।। শেফালী খাতুন ।।
বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা ও কাজের ধরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ শিক্ষকের ভূমিকা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠন এবং দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, শিক্ষকদের যোগ্যতা এবং কাজের ধরণ নিয়ে কিছু বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হলো:
⊕ শিক্ষকের যোগ্যতা:
বাংলাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য শিক্ষকদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিম্নলিখিত দিকগুলোতে মনোযোগ দেয়া উচিত:
১.শিক্ষাগত যোগ্যতা:
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি ও স্নাকোত্তর ডিগ্রি থাকা প্রয়োজন। বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষককে তার পঠিত বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি শিক্ষাদানে দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, **B.Ed (Bachelor of Education)** M. Ed ( Masters of Education ) ডিগ্রি ধারী শিক্ষক শিক্ষাদানে দক্ষ হতে পারে।
২.বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা:
শিক্ষককে তার নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অধিকতর পরিপূর্ণ এবং সঠিক ধারণা পেতে সক্ষম হবে। এতে শিক্ষার্থীরা মান সম্পন্ন শিক্ষা পাবে।
৩.প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন:
শিক্ষকের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন কোর্সে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। শিক্ষকরা তাদের জ্ঞানের পাশাপাশি নতুন শিক্ষাদান কৌশল শিখে শিক্ষার্থীদের আরও ভালোভাবে শিক্ষা দিতে সক্ষম হবেন।
৪.যোগাযোগ দক্ষতা:
একজন শিক্ষকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলির মধ্যে একটি হলো সঠিকভাবে এবং সহজ ভাষায় শিক্ষার্থীদের কাছে জ্ঞানের আদান-প্রদান করা। শিক্ষকের যোগাযোগ দক্ষতা যত উন্নত হবে, শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়াও তত সহজ হবে।
৫.ধৈর্য ও মনোযোগ:
শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি ধৈর্যশীল ও মনোযোগী হতে হবে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের শিখনশক্তি থাকতে পারে, যা সামাল দেয়া শিক্ষকদের দায়িত্ব।
আরও পড়ুন-
শিক্ষকের কাজের ধরণ:
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষকদের কাজের ধরণ নিম্নরূপ হতে পারে:
১.পাঠদান:
প্রধান কাজ হলো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা। কিন্তু এটি শুধু বই বা পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিক্ষা সীমাবদ্ধ না রেখে ব্যবহারিক শিক্ষা ও সমস্যাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২.পরীক্ষা ও মূল্যায়ন:
শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা শিক্ষকদের অন্যতম দায়িত্ব। সঠিকভাবে পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা শনাক্ত করে তাদের আরও উন্নত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা উচিত।
৩.পরামর্শ ও নির্দেশনা:
শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা, তাদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বা বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধানে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন।
৪.শিক্ষার্থীদের আচরণ উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো শিক্ষকদের আরেকটি বড় দায়িত্ব। তারা কেবল শিক্ষাদানের জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনে ও মানসিক বিকাশে কাজ করেন।
৫.সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ:
শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে উৎসাহিত করতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম যেমন বিতর্ক, নাটক, কুইজ, বিজ্ঞান মেলা ইত্যাদিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন-
৬.নেতৃত্ব ও পরিচালনা:
শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের নেতৃত্ব প্রদান এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষকদের নেতৃত্বগুণ থাকা প্রয়োজন, যা শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।
৭. সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষাদান:
শিক্ষকদের সমাজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য সামাজিক এবং নৈতিক শিক্ষাদানেও দক্ষতা থাকা উচিত। তারা শিক্ষার্থীদের সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। উপসংহার:
বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা এবং কাজের ধরণ এমন হতে হবে, যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং শিক্ষাগত উন্নয়নে সহায়ক হয়। তাদের উচিত শুধু বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানদান নয়, বরং নৈতিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে তোলা।
লেখকঃ শিক্ষক ও উদ্যোক্তা
…………………………………………………………………………………………………………………………
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল, আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ গল্প ও কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেইজ মহীয়সী/Mohioshi-তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হ্যাঁ, মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইল-
[email protected] ও [email protected] -এ; মনে রাখবেন, “ধন দৌলত খরচ করলে কমে যায়, কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়”। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনি জ্ঞান দান করেন।” (সহিহ বুখারী- ৭১, ৩১১৬, ৩৬৪১, ৭৩১২, ৭৪৬০; মুসলিম- ১০৩৭; ইবনে মাজাহ- ২২১) ।
মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম; আজই আপনি যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে। আসুন, ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ, সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি। আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমীন।