।। মোহাম্মদ ওমর ফয়সল, পিএইচ.ডি ।।
এক. প্রফেশনালিজম কেন?
“আমার জীবন হচ্ছে এমন একটি ঘরের মতো, যার দুটো দরজা আছে। আমি তার একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করে আরেকটি দরজা দিয়ে বের হয়েছি”।
কথাটি বলেছেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। সহস্রাধিক বছর বেঁচে থাকা একজন মহাপুরুষের বেলায় দুনিয়াটা যদি এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে আরেক দরজা দিয়ে বের হওয়ার মতো হয়- তাহলে আমাদের বেলায়…? তাই, এখানে কাজগুলো করতে হবে পরিপূর্ণ পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে।
দুই. প্রফেশনালিজম কী?
প্রিন্সিপলস, স্ট্যান্ডার্ডস ও এথিক্স – এই তিনটি অনুষঙ্গ যথাযথভাবে পরিপালন করে কোনো কাজ/পেশা সম্পন্ন করার নামই প্রফেশনালিজম। কোন কেতাবী সংজ্ঞায় না গিয়ে বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করলে কেমন হয় (?) যেমন, একজন ডাক্তারের চেম্বারে একজন রোগী এলেন। অথচ রোগীটির ডাক্তারের চরম শত্রু। এমতাবস্থায় ডা. সাহেব যদি পূর্বশত্রুতা অগ্রাহ্য করে প্রিন্সিপলস, স্ট্যান্ডার্ডস ও এথিক্সের আলোকে সেবা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটাই হবে ডাক্তারের পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজম।
তিন. প্রফেশনালিজমের প্রথম সবক
প্রফেশনালিজম বা পেশাদারিত্বের প্রথম সবক আসে মায়ের কাছ থেকে। আপনাদের যাদের মা জীবিত ও সুস্থ আছেন তারা দেখবেন, মায়েরা কত নিখুঁতভাবে কাজগুলো করেন। আপন মানুষগুলোর জন্য নিঃস্বার্থভাবে, সর্বোত্তম উপায়ে, প্রত্যেকের রুচি ও পছন্দের সাথে সামঞ্জস্য রেখে – যে কর্মযজ্ঞের আঞ্জাম দেন তাতেই তাঁদের পেশাদারিত্ব বা প্রফেশনালিজম লক্ষণীয়।
আমার মা বলতেন, ‘যখন যেটা করবে সেটার কায়দা-কানুন, নিয়ম-পদ্ধতি, নীতি-কৌশল ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ইলিম হাসিল করেই কাজটি করার নিয়ত করবে’। কাজটি সম্পর্কে ইলিম হাসিল না হলে সেই কাজ/বিষয়টি শুরু করা আদৌ সমীচীন নয়। যাকে আমরা প্রিন্সিপালস বলতে পারি।”আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না..। (আল-কুরআন ১৭:৩৬)
সুতরাং, কায়দা-কানুন না শিখে কোন কাজ হুট করে শুরু করে দে’য়া নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজ করতে হবে সর্বোচ্চ মানের করে। হাইস্ট লেভেল অব পারফেকশন -এ গিয়ে। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী। সর্বক্ষেত্রে এথিক্স/নৈতিকতার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রিন্সিপালস ও স্ট্যান্ডার্ডস পরিপালন করার পর যদি নৈতিকতার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয় তাহলে তাতে প্রফেশনালিজম রক্ষা হবে না। যেমন, সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অভিজ্ঞ ডাক্তার যদি অপ্রয়োজনীয় ঔষধ/টেস্ট লিখে থাকেন- তাহলে সেটা হবে তার পেশার প্রতি চরম অবমাননা,অসম্মান, তাচ্ছিল্য।
পেশাদারিত্বের আরেকটি অনুষঙ্গ হচ্ছে ‘নিজের প্রতি সৎ থাকা’। কেউ দেখছে কি দেখছে না সেটা বিবেচ্য নয়। অন্যকে ফাঁকি দেওয়া মানে আখেরে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া। নিচের গল্পটির মাধ্যমে আইস বেকিং সেশন শেষ করতে চাই। কমেন্টে পেশাদারিত্ব সম্পর্কে আপনাদের মতামত আশা করছি..
চার: গল্পটি কাল্পনিক এবং সুপরিচিত..
একবার এক রাজা তাঁর তিন মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘এই নাও তোমাদের একটা করে খালি বস্তা দিলাম’। তোমরা বাগানে গিয়ে বিভিন্ন ফল কুড়িয়ে বস্তা ভরে নিয়ে আসবে। দেখি কে রাজার নিকট তাড়াতাড়ি বস্তা পূর্ণ করে নিয়ে আসতে পারে। তিন জন চলে গেল বাগানে।
১ম মন্ত্রী চিন্তা করলো, রাজা বলেছেন তাই বাগানের উৎকৃষ্ট ফলগুলো দিয়েই বস্তা পূর্ণ করি এবং সেই মত বস্তা ভরে ফিরে আসল।
২য় মন্ত্রী চিন্তা করলো, রাজা তো সব ফল দেখবেন না। তাই হাবিজাবি পঁচা ফল দিয়ে সে নীচের দিকে পূর্ণ করে। আর উপরের দিকে কিছু ভালো ফল দিয়ে বস্তা পূর্ণ করে ফিরে আসল।
৩য় মন্ত্রী চিন্তা করলো, রাজার এতো সময় কোথায়-বস্তা খুলে খুলে দেখার। রাজা মশাই শুধু দেখবেন বস্তা পূর্ণ হয়েছে কিনা (?)। এই চিন্তা থেকে তৃতীয় মন্ত্রী মরা পাতা, ঘাস, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে বস্তা পূর্ণ করে নিয়ে এলো ।
যথারীতি তিন মন্ত্রী রাজার দরবারে হাজির হলো। রাজা সবার বস্তা পরিপূর্ণ দেখে খুশী হলেন। ধন্যবাদ জানালেন। তিনি বস্তাগুলো খুলেও দেখলেন না। ৩য় মন্ত্রী নিজের বুদ্ধির কথা চিন্তা করে নিজেকে বেশ বুদ্ধিমান মনে করতে লাগলেন।
কিন্তু ফল হলে উল্টাটা। রাজা একটু পরে রাজ সিংহাসনে বসলেন এবং ঘোষণা করলেন, ‘এই তিন মন্ত্রীকে তাদের বস্তাসহ ৭ দিনের জন্য কারাগারে পাঠাও এবং প্রত্যেককে তিনটা আলাদা আলাদা কক্ষে রাখো। এই সাত দিন তাদেরকে কোন প্রকার খাবার দিবে না।
যেই কথা সেই কাজ। তিনজনকেই কারাগারে পাঠানো হলো। ১ম মন্ত্রী এই সাত দিন তার বস্তার ফল গুলো খেয়ে কাটিয়ে দিলেন।
দ্বিতীয় মন্ত্রী তার যত ভালো ফল ছিল ২ দিন খেতে পারলো। বাকী দিন পচা ফল খেয়ে কাটানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
৩য় মন্ত্রীর বস্তায় কোন ফল ছিল না, তাই তিনি না খেতে পেরে কারাগারেই মারা গেলেন ।
এই গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় হলো:
যদি আমরা ফাঁকি না দিয়ে নিজের পেশায় সৎ হই। সঠিকভাবে শিখি। পরিশ্রম করি। সুষ্ঠুভাবে কাজগুলো আঞ্জাম দিই। তাহলে ভবিষ্যতে সুফল ভোগ করতে পারবো।
লেখকঃ হেড অব শরিয়াহ কমপ্লাইয়েন্স, ব্যাংক এশিয়া পিএলসি এবং কী নোট স্পিকার, লার্ন মোর বাংলাদেশ
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে । আসুন ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।