Ads

এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখি এই দুনিয়ায়!

।।  প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

বাংলাদেশে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা যেখানে শিক্ষার্থীরা একাধারে প্রফেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করবে, উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে, এবং গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভূমিকা রাখবে, দেশের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির কাঠামো, কার্যক্রম, এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হবে যাতে এটি বাংলাদেশকে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে স্থান দেয়। নিচে এর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:

 বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ধারণা:

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে একটি সম্পূর্ণ আবাসিক প্রতিষ্ঠান যেখানে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ফ্যাকাল্টি, কৃষি, মৎস্য, ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টি থাকবে, পাশাপাশি এগ্রোবিজনেস ও এন্টারপ্রেনিয়ার ডেভেলপমেন্ট ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করেই থেমে থাকবে না; বরং তারা চাষাবাদ, উৎপাদন, মার্কেটিং এবং গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা বাড়াবে এবং উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।

১. ফ্যাকাল্টি এবং বিভাগসমূহ:

১.১. মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ফ্যাকাল্টি:

এই বিভাগে থাকবে সর্বাধুনিক চিকিৎসা শিক্ষার ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল থাকবে যেখানে তারা রোগীদের চিকিৎসা দেবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা সুবিধাও থাকবে যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা মেডিক্যাল সায়েন্সে নতুন আবিষ্কার করতে পারে।

১.২. কৃষি ও মৎস্য ফ্যাকাল্টি:

এই বিভাগে কৃষি ও মৎস্য প্রযুক্তিতে বিশেষায়িত পড়াশোনা এবং গবেষণা করা হবে। এর সাথে থাকবে বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণের সুযোগ, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই চাষাবাদ, মাছ চাষ, পোল্ট্রি হেচারি, ফিড মিল পরিচালনা করবে। এই গবেষণা এবং উৎপাদন কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠবে।

১.৩. ভেটেরিনারি ফ্যাকাল্টি:

পশুস্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ তৈরির লক্ষ্যে এই বিভাগে থাকবে উন্নত পাঠ্যক্রম ও গবেষণা সুবিধা। ভেটেরিনারি বিজ্ঞানীরা শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করবে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন প্রযুক্তির প্রচলন ঘটাবে।

১.৪. এগ্রোবিজনেস ও এন্টারপ্রেনিয়ারশিপ ডেভেলপমেন্ট ফ্যাকাল্টি:

এই ফ্যাকাল্টি উদ্যোক্তা গড়ার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের সময়েই কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের ব্যবসায়িক দিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং তাদের নিজস্ব উদ্যোগ পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করবে।

আরও পড়ুন-

বাংলদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চাকর হওয়া শেখায়, কিন্তু কেন?

২. প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র:

২.১. চাষী ও উদ্যোক্তা ট্রেনিং সেন্টার:

কৃষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকবে যাতে তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং ব্যবসা উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারে। এই সেন্টারের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের তৈরি করা হবে যারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

২.২. গবেষণা এবং প্রোডাকশন সেন্টার:

শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করবে এবং সেগুলি বাজারজাত করবে। অরগানিক মাছ, সবজি, ফল, মুরগি, মাংস, দুধসহ বিভিন্ন মৎস্যজাত দ্রব্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হবে। এই সেন্টারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ভিত্তি হবে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণার পাশাপাশি প্রোডাকশন ও মার্কেটিং করবে।

৩. আবাসিক সুবিধা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার:

৩.১. ১০০% আবাসিক সুবিধা:

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে ১০০% আবাসিক সুবিধা, যাতে শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি একাডেমিক এবং গবেষণামূলক কাজে মনোযোগ দিতে পারে। প্রত্যেককে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হবে এবং নিজেদের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত হাসপাতাল থাকবে।

৩.২. আধুনিক হেলিপোর্ট এবং পরিবহন ব্যবস্থা:

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি হেলিপোর্ট থাকবে যাতে জরুরি সেবার ক্ষেত্রে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। এই ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের দ্রুততর গবেষণা কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সহায়ক হবে।

৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম:

৪.১. ১০০% আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম:

এই বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈশ্বিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ১০০% এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষণা ও উচ্চতর ডিগ্রির জন্য স্কলারশিপ পাবে এবং তাদের কাজের মাধ্যমে বিশ্বমানের বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে।

৪.২. বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক সংযোগ:

বিশ্ববিদ্যালয়টি পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে স্কলারশিপ এবং গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। এই সংযোগ শুধু গবেষণায় নয়, শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় বড় প্রফেসর এবং গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য এবং প্রভাব:

৫.১. শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী এবং প্রফেশনাল তৈরির লক্ষ্য:

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য হবে শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ও গবেষক তৈরি করা যারা জাতি এবং বিশ্বের সেবা করবে। শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করেই থেমে থাকবে না; বরং তারা প্রফেশনালিজম, উদ্যোক্তা দক্ষতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়ে নিজেকে উন্নত করবে।

৫.২. বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা:

শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণা ও উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ অবদান রাখবে। তারা নতুন ব্যবসা স্থাপন করবে, কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং প্রযুক্তির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে বাংলাদেশের একটি প্রতীকী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যা জাতি গঠনে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে, এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে সাহায্য করবে।

স্বপ্ন দেখতে তো সমস্যা নেই, আর আল্লাহ চাইলে এটা কোন ব্যাপারই না! মহান আল্লাহ এ দেশকে বিশ্ব দরবারে শিক্ষা, জ্ঞান- বিজ্ঞান ও আবিষ্কার দিয়ে তুলে ধরার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি ।  আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন