক সেটা ধর্মীয় অথবা ধর্মহীন, রাস্তা- হাট বাজার- খেলার মাঠ… একটা কোন জায়গা দেখান তো দুশ্চিন্তার ঊর্ধ্বে?
যে কোন লিঙ্গ, যে কোন আর্থ- সামাজিক অবস্থানের শিশু বিপদসীমার মধ্যে আছে এই চরম দুর্বিষহ সত্যটি মেনে নিয়ে যে সকল সত্যিকারের অভিভাবকেরা(এখানে সত্যিকার শব্দটা এইজন্য যে আমাদের আবাসভূমি কখনো কখনো এতটাই ক্রূর হয়, অগুনতি ভাগ্যহীন শিশুদের শয়তান অভিভাবকেরাই থাকে মূল নিপীড়কের ভূমিকায়।)আলাভোলা চোখে দুনিয়া দেখেন না, সচেতন- সতর্ক থাকেন প্রত্যেকটা মুহুর্ত, সন্তানকে এখানে- ওখানে, এর- তার কাছে কায়মনোবাক্যে ছাড়ার ব্যপারে বুকের পাটা যাদের নাই;
তাদের চিলচক্ষু, কড়া হিসেব- নিকেশ, যাচাই- বাছাই, ভুল জায়গায় বুকের পাটাহীনতা, উৎকণ্ঠা- উদ্বিগ্নতাকে সেলাম।
জ্বি, আমি অভিভাবক সন্তানের স্বার্থে, সকল শিশুর সুস্থভাবে বাঁচার স্বার্থে আপনাদের সাথে একাত্ম হই। সন্তানের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমি দুঃসাহসী না। আমি নির্ভীক- নিঃসন্দেহ থাকতে পারিনা।
আইনের শাসন আছে এমন অঞ্চলেও শিশুরা অনিরাপদ। এ সমস্ত দেশের রাস্তাঘাটে পার্কে হাট বাজারে আনঅ্যাটেন্ডেড অবস্থায় বাচ্চা থাকে না তেমন। তবু মানসিক বিকারগ্রস্ততা ওঁত পেতে থাকে, জাল বিছিয়ে রাখে। ঘটে যায় হাড় হিম করে দেয়া এক একটা ভয়ঙ্কর অন্যায়।
আইন আর তার শাসনের ন্যাক্কারজনক অবস্থার ভেতরে কীভাবে সম্ভব এতটা নির্লিপ্ত থাকা, নির্বিকার বিশ্বাস করা, ছেড়ে দেয়া, অগ্রাহ্য করা, নগণ্য মনে করা?
যেহেতু বিশ্ব শিশুবান্ধব না, নিপীড়কের নজরে পড়লে যে কোন শিশু জীবিত- মৃত লাশে পরিণত হতে পারে যে কোন মুহূর্তে।
ক্ষত- বিক্ষত হয়ে বাঁচার- মরার, বছরের পর বছর অন্ধকার গুমোট কক্ষে বন্দী হয়ে থাকার, নিপীড়িত হতে হতে নিজেও একসময় নিপীড়ক হয়ে পড়ার অসংখ্য অসংখ্য উদাহরণ যেহেতু জগতে মহামারী; আমি চাই আমার চোখ এই অসুস্থ জগতের ব্যপারে সন্দেহবাতিক চিলের মত- শকুনের মতও হোক।
নিরাপত্তার মাঝখানে গুটিসুটি শুয়ে থাকা ছোট্ট শিশু তুলে নিয়ে যাওয়া নরখাদকেরও আবাসভূমি যখন এই পৃথিবী, করোটি থেঁতলে খুন করা গণধর্ষণের শিকার শিশুর নাম লিখে দুঃসহ সাইটে খুঁজতে থাকা নিকৃষ্ট ইন্দ্রিয়ের জীবেদের বিচরণক্ষেত্রও যখন একই পৃথিবী, এত উদার উদার চোখে সেই পৃথিবীটাকে দেখা সম্ভব হবে না দুঃখিত।
লেখকঃ জুম্মি নাহদিয়া, জার্মানী প্রবাসী