Ads

এই জন্যই কি জীবন দিয়েছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ?

আই পি সজীব

“কতকাল থাকবো চুপ করে,
ধ্বংস হচ্ছে দেশ ধীরে ধীরে।
যদি আজও আমরা না জাগি,
বদলাবে কে এই সমাজটারে ? “

মোটিভেশনাল স্পিচ বা অনুপ্রেরণার বক্তৃতা বলতে আমার কাছে সুলায়মান সুখন আয়মান সাদিকের বক্তৃতা নয়।
আমার কাছে মোটিভেশনাল স্পিচ হচ্ছে,কিছু গান, কিছু সিনেমা আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এই ভাষণটা যতবার শুনি শরীরের প্রতিটি রক্ত কনা টগবগ করে উঠে।

থ্রি ইডিয়ট,অনেকের কাছে শুধু একটা সিনেমা হলেও এটা কিন্তু একজন ব্যক্তির বাস্তব জীবন চরিএ। ভারতে এমন চরিএের একজন নীরবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

যেসকল গানগুলি আমার মোটিভেশনাল স্পিচ,
“সবকটা জানালা খুলে দাওনা,
ওরা আসবে চুপিচুপি।
যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে।
দিয়ে গেছে প্রা! “

আদৌতে যদি তারা মহাভারতের উপাখ্যানের মতো যুদ্ধের সময়কার অস্ত্র সহ সেই রুপে উঠে আসে!আজকের রাজনীতিবিদ একটাকেও গুলি না করে ছাড়বেনা।চিন্তা করে দেখুন,তারা কতটা আবেগ কতটা ভালোবাসায় নিজের জীবন মরন তুচ্ছ করে দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। অথচ আজ আমরা দুর্নীতি আর লুটতরাজ মানি লন্ডারিং করে দেশটাকে ফকির করে ছাড়ছি।

এই জন্যই কি তারা জীবন দিয়েছিলেন ?

স্বাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনঃ এই দেশ কোনো মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বাঙালি অবাঙালী কারোরই নয়।এই দেশকে যে ভালোবাসবে, এই দেশটা তার। “আজকের রাজনীতিবিদরা কি দেশকে ভালোবাসেন?কি মনে হয় আপনাদের?

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস,এই দেশটা যখন স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত। তখন দেশের উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পাকিস্তানিরা সকল বুদ্ধিজীবী মেরে ফেলেছিলেন এই দিনে।বুদ্ধিজীবী শূন্যতার ভয়াবহ পরিনাম ভোগ করেছিলেন শেখ সাহেব।যোগ্য জনের শূন্যতায় অযোগ্যদের কর্মকান্ডেরই ফল ১৯৭৫।
স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়া আর তা রক্ষা করার প্রক্রিয়া এক নয়। বরং অর্জনের চাইতে রক্ষা করাটা কঠিন। যতটা কঠিন হয়ে তিনি দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়েছেন। ততটাই কোমল হয়ে আপন করে নিয়েছিলেন, নিজ দেশ ও দেশের মানুষকে।উনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে এরকম আগাম তথ্য তিনি বিশ্বাসই করেন নি। কতটা বিশ্বাস ছিলো উনার, আমাদের উপর!

“চাইলেই ম্যানুয়েল নরিয়েগা হওয়া যায়, বঙ্গবন্ধু নয় ”

“বোকা বন্ধুর চাইতে যে বুদ্ধিমান শত্রু ও ভালো ”

সেই প্রাবাদের দেখাই তিনি পেলেন। উনার দূরদর্শী চিন্তাধারা বুঝতে পারার মতো বিচক্ষণ লোকজন সেই সময়ে ছিলো না। ফলাফল, কিছু বোকার বোকামি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা!
নয়তো আজ দেশটা এখানে থাকতো না, আরো অনেক এগিয়ে থাকতে পারতাম আমরা।
বড় মাছ ধরতে গেলে, চোখের সামনের ছোট মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধু সম্ভবত এই বোধে ছিলেন। কিন্তু উনার বুদ্ধিজীবী শূন্য বিরামভূমিতে বসবাসরত আহাম্মকদের এই বোধ ছিলো না।

যদি পাকিস্তানিরা আজকের দিনে সকল বুদ্ধিজীবীদের মেরে না ফেলতো। তাহলে স্বাধীন বাংলার সরকার এবং বাংলার ইতিহাস অন্যরকম হতো।

সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সাথে কেমন আচরন করবে, সেই বিষয়ের সুন্দর এক নির্দেশনাও শেখ সাহেব দিয়েছিলেন।

ভাবা যায়, একটা মানুষ তার দেশ ও দেশের মানুষকে কতটা ভালোবাসতেন? আজ যদি গানের মতো ” ওরা আসবে চুপিচুপি তে ” বঙ্গবন্ধু ফিরে আসতে পারতেন। তবে প্রত্যেকটির ক্রসফায়ার নিশ্চিত ছিলো। প্রত্যক্ষভাবে আসতে না পারলেও পরোক্ষ বঙ্গবন্ধু হয়তো থুথু ছিটাচ্ছেন দিনরাত এদের উপরে।

পাকিস্তানিরা আমাদের শত্রু ছিলো, আমাদের ক্ষতি করে গেছে। তা সহ্য করা যায়। একসময় ব্রিটিশরা আমাদের শোষণ করে গেছে তাও সহ্য করা যায়। অথচ আজকের দিনে, আমাদের ভীতরেই কেউ আমাদের শোষণ করছে! এটা কি সহ্য করার মতো ?

বাংলাদেশ মূলত এখনো প্রকৃতি নির্ভর দেশ।প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরন্ত হয় না। নাইরুর ফসফেট এখন আর নেই। পড়ে আছে সৈকতে ফসফেট উওোলনের বিশাল জং ধরা ক্রেন। যদি আমাদের নেতারা এভাবেই দেশে লুটতরাজ করতে থাকে। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ নাইরুর মতোই। নাইরু এমন এক দেশ। যে দেশকে বলা হতো দ্বিতীয় কুয়েত। কুয়েতের পরেই জিডিপি ছিলো তাদের। অথচ আজ তাদের বাসস্থান দূরে থাকুক খাবারও নেই।

নাইরুর এই জং ধরা ক্রেন তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখে আঙ্গুল দিয়ে যেমন দেখিয়ে দিবে তাদের পূর্বপুরুষরা কতটা অবিবেচক ছিলো।তেমনি, দেশের বিভিন্ন যায়গায় পড়ে থাকা জং ধরা পাটকলও আমাদের তাই দেখিয়ে দেয়। আদমজী জুট মেইল আজো চিৎকার করে সেই ইতিহাসই বলতে চাচ্ছে।
পরিশ্রম করে কিছু উপার্জন না করে জনগনের অর্থ আত্মসাৎ আজ আমাদের নেতাদের ফ্যাশন।তাইতো,ডাক্তারের সন্তান ইঞ্জিনিয়ার পাবেন।ইঞ্জিনিয়ারের সন্তান ডাক্তার পাবেন।নেতাদের সন্তানদের কিন্তু অন্য কোথাও পাবেন না। নেতাদের সন্তানরা শুধু নেতাই হয়। যেনো অঘোষিত এক রাজতন্ত্র। অথচ এই পদ্ধতিতেই শি জিনপিং আজকের চীনকে টেনে তুলেছেন।

তবুও স্বপ্ন দেখি,এক সোনার বাংলার। আজ আমরা নতুন প্রজন্মের যারা আছি। আমরা আমাদের রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করি। যেভাবে মীরজাফর বাংলায় অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ এক নাম। লেন্দুপ সিকিমে অভিশপ্ত একটি নাম। ইতিহাসের বিজয়ী নায়ক লর্ড ক্লাইভের সমাধী বা মীরজাফরের কবর কোথায় কেউ জানে না। কিন্তু পরাজিত সিরাজের জন্য, আজো আমাদের হৃদয় ভরা দোয়া আছে এবং থাকবে। আমাদের রাজনীতিবিদরা এই তথ্যগুলো জানেন ?

প্রতিজন শহীদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। ভালো থাকুন আপনারা ওই পাড়ে। আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাদের জীবন দিয়ে কেনা স্বাধীনতার মান আমরা ধরে রাখতে পারিনি !” ভেবোনাগো মা তোমার ছেলেরা,হারিয়ে গিয়েছে পথে। ”

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

Ip Sojib এর ওয়াল থেকে

আরও পড়ুন