।। প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন।।
তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি সঠিক পদক্ষেপ নেয়, তবে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় দক্ষ হয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। নিচে নতুন প্রশাসনের দায়িত্বগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. গবেষণা উদ্যোগের জন্য পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন:
নতুন প্রশাসনের প্রথম দায়িত্ব হবে গবেষণা উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন করা। এতে গবেষণার প্রক্রিয়া, অর্থায়ন, এবং গবেষণার ফলাফল প্রকাশের বিষয়ে নীতিমালা থাকতে হবে। এছাড়াও, এই নীতিমালার মাধ্যমে গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা যেতে পারে।
২. প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গঠন:
গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, এবং অনলাইন রিসোর্স অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। গবেষণার ক্ষেত্রে উচ্চমানের সরঞ্জাম এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি। প্রশাসনকে এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং রিসোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. গবেষণা তহবিল এবং স্কলারশিপ প্রদান:
নতুন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ গবেষণার জন্য তহবিল এবং স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু করতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করবে। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করা এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে বণ্টন করা।
৪. ফ্যাকাল্টি মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু:
প্রশাসনের অধীনে শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে, যেখানে গবেষণার প্রতিটি ধাপে শিক্ষার্থীরা গাইডলাইন ও সহায়তা পাবে। মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম নিশ্চিত করবে যে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার জটিল বিষয়গুলোতে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সহায়তা পায়।
৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য নেটওয়ার্ক তৈরি:
নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব হবে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষকদের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে যৌথ গবেষণা প্রকল্প চালানো। এটি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেবে। পাশাপাশি, তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্কলারশিপের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।
আরও পড়ুন-
স্কলারশিপে উন্নত বিশ্বে গবেষণার ও উচ্চশিক্ষার জন্য IELTS পরীক্ষার প্রস্তুতি!
৬. গবেষণা কোর্স এবং প্রশিক্ষণ প্রদান:
গবেষণার গুরুত্ব বোঝাতে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে গবেষণা ভিত্তিক কোর্স এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। এতে গবেষণার মৌলিক ধারণা, প্রপোজাল লেখা, এবং তথ্য বিশ্লেষণ শেখানো হবে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণায় ব্যবহৃত সফটওয়্যার যেমন SPSS, MATLAB, Python ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
৭. গবেষণা ক্লাব এবং সোসাইটি প্রতিষ্ঠা:
প্রশাসনের অধীনে গবেষণা ক্লাব বা সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবে এবং পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করতে পারবে। এটি গবেষণার পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
৮. সফল গবেষকদের সাথে মতবিনিময় ও ওয়ার্কশপ আয়োজন:
প্রশাসন সফল গবেষক এবং আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রাপ্তদের নিয়ে নিয়মিত মতবিনিময় সভা, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে প্রেরণা পাবে এবং গবেষণায় সফল হওয়ার কৌশল শিখতে পারবে।
৯. ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ:
গবেষণার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীদের ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কোর্স এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা গবেষণাপত্র লিখতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।
১০. গবেষণার ফলাফল প্রকাশ এবং প্রচার:
প্রশাসনের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নাল বা অনলাইন পোর্টাল হতে পারে এই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করতে পারবে। এটি তাদের জন্য বড় একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিতি লাভে সহায়ক হবে।
এই সব দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে পারে এবং তাদেরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন