Ads

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বিনষ্ট করা মারাত্মক ক্ষতি ও অপরাধ

।।  প্রফেসর  ড. মোহা: ইয়ামিন হোসেন ।।

ছোট ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ, হল বা দলের মধ্যে মারামারি: শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বিনষ্টের মারাত্মক ক্ষতি ও অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু ছোটখাটো ইস্যুতে বিভাগের মধ্যে, হলের মধ্যে বা দলের মধ্যে সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এটি কেবল শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরনের ঘটনা সামগ্রিকভাবে সমাজ ও জাতির জন্যও একটি বড় ক্ষতি এবং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

মারামারির কারণ:

বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ বা মারামারির মূল কারণগুলো সাধারণত ছোট এবং তুচ্ছ হলেও সেগুলো বড় আকার ধারণ করে। নিচে এর কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা হলো:

১. ব্যক্তিগত বিরোধ:

⊕ একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীর তুচ্ছ বিষয়ে বিরোধ বা ভুল বোঝাবুঝি।

উদাহরণ: ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়ে কথা কাটাকাটি।

২. হল দখলের রাজনীতি:

হলে আবাসন নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে মতবিরোধ বা দলীয় প্রভাব বিস্তার।

৩. দলীয় রাজনীতি:

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।

৪. খেলার মাঠ বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:

ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্য প্রতিযোগিতায় ঝগড়া।

উদাহরণ: আন্তঃবিভাগীয় খেলার সময় রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ।

৫. মিথ্যা গুজব:

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য বা গুজব।

প্রভাব ও ক্ষতি:

এই ধরনের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির ধরণ অনেক বিস্তৃত।

ক. শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ বিনষ্ট:

⊕ শ্রেণিকক্ষ এবং গবেষণাগারে নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

⊕ শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যা তাদের পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়।

খ. শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি:

⊕ মারামারির ফলে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা শারীরিকভাবে আহত হন।

⊕ মানসিক চাপ ও ভীতির কারণে ছাত্রছাত্রীরা সৃজনশীলতা হারায়।

আরও পড়ুন-

বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মানসম্মত সঠিক ইসলামিক শিক্ষা সিলেবাস প্রনয়নের গুরুত্ব

গ. প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট:

⊕ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।

⊕ বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যায় এবং প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিছিয়ে পড়ে।

ঘ. অর্থনৈতিক ক্ষতি:

সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট হয়।

উদাহরণ: আসবাবপত্র, ল্যাব সরঞ্জাম, বা গ্রন্থাগারের বই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

ঙ. ভবিষ্যতের নেতিবাচক প্রভাব:

শিক্ষার্থীরা সহিংসতার সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ভবিষ্যতে সমাজে একই আচরণ প্রদর্শন করে।

এই সমস্যার সামাজিক ও নৈতিক মূল্যায়ন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনাগুলো কেবল আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ নয়, এটি নৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গভীরভাবে নিন্দনীয়। এই ধরনের ঘটনা একটি শিক্ষিত প্রজন্মের মধ্যে দায়িত্বহীনতা, অসহিষ্ণুতা এবং নৈতিকতার অভাবকে প্রকাশ করে। এটি সামগ্রিক সমাজের ওপর একটি নেতিবাচক বার্তা প্রেরণ করে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির বাধা হিসেবে দাঁড়ায়।

সমাধান ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

এই ধরনের সংঘর্ষ রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

ক. শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষাদান:

বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে মূল্যবোধ ও সহনশীলতা নিয়ে কর্মশালা এবং সেমিনারের আয়োজন।

খ. প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা:

সংঘর্ষে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।উদাহরণ: হল বা বিভাগ থেকে বহিষ্কার।

গ. সংঘর্ষ প্রতিরোধ কমিটি গঠন:

ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন, যারা সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা করবে।

ঘ. পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

⊕ ক্যাম্পাসে সিসিটিভি এবং নিরাপত্তা কর্মী বৃদ্ধি।

⊕ কোনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই ব্যবস্থা গ্রহণ।

ঙ. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি:

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

চ. দলীয় রাজনীতি বন্ধ:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর জন্য নীতিমালা তৈরি।

উপসংহার:

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট ইস্যু নিয়ে মারামারি একটি মারাত্মক অপরাধ যা শিক্ষা এবং গবেষণার পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে। এটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই প্রশাসন, শিক্ষক, এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করেই আমরা একটি সুশৃঙ্খল, নৈতিক এবং শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারি।

লেখকঃ প্রফেসর ড মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন, প্রাবন্ধিক, গবেষক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে  লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ  লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি  । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন

আরও পড়ুন