Ads

বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিতে ভিসির পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত?

।। প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে, ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন, গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন, এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে নির্দিষ্ট কিছু প্ল্যান বা পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নিচে এসব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন:

®  ক্যাম্পাস পরিবেশ ও সুবিধা বৃদ্ধি:

✪ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মানসম্পন্ন আবাসন, ক্যাফেটেরিয়া, এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা প্রদান।

✪ ছাত্রদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থন ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান।

✪ ক্যাম্পাসে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা।

® শিক্ষার মানোন্নয়ন:

✪ আধুনিক পাঠ্যক্রম ও প্রযুক্তির সংযোজন:

ক্লাসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, অনলাইন রিসোর্স ও শিক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়ন।

✪ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত উন্নতি: ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমানো যাতে শিক্ষকরা প্রতিটি ছাত্রের জন্য বেশি সময় দিতে পারেন।

✪ শিক্ষার পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন:

নতুন নতুন শিক্ষার পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা যা ছাত্রদের কার্যকরী দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হবে।

® কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন:

✪ ইন্ডাস্ট্রি কানেক্টিভিটি:

ইন্ডাস্ট্রির সাথে কানেক্টিভিটি বাড়ানো যাতে ছাত্ররা পড়াশোনার সাথে সাথে হাতে কলমে কাজ শেখার সুযোগ পায়।

✪ ইন্টার্নশিপ ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণ:

প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ এবং কর্মমুখী প্রশিক্ষণ চালু করা।

✪ উদ্যোক্তা দক্ষতা বিকাশ:

উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য ইনকিউবেশন সেন্টার এবং স্টার্টআপ সাপোর্ট প্রোগ্রাম চালু করা।

আরও পড়ুন-

বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে কোয়ালিটি নিশ্চিত করা জরুরি

২. গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়ন:

® গবেষণার প্রমোট ও সমর্থন:

✪ গবেষণার তহবিল ও সুযোগ বৃদ্ধি: গবেষকদের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং সুযোগ তৈরি করা যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন।

✪ গবেষণার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব: দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠানের সাথে গবেষণার জন্য সহযোগিতা করা এবং যৌথ উদ্যোগ নেওয়া।

✪ সামাজিক সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গবেষণা:

গবেষণার মাধ্যমে সমাজের বাস্তব সমস্যার সমাধান করা এবং গবেষণার ফলাফল সমাজে বাস্তবায়ন করা।

® গবেষণার ফলাফলের প্রয়োগ:

✪ ইনোভেশন ও পেটেন্ট:

গবেষণার ফলাফল থেকে নতুন উদ্ভাবন তৈরি এবং সেগুলির জন্য পেটেন্ট অর্জন করা।

✪ পলিসি নির্ধারণে সহায়তা:

গবেষণার ফলাফল সরকারি পলিসি নির্ধারণে এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে প্রয়োগ করা।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন:

® অবকাঠামো উন্নয়ন:

✪ নতুন ভবন, ল্যাব, ও অন্যান্য ফ্যাসিলিটি নির্মাণ:

আধুনিক শিক্ষার উপযোগী নতুন ভবন, ল্যাব এবং অন্যান্য সুবিধা তৈরি করা।

✪ ক্যাম্পাসের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন: ক্যাম্পাসের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য সবুজায়ন, পুনঃচক্রায়ন, এবং সৌর শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা।

® আন্তর্জাতিকীকরণ:

✪ বিদেশি শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের আকর্ষণ:

বিদেশি শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপকদের আকর্ষণ করে ক্যাম্পাসের বৈচিত্র্য বাড়ানো।

✪ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতা:

অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, যৌথ ডিগ্রি প্রোগ্রাম, এবং গবেষণা সহযোগিতা গড়ে তোলা।

® ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়ন:

✪ ডিজিটাল ক্যাম্পাস:

সব ধরনের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজকর্ম ডিজিটালাইজ করা।

✪ ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম:

অনলাইন কোর্স, মডিউল, এবং পাঠ্যক্রম তৈরি ও সরবরাহ করা।

আরও পড়ুন-

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে

৪. অন্যান্য বিষয়:

® সামাজিক দায়বদ্ধতা:

✪ কমিউনিটি সার্ভিস ও এনগেজমেন্ট: বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের জন্য আরও কার্যকর করে তোলার উদ্দেশ্যে কমিউনিটি সার্ভিস প্রোগ্রাম চালু করা।

✪ সামাজিক সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা বাড়ানো:

ছাত্রদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া।

® পাবলিক রিলেশন ও ব্র্যান্ডিং:

✪ ইউনিভার্সিটির ইমেজ উন্নয়ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক রিলেশন স্ট্রাটেজি উন্নয়ন এবং একাডেমিক অর্জন, গবেষণা, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচার করা।

✪ অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক:

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রচেষ্টা বাড়ানো।

ভাইস-চ্যান্সেলরের এইসব প্ল্যানগুলি বাস্তবায়নের জন্য একটি সুসংগঠিত এবং সহযোগিতাপূর্ণ দল থাকা প্রয়োজন। পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা ও সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ,গবেষক এবং অধ্যাপকফিশারীজ বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি  । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন