আজকাল আর পেপারে চোখ বুলাতে ভালোই লাগে না। সবকিছু ছাপিয়ে খবরটা আগে চোখে পরে। ৫ বছরের সন্তানকে আটকে রেখে মাকে ধর্ষণ। স্বামী,সন্তানকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ। স্কুলের সামনে যে বৃদ্ধ (৬০ বছর) লোকটা চটপটি বিক্রি করে তার দ্বারা ৭ বছরের মেয়ে শিশু ধর্ষণ। লেগুনা চালকের দ্বারা হাত বদলের মাধ্যমে দফায় দফায় ১৫ বছরের কিশোরী ধর্ষণ। ডেঙ্গু যেমন দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকে ধর্ষণের অবস্থানও কোন অংশে কম নয়। কোনটা নিয়ে মানুষ আজ কথা বলবে!
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ধনী গরিব নির্বিশেষে মানুষ মরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। যা আমরা চর্মচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। আর ধর্ষণের শিকার হয়ে শিশু,বালিকা,পূর্ণ বয়স্ক নারীরা মানসিক ভাবে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ডেঙ্গু ইস্যু অবশ্যই একটা বড় ইস্যু। কিন্তু বর্তমানে সবাই ডেঙ্গু নিয়ে কথা বলছে। আর চাপা পড়ে গেছে ধর্ষণ ইস্যু। এভাবেই ইস্যুর পর ইস্যু আসবে, আর একটাকে ছাপিয়ে অন্যটা মাথা তুলে দাঁড়াবে।
আজকে পত্রিকা পড়তে গিয়ে আমি যেন ধর্ষিতা অসহায় নারীদের করুণ আর্তি শুনতে পেলাম। ওরা যেন চিৎকার করে বলতে চাইছে,আমরা ভালো নেই। তোমরা আমাদের জন্য কিছু করো। ভুলে যেও না আমাদের। যে নারী তার ৫ বছরের সন্তানের সামনে ধর্ষিতা হলো, সে কি করে তার সন্তানকে মুখ দেখাচ্ছে! সেই খবর কি আমরা কেউ রাখছি? যে ছোট শিশুর লিঙ্গ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, সেই শিশুটি দেখছে তার চোখের সামনে কতগুলো অচেনা লোক তার মাকে উলঙ্গ করে কী সব করছে। শিশুটির ৫ বছর বয়স। সেকি তার মাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে এ ব্যাপারে? আর জিজ্ঞেস করলে মায়ের কাছে শিশুটির প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য কি কোনো উত্তর রেডি ছিলো? আমরা জানি না। খোঁজ নেইনি।
অথবা যে ৭ বছরের শিশুটিকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ লোকটি ধর্ষণ করলো,সে কি তার কাম বাসনা পূর্ণ করতে পেরেছে? যৌন সুখ পাওয়ার জন্য কি ঐ ছোট শিশুর যোনি তৈরী হয়ে গিয়েছিল? এটা আমরা সহজেই বলতে পারি, বৃদ্ধটি শারীরিকভাবে পরিপূর্ণ সুখ হয়তো পায়নি। কিন্তু তার বিকারগস্ত মন ঠিকই শান্তি পেয়েছে। আর শিশুটির কি অবস্থা! আমাদের মত সুস্থ মানুষের তো মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা শিশুটির মানসিক অবস্থা চিন্তা করে। আমরা বোধ হয় বলতেই পারি, ধর্ষক কেন শিশুটিকে মেরে ফেললো না। তাহলে তো তার সারাজীবন এই মানসিক কষ্ট বয়ে বেড়াতে হতো না।
আমরা ধর্ষকদের শাস্তি দিতে জানি না। যে মেয়েটি দফায় দফায় ধর্ষিত হলো। এবং সুযোগ পেয়ে জনগনের কাছে ধর্ষকের চেহারা চিনিয়ে দিলো। সেই চেহারা দেখেও আমাদের দেশের ভদ্র জনগণ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলো। এরাই সেই জনগণ যারা, একজন নিরপরাধ নারীকে গণপিটুনি দেয়, গণপিটুনি দেয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে আবার অনেকে ছবি তোলে, ভিডিও ধারণ করে। অর্থাৎ পুরুষ বান্ধব এই সমাজে নারীদের পক্ষে কথা বলা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তাহলে ধর্ষণ নিয়ে কেন কথা বলবে! কারণ ধর্ষন তো পুরুষরা করে। আর নারী ধর্ষিত হয়।
যাই হোক, সব দেখে শুনে মনে হয় এটা বোধ হয় এখনকার নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে। ধর্ষণটা গুটিকয়েক পুরুষ মানুষ আর নারীদের ছাড়া আর কাউকে নাড়া দেয় না। সেক্ষেত্রে যাদের নাড়া দেয়, তারা একত্রিত হয়ে ধর্ষণের পর বেঁচে যাওয়া( যাদের মেরে ফেলা হয়নি) শিশু,কিশোরী, পূর্ণ বয়স্ক নারীদের মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তা না হলে সমাজটা ভরে যাবে, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত নারীতে। যারা বেঁচে তো থাকবে, ছোট শিশুরা বড়ও হবে কিন্তু তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে না। একটা ঘোরের মধ্যে বড় হবে।
অনেক তো হলো ধর্ষকদের বিচার দাবী। লেখালেখি করে আমরা ধর্ষকদের মুখে মুখে অনেক শাস্তি দিয়েছি। চলতে থাকুক ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ। তবে তার সাথে ধর্ষিতা নারীদের কথা আমাদের অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না। সামাজিক ভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ তো করতেই হবে। এছাড়াও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরাও পারে এসব নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি পূর্ণ সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে।
লেখকঃ সালমা তালুকদার,
স্পেশাল এডুকেটর
প্রয়াস,যশোর অঞ্চল
যশোর সেনানিবাস